দুঃসময়ের রাজনীতিতে কাজী শাহজাহান একটি নাম নয় একটি প্রতিষ্ঠান

কাজী মোঃ শাহজাহান

মুজিবাদর্শের একজন রাজপথের সৈনিক হিসেবে অতিতের ন্যায় এখনো লড়ে যাচ্ছেন কাজী শাহজাহান। তিনি লড়ে যাচ্ছেন সকল প্রকার নীতিহীনতা আর আদর্শহীনতার বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সব সময় দৃঢ়তার সাথে বুকে ধারণ করে সাহসিকতার সাথে রাজনীতির মাঠে থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, বিএনপি ও জামাত শিবিরের দুঃশাসনের সময় বিভিন্ন মামলা-হামলা ও নির্যাতনের মোকাবেলা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৮৮ সালে এমসি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগ সংগঠিত করতে গিয়ে প্রথমেই মামলা-হামলার শিকার হন। ৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দয়ামীর বাজারে বিএনপি র প্রহসনের নির্বাচন প্রতিরোধ করতে গিয়ে তিনিসহ তাঁর ভাইয়েরা সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর রোষানলের শিকার হন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি ওসমানীনগরের বিভিন্ন কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও জীবন বাজি রেখে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই প্রহসনের নির্বাচন প্রতিরোধ করতে সম্মুখমুখী নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচার এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন সময় অলিখিত আদেশ জারি করা হয়। তারপরও তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দৃঢ়তার সাথে বুকে ধারণ করে ভয়ভীতি পরিহার করে মামলা-হামলার পরিণামের কথা তোয়াক্কা না করে জননেত্রী শেখ হাসিনার  ডাকে দলের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে একনিষ্ঠ একজন কর্মী হিসেবে মাঠে থেকেছেন সব সময়।

এই গুণী রাজনীতিবিদের জন্ম সিলেট জেলার বালাগঞ্জ (বর্তমানে ওসমানীনগর) উপজেলার উসমান পুর ইউনিয়নের থানা গাঁও গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোহাম্মদ উস্তার মিয়া ও মা সদরুন নেসা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার সময় তাঁর বাবা প্রথমে পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। পরে আবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার সময় তাঁর ভাইসহ পাক বাহিনীর হাতে জুন মাসে গ্রেফতার হন। এবং ছয় মাস কারাভোগ করার পর ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয়ের দিনে জয়বাংলা ধ্বনি কন্ঠে ধারণ করে বিজয়ের বেশে সিলেট কোতোয়ালী থানা হাজত থেকে তালা ভেঙে বের হয়ে আসেন।

কাজী শাহজাহানের নিজ গ্রামের স্কুলে লেখাপড়ার হাতেখড়ি। পরে সদরুন নেসা উচ্চবিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক ও বিজ্ঞানে স্নাতক সিলেট এমসি কলেজ থেকে। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্কুলে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে মুজিবাদর্শ অন্তরে ধারণ করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দীক্ষা ।স্কুল থেকে জাতীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি – বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সদরুন নেসা হাই স্কুল শাখার সভাপতি (১৯৮৫), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বালাগঞ্জ থানা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক (১৯৮৮), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এমসি কলেজ শাখার সহসভাপতি (১৯৮৮-৮৯), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সহসভাপতি (১৯৯০-৯৩), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় পরিষদ সদস্য (১৯৯৭), এমসি কলেজ ছাত্রসংসদের ক্রীড়া সম্পাদক (১৯৮৯), শেখ হাসিনা মুক্তি পরিষদ ইউকে কমিটির আহ্বায়ক (২০০৮) এবং যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাকর্মীদের পুনর্মিলনী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এই রাজনীতিবিদ ছিলেন বিগত সংসদ নির্বাচনে সিলেট ২(ওসমানী নগর -বিশ্বনাথ) আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।

রাজনীতির পাশাপাশি কাজী শাহজাহান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব সংগঠনের মূল কমিটিতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থেকে দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সিলেট ভিত্তিক বালাগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি  ও রিদম সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগ উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ বালাগঞ্জ -এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

তিনি – দয়ামীর কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বালাগঞ্জ কলেজের আজীবন সদস্য, বালাগঞ্জ ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও গ্রামীণ মিডিয়ার সদস্য,  শাহজালাল বাংলা স্কুল কার্ডিফ -এর কার্যকরি কমিটির সদস্য, ওসমানী নগর-বিশ্বনাথ কল্যাণ কমিটি ইউকের সদস্য সচিব, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কার্ডিফ -এর সাধারণ সম্পাদক, ওসমানী নগর জনকল্যাণ ট্রাস্ট ইউকের ট্রাস্টি।

এছাড়া তিনি মধুবন আন্দোলন, সিমিটার আন্দোলন, বিডিআর আন্দোলন, সিলেট বিভাগ আন্দোলনেও  সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। সিলেট শহরের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে অহোরাত কাজ করেছেন। চষে বেড়িয়েছেন শহরের প্রতিটি অলি-গলি।

আজ পরিবার নিয়ে প্রবাসে থাকলেও স্বদেশের রাজনীতিতে রয়েছে তাঁর সরব পদচারণা। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর মমতাবোধের কমতি নেই। যেন কোন দূর্যোগে, এলাকার মানুষের যে কোন প্রয়োজনে তিনি যেন নিবেদিত প্রাণ। দল ও মানুষের প্রতি এমন মমতাবোধ, দলের দুঃসময়ে একনিষ্ঠ একজন কর্মী হিসেবে দলের সাথে মিশে থেকে নিজেকে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন। তাইতো কাজী শাহজাহানকে আজ কর্মী ও শুভাকাঙ্খিরা নির্দ্বিধায় বলেন দুঃসময়ের রাজনীতিতে কাজী শাহজাহান একটি নাম নয় একটি প্রতিষ্ঠান। রাজনীতিতে এই নেতার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

লেখক: এম এস জামান, সাংবাদিক

শেয়ার করুন: