বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

কবি ও কবিতা : রুমা চৌধুরী



কবি রুমা চৌধুরী

সংক্ষিপ্ত পরিচয় :

কবি রুমা চৌধুরী’র জন্ম ২৮শে আগস্ট, ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দে কলকাতায়। বেড়ে ওঠা শান্তিনিকেতন ও কলকাতা। লেখালেখি শুরু বাংলা কবিতা ডটকম নামে কবিতার একটি সাইটে। এছাড়া ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় এবং ‘সপ্তাহ’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় কয়েকটি কবিতা ও ‘অন্যপথে সেতু’ তে কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশ হয়েছে। যা বিদ্বৎজনের প্রশংসা অর্জন করেছে।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – কবিতা ও প্রয়াস ( অভিজয় প্রকাশনী)। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ – শার্সির ওপারে শেষ পদক্ষেপ (জিনিয়াস পাবলিকেশন)। তৃতীয় ও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে –  প্রমের কবিতা সুমন্দ ( প্রিয়মুখ পাবলিকেশন) ও চেতনে অবচেতনে (অন্যপথে প্রকাশনী)।

কবি রুমা চৌধুরী ইকোনোমিক্স অনার্স এর কৃতি ছাত্রী। জনক শ্রীহীরেন ভট্টাচার্য্য ( ব্যাংক কর্মী) ও জননী শ্রীমতী রমলা ভট্টাচার্য্য ( গৃহবধূ) এর সন্তান। স্বামী শ্রী শুভাশীষ চৌধুরী ( শিক্ষক, স্কুল-বুক লেখক, গবেষক ( অরবিন্দ ঘোষ)) ও মেয়ে সঞ্চারী চৌধুরী (প্রথম বর্ষ বোটানি অনার্স) কে নিয়ে তাঁর স্নেহস্নিগ্ধ সংসার।

রুমা চৌধুরীর কবিতা :

জানালায় তুমি ফেসবুকে আমি

অমল সেদিন জানালার ধারে দেখতে আপন পৃথিবী

ওই সুদূরের পাঁচমুড়ো পাহাড়ে মনে মনে দিতে উঁকি।

আজকে আমিও অমলের মতো ফেসবুকে চেয়ে থাকি
দূরের পৃথিবী, দূরের মানুষ মন-তারে হয় সাথী।

অমলের সেই দই ওয়ালার সুর,মালিনীর মালা গাঁথা,
প্রহরীর ডাক, রাজার চিঠি, আর নীরব অপেক্ষা..।।

আজও রচে চলে চেনা-অচেনায় জীবনের কথকতা
দূরের বন্ধু আপন হয়েছে জানাত মর্ম কথা।।

সেই মালিনী সুধা এখনো যেন অমলের ডাক খোঁজে
আজও অমল পায়ে পায়ে হাঁটে বনবীথিকার মাঝে।

রাজ-প্রহরী, রাজ-চিঠি হাতে মেসেঞ্জারে দেয় উঁকি
অমল দেখছে ই-মেল ইনবক্স, ডাকঘর কে দিয়ে ফাঁকি।।

তবুও অমল, তোমার জানালা- ফেসবুকের ইতিকথা
সেদিনও যেমন, আজও তেমনি দুচোখে বিশ্ব, শতমুখ শতকথা।

ফেসবুক

“তুমি না থাকলে ছুটির দুপুর ঘুমিয়ে হত বিকেল”*
তুমি না থাকলে কথা ছবি ভুলে
পাঠাতাম শুধু ই-মেল।

তুমি না থাকলে কবিতাগুলো পেত না লাইক কমেন্ট
তুমি আছ তাই সেলফির ঝড়ে অজ্ঞান বয়-ফ্রেন্ড।

ঘুম মোছা চোখে উঠে মাঝ রাতে নাইজেরিয়ায় নাইজেল দেয় উঁকি
কাশ্মীরী হেমার বাঙালি বয়ফ্রেন্ড শেখায় মাছের রেসিপি।

ফেসবুকে আমি আইলান(Aylan)দের শুনেছি প্রতিধ্বনি
ফেসবুক, তোমারই জন্য মুখর হয়েছে প্রতিবাদী কামদুনি।

তুমি না থাকলে স্মাইলিগুলোর শুধুই দাঁতভাঙা
আবালবৃদ্ধবনিতা খুঁজতো অমোঘ প্রেমের ঠিকানা।

ফেসবুক, তুমি ভাবুক মনের রঙের সঞ্চারী
শেয়ার লাইক কমেন্ট দিয়ে নিজের জগৎ গড়ি।

তোমার জন্য বেঁচে থাকি রোজ, সুখে দু:খে উদ্বেল
“তুমি না থাকলে ছুটির দুপুর ঘুমিয়ে হত বিকেল।”

