বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

সমাজসেবী মাহমুদ হোসেন স্মরণে



মরহুম মাহমুদ হোসেন

অনেকটা নিরবেই চলে গেলেন আমাদের এলাকার এক প্রবীণ সমাজসেবী, সাদা মনের মানুষ আলহাজ্ব মাহমুদ হোসেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বনাথের দশঘর এলাকার সমাজসেবার অঙ্গনে যে শুন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। একজন নিরহঙ্কারী, পরোপকারী ও সহজ সরল ব্যক্তি হিসাবে তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সব সময় চেষ্টা থাকতো আমাদের ইউনিয়নের জন্য ভালো কাজ করার। কারো কোন অনিষ্ট করা বা পরনিন্দা করা তাঁর স্বভাব ছিল না। তাঁর আরো একটি বৈশিষ্ট্য ছিল যা হচ্ছে, যে কোন সভা-সমাবেশে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পৌঁছতেন এবং সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতেন। কোন সময় অতিথিদের আসনে বসা বা বক্তৃতা দেয়ার কোন আগ্রহ দেখাতেন না। তবে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আর্থিক সহযোগিতায় তিনি ছিলেন সবার চাইতে অগ্রগণ্য ও মুক্তহস্ত। তার পকেটে যখন যা থাকতো প্রয়োজনে তখন তা তিনি অকাতরে বিলিয়ে দিতেন।

মরহুম মাহমুদ হোসেন আমার চাইতে বয়সে অনেক বড় ছিলেন। কিন্তু তার চালচলনে কোন সময়ই বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হয়নি। সব সময়ই তাকে তৎপর ও কর্মচঞ্চল হিসাবে দেখা যেত। যে কাজেই তিনি আত্মনিয়োগ করতেন তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে সে কাজে শ্রম দিয়ে যেতেন এবং সবাইকে সে সমস্ত কাজ উদ্ভুদ্ধ করতেন। সাথে সাথে তিনি মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহবান জানাতেন। এতে যদি কেউ তার আহবানে সাড়া না দিত তখন তিনি সে সঙ্গ ত্যাগ করতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রায়ই আমাদের এলাকার কয়েকজন লোকের কথা আলাপ করতেন ও বলতেন এরা নিজেদের দিকে না তাকিয়ে শুধু বিরুদ্ধাচরণ ও সমালোচনা করতে চায় -যা এলাকাবাসীকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া কোন উপকারে আসে না। এ লেখায় আমি আমার এলাকার আরো কয়েকজন প্রয়াত সমাজসেবীর কথা উল্লেখ করতে চাই, যাদের কথা সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেকে আজও স্মরণ করেন ও সমাজসেবায় তাদের বিভিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তারা হচ্ছেন, যথাক্রমে আলহাজ্ব ইব্রাহিম খান, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মন্নান ছুরাব আলী, সাবেক মেম্বার মো. তছর উদ্দিন, আলহাজ¦ নূর মিয়া (আব্দুল হক) প্রমুখ।

আমার এ লেখার প্রাক্ষালে আলাপ হলো আমার এক সময়ের হাইস্কুল জীবনের সহপাঠি আলহাজ¦ সাজিদ আলী মেননের সাথে। আমি যখন মাহমুদ হোসেনের ব্যাপারে কিছু লেখার আগ্রহ প্রকাশ করি তখন তিনি খুবই আগ্রহ নিয়ে সতঃস্ফুর্তভাবে উৎসাহ দিলেন। সাথে সাথে এ কথাও উল্লেখ করেন যে, যারা ভালো কাজ করে তারা সব সময়ই স্মরণীয় আর যারা মন্দ কাজ করে তারা সব সময়ই বর্জনীয়। মরহুম মাহমুদ হোসেন যেহেতু ভালো কাজ করে গেছেন তাই তার সম্পর্কে যতটুকু পারা যায় ততটুকু তুলে ধরা প্রয়োজন। এতে করে অন্যেরা ভালো কাজে উৎসাহিত হবে। আমি তার সাথে একমত পোষন করে বলছি শুধু লেখায় নয় আলাপ আলোচনার মাধ্যমেও তাদের ভালো কাজগুলি তুলে ধরা প্রয়োজন এতে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
সে যাই হোক, মাহমুদ হোসেনের সাথে আমার পরিচয় অনেকদিনের। আমাদের দশঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শফিকুর রহমানের একনিষ্ট ও বিশ^স্থ মানুষ ছিলে তিনি। ইউনিয়নের প্রতিটি নির্বাচনের সময় তিনি দেশে চলে যেতেন তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করার জন্য। সেই সূত্র ধরেই তার সাথে আমার আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। আমি তখন লক্ষ্য করতাম যে, তিনি শুধু নির্বাচনের খাতিরে নয় তার এলাকার উন্নয়ন বিশেষ করে একটি রাস্তা যেটি বিশ^নাথ- জগন্নাথপুর রোড থেকে গাজীর মোকাম পর্যন্ত রয়েছে সেটি যাতে বাস্তবায়িত হয় সে ব্যাপারে তিনি প্রচেষ্টা চালাতেন। তিনি চাইতেন এ রাস্তাটি পার্শবর্তী বাউসি ও বরুনী গ্রামের মধ্যবর্তী খালি জায়গা দিয়ে নির্মান যাতে হয়। এ ব্যাপারে তিনি বিশ^নাথ উপজেলার সাবেক চেয়াম্যান মুহিবুর রহমান, সাবেক দুই এমপি ইলিয়াস আলী ও শফিকুর রহমান চৌধুরীর সাথেও যোগাযো করতেন বলে জানা যায়।
অতি সম্প্রতি আরো একটি ব্যাপারে তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। তা হচ্ছে, বিগত প্রায় দুই যুগ থেকে দশঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে আশু নির্বাচনের দাবীতে যে ক্যাম্পেইন চলছিল তার একজন অগ্র সৈনিক ছিলেন তিনি। দেশে-বিদেশে এ ব্যাপারে তিনি অন্যান্যদের সাথে ছাড়াও নিজের উদ্যোগে ক্যাম্পেইন করে গেছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রায়ই আমার সাথে আলাপ করতেন এবং একটা নির্বাচন যাতে অবিলম্বে হয় সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখার কথাও বলতেন। সাথে সাথে তিনি একথাও বলতেন যে, কেউ কেউ এ কাজের চাইতে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা অধিকভাবে করছেন যার ফলে এ ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি এ সমস্ত প্রচার প্রচারণার বিশ^াসী ছিলেন না। এখন পর্যন্ত সে নির্বাচন না হলেও হয়তো একদিন তা হবে কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারলেন না -এ আফসোস আমাদের দীর্ঘদিন তাড়া করে ফিরবে।
পরিশেষে আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ও পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করি। মহান আল্লাহতায়ালা তার সকল ভাল কাজের ছুয়াব দান করুন ও বেহেস্ত নসিব করুন। আমিন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!