বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

কাইয়ুম আব্দুল্লাহ

লণ্ডনের বৈশাখী মেলা : কেন যে আর আগ্রহ জাগায় না



কাইয়ুম আব্দুল্লাহ

পহেলা জুলাই প্রতিবছরের ন্যায় উদযাপিত হলো লন্ডনের বৈশাখী মেলা। যে করেই হোক মেলায় একটু ঢু মারার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু পারিবারিক কিছু ব্যস্ততায় শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে না যাওয়ার একমাত্র কারন যে, পারিবারিক ব্যস্ততা সেটিও পুরোপুরি বলা যাবে না। যদি মন থেকে উৎসাহ বা তাগাদা অনুভব করতাম তবে যে করেই হোক একবার যাওয়া যেতো। মেলা হারাম কিংবা তাতে না গেলে বাঙালি থাকা যাবে না, এসবের কোনটাইতো বিশ্বাস করি না। তবুও কেন?…
বিলেতে আসার পর প্রথম প্রথম মেলায় খুব আগ্রহ নিয়ে যেতাম। অত:পর আস্তে আস্তে সে আগ্রহে ভাটা অনুভব করছি। ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে অদূরের একটি পার্কে যখন সময় দিচ্ছে তখনই ভাবছিলাম, আমার মতো অনেক বন্ধুরাও হয়তো মেলায় নেই। থাকলে তারা ফোন দিতো এবং ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও যেতাম। তারাও হয়তো আমার মতো প্রতিবছর প্রায় একই ধাঁচের মেলা ম্যানিয়া দেখে দেখে বোরড হয়ে গেছে। তাছাড়া ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজ প্রসারতায় মানুষের নি:সঙ্গতা কাটাবার নিপুন সুযোগ থাকার পরও কেবলমাত্র “মেলায় যাইরে” মার্কা স্থুল আহবান, অনুষ্ঠান সর্বস্বতায় ক’জনেরই বার বার আগ্রহ জাগ্রত হবে? তাই কেন যেন মনে মনে ভাবছিলাম, মেলায় তেমন জনসমাগম হবে না। অবশেষে মেলা সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে সেই অনুমানের সত্যতা পেলাম, যা প্রত্যাশিত ছিলো না।
সবকিছুর শুরুটা হয় পরম আন্তরিকতায়। অত:পর আস্তে আস্তে তাতে ভাটা পড়ে- এটাই স্বাভাবিক এবং জীবনের ধর্ম। তবে মানুষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে তাতেও মন্থরতা আনতে পারে। মেলা যখন যারা শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে স্বদেশ-স্বজাতির স্বকীয় সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারই ছিলো মূখ্য। এরপর থেকে তাতে বাণিজ্য প্রাধান্য পেয়ে যায়। মেলার নামে যত বাণিজ্য ও রাজনীতি বাড়ছে স্বত:স্ফূর্ত সমাগম ততই কমছে। মেলার ম্যানেজমেন্টে সংশ্লিষ্টদের বেশীরভাগেরইর স্বার্থ জড়িত। সেটি হয়তো বাণিজ্য, নয়তো রাজনীতি কিংবা ব্যক্তিগত প্রোফাইলের বিষয়। তাছাড়া সংস্কৃতির নামে যা পরিবেশিত হয়, সেসবের বেশীরভাগই হাল্কা ধাঁচের- যা কারো কারো কাছে রুচিসম্মত না হওয়াটাও স্বাভাবিক।
বৈশাখী মেলা নিয়ে বিলেতের বাংলা মিডিয়া সবসময়ই ছিলো সরব। মেলাকে কেন্দ্র করে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ পেতো প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক সুরমার সাহিত্য সাময়িকী কেন্দ্রীক লেখকবন্ধুরা মেলায় আসা এবং কোথায় কীভাবে মিলিত হবো তা নিয়ে আগ থেকেই একটা প্রস্তুতি থাকতো। মেলা সমাপ্তির আড্ডায়ও আমরা পারস্পরিক অনুভূতি শেয়ার করতাম। সময়ের ব্যবধানে সেটিও আর হয় না। এসবের অনুপস্থিতিও মেলার প্রতি আগ্রহ হ্রাসের অন্যতম কারন।

তবুও এবার ২/৩টি কারণে মেলায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। প্রথমত: অনেক আগেই আপাসেন্থের ঈদ পার্টিতে যোগদান ও মেলায় তাদের স্টলে যাওয়ার নিমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছিলেন সাত্তার ভাই (আব্দুস সাত্তার, বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাবেক সেক্রটারি লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব)। ঈদ পার্টিতে না পারলেও মেলায় গেলে আপাসেন্থের স্টল ঘুরে আসার ইচ্ছে ছিলো। দ্বিতীয়ত: কাউন্সিলের মিডিয়া অফিসার ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সাংবাদিক মাহবুব রহমান ভাই কাউন্সিলের পক্ষ থেকে লান্চসহ ইনভাইট্শন কার্ড অনেক আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। তৃতীয়ত: মেলার দিন দুপুরে আমাদের নবনির্বাচিত কাউনি্সলার, কবি ও গীতিকার শাহ সোহেল ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কখন যাচ্ছি। সবমিলিয়ে মনে মনে ভেবেছিলাম একবার ঘুরে আসবো। কিন্তু এতদসত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আগ্রহ না বাড়ায় আর যাওয়াই হলো না।
ঈদ, ক্রিস্টমাস ও দূর্গাপূজা এই ধর্মীয় উৎসবগুলো প্রতিবছর ঘুরে ফিরে আসে। এসব ধর্মের অনুসারীদের শাস্ত্রীয় নিয়মতান্ত্রিকতার কোনো হেরফের না করেই তা পালন করতে হয়। কিন্তু মেলাতো সেধরনের কোনো ধর্মীয় উৎসব নয় যে, তাতে কোনো পরিবর্তন কিম্বা সংযোজন-বিয়োজন করা যাবে না। তবুও কেন প্রতিবছর গৎবাঁধা নিয়মে প্রায় একই ধাঁচে তা উদযাপন করে যেতে হবে? সর্বাপরি, আয়োজকদের থাকতে হবে সুস্থ ও বিশুদ্ধ মানসিকতা। ব্যক্তিগত প্রোফাইল বৃদ্ধি, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ বাণিজ্য কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা এবং অতি বাঙালিয়ানা প্রদর্শণের মানসিকতা পরিহার করে মেলবন্ধনের ঐকান্তিকতায় তা সফল ও জনঘন হওয়া সম্ভব।

লেখক  : কবি, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!