* আনন্দবাজার পত্রিকার বিজ্ঞাপনে এই কথাটি ব্যবহৃত হয়।

ঋত নির্বাণ স্মরণে

অন্তরালে অরূপ তুমি, রয়েছ আপন ধ্যানে
আপন বীণায় সপ্ত সুরে দীর্ঘ দহন তানে।

ইমন সুরে সান্ধ্য সুধায় বহিছে সুরধুনি
ঈশিত ছন্দে বহিছে প্রাণে তোমার পদধ্বনি।

উজান স্রোতে বইয়ে খেয়া আমি ভাসি বহুদূরে
ঊর্মিমালার ফেনপুঞ্জে রয়েছি স্বপ্নে ঘিরে।

ঋতব্রতে ঋদ্ধ সত্যে দিয়েছিলে ইঙ্গিত
একান্তে সেই আলোর তন্ত্রে বেজেছিল সঙ্গীত।

ঐহিক যত দৈহিক পীড়া বেঁধেছে আমায় ডোরে
ওঁঙ্কার সুরে ঋত্বিক রূপে, মৃত্যু এসেছে দ্বারে।

ঔর্বাগ্নির দীপ্ত স্পর্শে এস তুমি মোর চেতনে
অন্তরালে খুঁজি তোমায়, ঋত নির্বাণ স্মরণে।

কৃষ্ণপ্রেমী রাধা 

কবিতা আর কবি যেন
কৃষ্ণ আর রাধা।
নিত্য নতুন সুরের রঙে
প্রেম ডোরেতে বাঁধা।
কবিতা জাগে কবির মনে
আধেক ঘুমে জাগরণে
সুরের ছোঁয়ায় ওঠে মেতে
নিত্য নতুন প্রেমে।
কখনো যেন অভিমানী
চিনেও, কিছুই না চিনি,
কাছে এসেও রয় না সে যে বাঁধা
কবি মরে ঊহ্য প্রেমে
সুরের খেয়ার আপন রঙে
আনন্দঘন শ্যামাঙ্গিনী কৃষ্ণপ্রেমী রাধা।

ধৃতরাষ্ট্রের ছবি 

আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ
কুয়াশায় গেছে মিশে
নজরুল যেন হারিয়ে গিয়েছে
অমানিশার ত্রাসে।
পথের ধুলোয় মিশে যায় রোজ
জীবনানন্দ কবি
আমার হৃদয়ে আঁকা আজ শুধু
ধৃতরাষ্ট্রের ছবি।
আমি জনগন রূপে পথসভা করি
মিছিলের পথে হাঁটি
জনহিল্লোলে আবেগের বেগে
মেপেছি স্বপ্ন মাটি।
সভ্যতা নামে স্বপ্নের রঙে
গড়েছি তোরণ চিত্র
ধৃতরাষ্ট্র হৃদয়ে আমার
শকুনি পরম মিত্র।
স্থিমিত আলোয় ভাষাহীন মুখ
আমায় প্রশ্ন করে,
“সভ্যতার আলোক স্তম্ভ
রচিছে জীব না জড়ে?”
নির্বাক আমি এগিয়ে চলেছি
নির্ভয় দুর্বার
পিছনে রয়েছে সভ্যতার
নিশ্চল শবাধার।
কুয়াশা ‘পারে দূরে সরে যায়

সেই সত্যদ্রষ্টা কবি
আমার হৃদয়ে মনন আধারে
ধৃতরাষ্ট্রের ছবি।

চেতনে অবচেতনে 

চূড়া ভাবে নূপুর,
কত ভাগ্যবান।
শ্রীরূপের পাদপদ্মে
সঁপেছে তার প্রাণ।
বিশ্বজগৎ মাঝে
যেথায় পদ যুগল রাজে
সেথায় নূপুর অরূপ ছন্দে
বাজায় মধুর তান।
নূপুর,কত ভাগ্যবান।
নূপুর ভাবে,ওই শ্রীরূপের
প্রেমের সুরে বেঁধেছে সুর বাঁশি,
নিখিল ভুবন রেখেছে বেঁধে
ওই প্রেমময় রশি।
হতাম যদি শ্যামের হাতের ওই
ছন্দবিধুর বাঁশি।
নিত্য সুরের ভাবের খেলায়
আমিও হতেম সাথী।
বাঁশি ভাবে, চূড়া,
ঐ ঐশী রূপেই
মনন জোড়া,
রয়েছে মগ্ন ধ্যানে
চেতন আলোর জগৎ হতে
অন্ধ অবচেতনে
তাই তো স্থান হয়েছে
উচ্চ শীর্ষাসনে।
ঐশী রূপে ছড়িয়ে আলো
বিশ্ব চরাচরে
চিন্তামনি চেয়ে থাকেন
শূন্য পারাবারে
আদি হতে অন্তপথে
সৃষ্টি হতে ধ্বংসরথে
অখন্ড ওঙ্কারে।
সত্যে চিত্তে আনন্দের
ঋদ্ধ অন্তরে।

