বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

অসাধারণ রান তাড়ায় ঐতিহাসিক জয়



টনটনে সোমবার (১৭ জুন) ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ৩২১ রান। এত বড় স্কোর তাড়ায় আগে কখনোই জেতেনি বাংলাদেশ। এবার সাকিব ও লিটনের রেকর্ড গড়া জুটিতে গড়া হলো নতুন ইতিহাস। বড় রান তাড়ায়ও বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ জিতল ৫১ বল বাকি রেখেই।

যেখানে সাকিবের ব্যাট থেকে এলো অসাধারণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরি। নতুন পজিশনে নেমেও লিটন দাস বিশ্বকাপ অভিষেক রাঙালেন মুগ্ধতা জাগানিয়া ব্যাটিংয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে আবার জয়ে ফিরল বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে রান তাড়ায় বাংলাদেশের আগের রেকর্ড ছিল গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের ৩১৮ টপকে জয়।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন সাকিব। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ রানের ইনিংসটি কমিয়েছিল পরাজয়ের ব্যবধান। এবার ৯৯ বলে ১২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস দলকে জিতিয়েছে বড় ব্যবধানে। সেঞ্চুরির আগে বল হাতে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে তার ছিল না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী।
সাকিবের পারফরম্যান্স যদি হয় প্রত্যাশিত, নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে আরেকবার দেখিয়ে দেওয়া, লিটনের ইনিংস তাহলে ছিল আনন্দময় বিস্ময়। এমনিতে টপ অর্ডারের হলেও বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো নামলেন পাঁচ নম্বরে। সংশয়গুলিকে উড়িয়ে দিলেন নান্দনিক সব শটে। ৬৯ বলে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটিতে ঘোষণা দিলেন নতুন অভিযানে দাপুটে শুরুর।

দুজনের ১৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি চতুর্থ জুটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড, বিশ্বকাপে যে কোনো জুটিতেই সেরা।
এই জুটির আগে বাংলাদেশের আশা দুলছিল অনিশ্চয়তায়। উদ্বোধনী জুটি যদিও গড়ে দিয়েছিল ভালো একটি ভিত। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ৮.১ ওভারে দলকে এনে দেন পঞ্চাশ।

প্রথম দুই ম্যাচের মতোই দারুণ শুরুকে হেলায় ফেলে আসেন সৌম্য। তার ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস যদিও দলকে এনে দেয় গতি।

তামিম ছিলেন এবারের আসরে নিজের সেরা ছন্দে। সাকিবও এক মুহূর্তের জন্য চেপে বসতে দেননি রান রেটের চাপ। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫৫ বলে ৬৯।

দুজনকে যখন মনে হচ্ছিল অপ্রতিরোধ্য, শেলডন কটরেল জুটি ভেঙেছেন অসাধারণ ক্ষিপ্রতায়। সোজা শট খেলে ফলো থ্রুতে একটু বেরিয়ে এসেছিলেন তামিম, নিজের ফলো থ্রুতে বল ধরে কটরেল গুলির বেগে থ্রোতে ভাঙেন স্টাম্প। ৪৮ রানে রান আউট তামিম।
একটু পর মুশফিক যখন বিদায় নিলেন নিজের আলগা শট ও খানিকটা দুর্ভাগ্য মিলিয়ে, চাপে তখন বাংলাদেশই। কে জানত, পরের জুটিতেই শেষ হবে খেলা!

সাকিব খেলতে থাকলেন দাপটে। লিটন দারুণ দক্ষতায় কেবল দিয়ে গেলেন সঙ্গ। গড়ে উঠল জুটি। পরে সাকিবকে এক রকম দর্শক বানিয়েই লিটন মেলে ধরলেন যাবতীয় শটের পসরা!

আগের ম্যাচে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন সাকিব, এবার লাগল কেবল ৮৩ বল। এই ইনিংসের পথে ছুঁয়েছেন ৬ হাজার ওয়ানডে রান। আড়াইশ উইকেট ও ৬ হাজার রানের ডাবল স্পর্শ করেছেন সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে। প্রাপ্তিতে ভরপুর ম্যাচটায় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নিশ্চয়ই দলের জয়!

