শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

কেমন আছেন ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইইউ নাগরিকরা



।।শামসুল ইসলাম, লণ্ডন থেকে।।

“ব্রেক্সিট” চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত শব্দ। ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ এ নামে পরিচিত। গত প্রায় ৪ বছর ধরে ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের রাজনীতি টালমাটাল। টাল সামলাতে না পেরে দুই দুইজন প্রধানমন্ত্রী পদ হারিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলেও ব্রেক্সিট পরবর্তী সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটেন ও ইউরোপের রাজনীতি এখনো সরগরম। ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ করার অন্যতম কারণ ফ্রি মুভমেন্ট বা নাগরিকদের অবাধে চলাচল নীতি। ইইউর এই আইনের কারনে ব্রিটেনকে নিজদের হোম বানিয়ে নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন বা ৩৫ লাখ ইউরোপীয়ান। আবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী বসত গেড়েছেন প্রায় দুই মিলিয়ন ব্রিটিশ নাগরিক। ধারণা করা হয় ব্রিটেনে স্থায়ী হতে ইচ্ছুক এ ৩৫ লাখের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী বংশদ্ভূত ইউরোপীয়ান নাগরিক। আবার এদের প্রায় ৮০ ভাগই এসেছেন ইতালি থেকে। এর বাইরে স্পেন ও পর্তুগাল থেকে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছেন বেশ কিছু বাংলাদেশী। এছাড়া ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মান থেকে স্বল্প সংখ্যক এসেছেন ব্রিটিশ সম্রাজ্যে।

ব্রিটেনে কেমন আছেন এসব বাংলাদেশী অরিজিন ইউরোপীয়ানরা, তারচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কিভাবে গ্রহণ করছেন এখানকার ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা! অনেকের সাথে আলাপ করে এর নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়। তাদের অনেকের অভিযোগ ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের কাছে তারা ইউরোপ ফেরত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। অবশ্য শেতাংগ আভিজাত ব্রিটিশদের কাছে ইউরোপ ফেরত এসব বাংলাদেশী অরিজিন আর কথিত ব্রিটিশ বাংলাদেশী বা ইন্ডিয়া-পাকিস্থানীর মাঝে কোন তফাত নেই। সকলেরই গায়ের রং বাদামী, কাজেই তারা অভিবাসী। এমনকি এমপি, মন্ত্রী হলেও তার পরিচয় অভিবাসী। এখানে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে-র একটি উক্তি উল্লেখ করা যায়; পাকিস্তানী বংশদ্ভূত সাজিদ জাবেদকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেয়ার পর ব্রিটেনের উদারতার উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, এখানে ইসলামাদ থেকে বিমানে চড়ে এসে ব্রিটেনের মন্ত্রী হওয়া যায়। এভাবেই অভিবাসীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। কাজেই ব্রিটিশদের কাছে ব্রিটিশ বাংগালী বা পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ানরা অভিবাসী বই আলাদা কিছু নয়।

অথচ এখানে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে আসা ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা তাদের স্বদেশী ইউরোপীয়ানদের তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি উপদ্রব ভাবছেন। বাস্তবে এর উল্টোটা হওয়ার কথা ছিল বলে বুদ্ধারা মনে করেন। তবে এমন ভাবনার মানুষদের অধিকাংশই ব্রিটেনের বাইরের জগৎ সম্পর্কে থুড়াই খুজ খবর রাখেন। তাদের কাছে বিশ্ব বলতেই অনেকাংশে ব্রিটেন বুঝায়। তাদের কারো কারো ধারণা, এখানে ইউরোপীয়ানরা সামাজিক খাতে ব্রিটেনের নানা প্রনোদনা নিতে আসেন, অথচ ব্রিটেন এমনকি ইউরোপের মধ্যে সামাজিক প্রনোদনায় শীর্ষ দেশ তো নয়ই বরং অনেকে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয়ও নয়। কাজেই তাদের এমন অভিযোগও অন্তঃসারশূন্য!

তবে কেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রিটেনে স্থায়ী হতে চান তারা, এমন প্রশ্নের উওরে অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন ব্রিটিশ উপনিবেশের কারনে ব্রিটিশদের সাথে ভাষা সহ একধরনের পরিচিতি, বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার অপেক্ষাকৃত ভালো সুযোগ, ধর্মীয় উদারতা সর্বোপরি সন্তানের ভবিষ্যৎকে তুলনামূলক উজ্জ্বল মনে করে এখানে হিজরত করেন তারা। তাদের এমন দাবীর পক্ষে কথা বলে তাদের সন্তানদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য। লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন বারার স্কুলগুলোতে কান পাতলেই শুনা যায়, ইউরোপ থেকে আসা এসব ছেলেমেয়েরা দ্রুত উঠে আসছে। তবে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের অনেকেই ইউরোপীয় স্বজাতিদের আবার আশীর্বাদ মনে করেন। একসাথে অনেক বাংলাদেশীর আগমনে কমিউনিটি আরো শক্তিশালী হয়েছে মনে করেন তারা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!