রাধা 

যমুনার জলে
কালো এলোচুলে
একাকিনী আজও রাধা
শ্যামের সে বাঁশি
বাজে অহনিশি
নিরালায় প্রেম গাঁথা।
পিয়াসী সে মন
কাঁদে অনুক্ষণ
মন যমুনার কোলে
শ্যাম বিরহিণী
আজও একাকিনী
নীরবে অন্তরালে।

দেখেছ কি, সেই রাধার ছবি
আপন মনের কোণে?
মন রাধা খোঁজে শ্যামের বাঁশরি
ওই অরূপের স্মরণে

স্বপ্ন

দুই পয়সা আয় করি
দেড় পয়সা খাই
আধ পয়সা হাতের মুঠোয়
কষ্ট করে বাঁচাই।
মেয়ের বিয়ে বাপের অসুখ
ছেলের লেখাপড়া
জমান টাকায় করব সব
স্বপ্ন ঘড়া ঘড়া।
স্বপ্ন দেখে কাটল দিন
এল কালো রাত
স্বপ্ন গুলো মাথার ‘পরে
ভাঙল অকস্মাৎ।
লক্ষ কোটি জমেছে আজ
মোদের বিন্দুতে
স্থান পেয়েছে নেতা মন্ত্রীর
গোপন সিন্ধুকে।
বুড়ো বাপটা মরেই গেল
বিনা চিকিৎসায়
ছেলেটা এখন এই বয়েসেই
ইট বালি বয়।
আমি এখন টিবির রুগী
রাস্তায় পাতি হাত
মোদের টাকায় বাবুদের নাকি
দিন হয়েছে রাত।
পৃথিবীটা নাকি ছোট হয়ে গেছে
তাদের পায়ের মাপে
আমেরিকা আর লন্ডন নাকি
দুটো পায়ের ফাঁকে।
এখনো আমি স্বপ্ন দেখি
আমার ছেলেকে নিয়ে
একদিন সে বড় নেতা হবে
তোমাদের সবার চেয়ে।

জীবন 

​ঘুম থেকে জেগে শিশু খোঁজে,মা,কৈরে?

টলমল কচি পায়

ছোটে ভীড় রাস্তায়

মা তার ভিখ মাগে ওপারের বাজারে।
ভোটাভুটি মারামারি বাজারটা বন্ধ
দিনভোর চিৎকার

মারপিঠ হুঙ্কার

থেকে থেকে ভেসে ওঠে বারুদের গন্ধ।

বড় বড় গাড়ি ছোটে উদ্ধত গতিতে
ছেড়ে গেছে সম্ভ্রম

পেট জ্বলে টনটন

সীমাহীন আক্রশে ছুড়ে ফেলে ছেলেকে।

আলোকিত সমাজের ক্ষুদ্র অলিন্দে
পুলিশের লক-আপে

ভাত জোটে ভুখা পেটে

বিধাতা নিরুত্তর চোখ-বাঁধা-পরী কাঁদে।

হঠাৎ দেখায় রবীন্দ্রনাথ কে

নিজের মনের খটকা নিয়ে তুমি চললে একা
সে নামল পরের স্টেশনে- পড়ে রয় স্মৃতিকথা।।

তবু, সেদিনে রেলগাড়িতে – কালো-রেশমি-শাড়ী,
চাঁপা-চিকণ মুখের সেই হঠাৎ দেখার স্মৃতি –

গড়েছিল কোন শুধুই দূরত্ব – নাকি
মনের কোণে এঁকেছিল প্রেম-মূর্তি?

শতবর্ষ পার কোরেও আজ জানতে ইচ্ছা হয়।
কেমন করে কি ভাবে ঘটেছিল পরিচয়?

সাহস করে সে তোমাকে ডেকেছিল পাশে
তুমি কেন দিলেনা সারা নীরব ইশারা তে?

বলেছিলে রাতের তারারা আছে দিনের গভীরে
রাতের বেলা তারার আলো জ্বলে কি অন্তরে?

কোনো রাতে শুনেছিলে কি কোন তারার কাহিনী?
সেই সুর ই কি তোমার গানে বাজায় অরূপ ধ্বনি?

সকল কথাই কি রয়ে গেল দিনের আলোর গভীরে
স্বপ্ন বোনা সুরগুলোতে তারাদের ঘিরে?

আবার যদি হতো দেখা বাজ তো কি আর বাঁশি?
দিনের আলোর অন্তরালে যে সুর ছিল বাকী?

কবির সাথে যোগাযোগ : sunriseindia1971@gmail.com

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!