মাঝ বিরতিতে যে জয়কে মনে হচ্ছিল বেশ কঠিন। ওঠা-নামার ধাপ পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গড়েছিল চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
বাংলাদেশকে আবারও ভুগিয়েছেন শেই হোপ। টপ অর্ডারে রান পেয়েছেন এভিন লুইস। মাঝে আর শেষে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন শিমরন হেটমায়ার ও জেসন হোল্ডার।

উইকেটে শুরুর আর্দ্রতা কাজে লাগাতে টস জিতে বোলিং নিয়েছিলেন মাশরাফি মুর্তজা। অধিনায়ক নিজেই দেখিয়ে দেন কিভাবে বল করা উচিত। ক্রিস গেইলকে বল করে মেডেন ওভারে শুরু। তার প্রথম তিন ওভারে স্কোরিং শট ছিল কেবল দুটি। প্রথম ৫ ওভারে রান দেন ৯।

আরেকপাশে সাইফ উদ্দিনও শুরু করেন ভালো। দলকে প্রথম উইকেটও এনে দেন তিনিই। ১৩ বল খেলেও রান না করে ফেরেন গেইল।

লুইস ও হোপ সেই সময়টা কাটিয়ে দেন ঠাণ্ডা মাথায়। প্রথম ১০ ওভারে খেলেননি কোনো লফটেড শট।

সময়ের সঙ্গে রানের গতি বাড়াতে থাকেন লুইস। হোপ মন দেন উইকেট ধরে রাখায়। দুজনের জুটি পেরিয়ে যায় শতরান, এবারের বিশ্বকাপে যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম।

১১৬ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। ফিফটির পর বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন লুইস। সাকিবকে ছক্কায় ওড়ানোর পর আরেকটির চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন ৬৭ বলে ৭০ করে।
বোলিংয়ে শুরুটা ভালো করতে না পারলেও দলকে পরের উইকেটও এনে দেন সাকিবই। জমে ওঠা নিকোলাস পুরানকে থামান ২৫ রানে।

ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া জুটি এরপরই। হেটমায়ার গিয়েই শুরু করেন শট খেলা। গোটা ইনিংসে দারুণ ফিল্ডিং করা সাইফ ১২ রানে হাতছাড়া করেন হেটমায়ারকে রান আউটের সুযোগ। সেটির খেসারত দিতে হয় দলকে। হেটমায়ার শুরু করেন টর্নেডো।

৩৫ থেকে ৩৮, এই চার ওভারেই তারা তুলে ফেলেন ৬০ রান! মুস্তাফিজের ওভারে আসে ১৯ রান, সাইফের ওভারে ১৭। মিরাজের ওভার থেকে ১০ রান, মোসাদ্দেকের ওভারে ১৪। হেটমায়ার ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ২৫ বলে।

হেটমায়ারকে ফিরিয়ে ৪৩ বলে ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন তৃতীয় স্পেলে নিজেকে ফিরে পাওয়া মুস্তাফিজ। আকাশে ওঠা বলটিকে দারুণ ক্যাচে পরিণত করেন তামিম।

ওই ওভারেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মুস্তাফিজ শূন্যতে থামান আন্দ্রে রাসেলকে। প্রথম ৫ ওভারে ৪১ রান দেওয়া বোলারই পরে দলের সেরা বোলার ৫৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৯ ম্যাচে তিনটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করা হোপ এবার থামেন ৯৬ রানে। ক্যারিবিয়ান ঝড় থামেনি সেখানেও। জেসন হোল্ডার নেমে খেলেন ১৫ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। বাংলাদেশের লক্ষ্যটা তাতেই ছাড়িয়ে যায় ৩২০।
কিন্তু দিনটি যে ছিল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের! ম্যাচ শেষে বরং আফসোস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি আর কিছু রান বেশি করত, লিটনের সেঞ্চুরিও হয়তো হয়ে যেত!

তবে এই ম্যাচে এসব আফসোস খুবই নগন্য। ম্যাচ শেষে মাঠের ওপর উড়ে বেড়াচ্ছিল ঝাঁকে ঝাঁকে সিগাল। তাদের সঙ্গে আবার ডানা মেলেছে যেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নগুলোও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩২১/৮ (গেইল ০, লুইস ৭০, হোপ ৯৬, পুরান ২৫, হেটমায়ার ৫০, রাসেল ০, হোল্ডার ৩৩, ব্রাভো ১৯, টমাস ৬*; মাশরাফি ৮-১-৩৭-০, সাইফ ১০-১-৭২-৩, মুস্তাফিজ ৯-০-৫৯-৩, মিরাজ ৯-০-৫৭-০, মোসাদ্দেক ৬-০-৩৬-০, সাকিব ৮-০-৫৪-২)।

বাংলাদেশ: ৪১.৩ ওভারে ৩২২/৩ (তামিম ৪৮, সৌম্য ২৯, সাকিব ১২৪*, মুশফিক ১, লিটন ৯৪*; কটরেল ১০-০-৬৫-০, হোল্ডার ৯-০-৬২-০, রাসেল ৬-০-৪২-১, গ্যাব্রিয়েল ৮.৩-০-৭৮-০, টমাস ৬-০-৫২-১, গেইল ২-০-২২-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!