জ্যামাইকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন : ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ায় ফিকে সকালের আনন্দ

ব্যাটিং দৈন্যর আরেকটি প্রামাণ্য চিত্র দেখিয়ে জ্যামাইকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। যদিও দিনের চা-বিরতির আগেও দলকে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং। বিরতির পরেও সেটি ধরে রেখেছেন দুই ব্যাটসম্যান। দুইজনেই ঠাণ্ডা মাথায় নিজেদের সাবলীল ব্যাটিংটাই করছিলেন। একপাশে তামিম নিজের রানের চাকা সচল রাখলেও মুশফিককে চাপেই রেখেছিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কিমো পল, কামিন্স মিলে।

তবুও তামিমকে নিয়ে রান ঠিকই বের করে নিয়েছেন মুশফিক। কিন্তু দলীয় ১১৭ রানে তামিম বিদায় নিলে সব হিসাব-নিকাশ যেন উলটপালট হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ৪৭  রানে কিমো পলের বলে বোল্ড আউট হন তামিম।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে অভিষিক্ত পলের বলে আউট হন তামিম। ছবি : এএফপি

তার বিদায়ের পরের বলে বিদায় নেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। কিমো পলের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।

অবশ্য নুরুলও বেছে নিয়েছিলেন লিটনের পথই। পর্যাপ্ত রিভিউ থাকা স্বত্বেও তামিমের সাড়া না পেয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরতে হয়েছিলো লিটনকে। ঠিক একইভাবে রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন নুরুল। পলের করা বল ইমপ্যাক্ট আউটসাইড হয়। ড্রেসিং রুমে রিভিউ না নেওয়ার আক্ষেপ নুরুলকে পুড়তেই পারে। একা লড়ে যাওয়ার কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন মুশফিক।

তবে সেটিও থামে দলীয় ১২৮ রানে। উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের করা বাউন্সার মারতে গিয়ে শাই হোপের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। তিনি বিদায় নেন ২৪ রান করে। শেষদিকে লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার করা ১৮ রানে শেষ পর্যন্ত ১৪৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। হোল্ডার একাই নেন পাঁচটি উইকেট। আবু জায়েদকে ফিরিয়ে এই বছরে নিজের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তিনি।

উচ্ছ্বসিত হোল্ডার । ছবি: উইন্ডিজ ক্রিকেট

অনেকেই ধারণা করেছিল আবারো বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাবে উইন্ডিজ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅনে না পাঠিয়ে লিড নেয় উইন্ডিজরা। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে তারা।

এমন উইকেটে উইন্ডিজরা বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে না পাঠালে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। উইকেটে সবুজ ঘাসের কার্পেট নেই। নেই সুইং আর বাউন্সের বাড়াবাড়ি। বোলারদের জন্য সহায়তা কিছু আছে। তবে ব্যাটসম্যানদের টিকে থাকার সুযোগও আছে। খুব কঠিন নয় রান করা। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে কে বলবে সেসব! ছন্নছাড়া ব্যাটিং এখানেও। অ্যান্টিগার মতো দুরূহ নয় উইকেট। তবু ধুঁকলেন ব্যাটসম্যানরা।

দ্বিতীয় দিনের শেষদিকে সান্ত্বনার পুরস্কার হিসেবে একটি উইকেট পান সাকিব। শেষ পর্যন্ত এক উইকেট হারিয়ে ১৯ রান সংগ্রহ করে উইন্ডিজ।

অথচ দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দুর্দান্ত বোলিং করেছে বাংলাদেশ। আগের দিনের ৪ উইকেটে ২৯৫ রান নিয়ে খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাকি ৬ উইকেটে ৫৯ রান যোগ করতে পেরেছে। অলআউট হয়েছে ৩৫৪ রানে। কি আনন্দময় একিট সেশন উপহার দেন বাংলাদেশ বোলাররা।

দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই আবু জায়েদকে কাজে লাগিয়েছেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন তরুণ পেসার। দিনের তৃতীয় ওভারে জায়েদের লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটকিপার নুরুল হাসানের ক্যাচ হয়ে ফেরেন আগের দিনের ৮৬ রানে অপরাজিত হেটমায়ার।

অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান ভালোই দিয়েছেন আবু জায়েদ। ছবি : এএফপি

এরপরই শুরু ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসা। খানিক পর জায়েদ ফেরান রোস্টন চেজকেও (২০)। কাল দারুণ বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজ ১০৭তম ওভারে পরপর দুই উইকেট তুলে নিলে ৭ উইকেটে ৩১৮ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হুট করে হয়ে যায় ৯ উইকেটে ৩১৯। হ্যাটট্রিক না হলেও ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৫ উইকেট পেয়েছেন এই তরুণ অফ স্পিনার।

চমৎকার বোলিং নৈপুণ্যে মিরাজ পেয়েছেন ৫ উইকেট, এমন উল্লাস তাঁকেই তো মানায়। ছবি: এএফপি

সকাল সকাল ২৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানো উইন্ডিজের অলআউট হওয়া যখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখন শেষ উইকেটে হোল্ডার-গ্যাব্রিয়েল জ্বালাতে শুরু করলেন বাংলাদেশকে। এই জুটিতে যোগ করা ৩৫ রানের সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর সাড়ে তিন শ পার হয়। গ্যাব্রিয়েলকে বোল্ড (১২) করে গলার কাঁটাটা নামিয়ে ফেলেন আবু জায়েদ। অ্যান্টিগায় অভিষেক টেস্টে ভালো করার পর ২৪ বছর বয়সী পেসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন জ্যামাইকাতেও। আজও পেয়েছেন ৩ উইকেট।

তবে বাংলাদেশ বোলিংয়ের এমন আলো যে নিভিয়ে দিয়েছে ব্যাটিংয়ের কালো! দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং দিয়ে কি ব্যাটসম্যানদের ব্যাট জ্বলে উঠবে? এ প্রশ্নের উত্তর সময় হলেই মিলবে। তবে এখন বোলারদের উপর আবার ধারাবাহিক ভালো বোলিংয়ের গুরু দায়িত্ব বর্তিয়েছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৫৪

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬.১ ওভারে ১৪৯ (তামিম ৪৭, লিটন ১২, মুমিনুল ০, সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ২৪, সোহান ০, মিরাজ ৩, তাইজুল ১৮, কামরুল ০*, আবু জায়েদ ০; গ্যাব্রিয়েল ২/১৯, পল ২/২৫, কামিন্স ১/৩৪, হোল্ডার ৫/৪৪, চেইস ০/২২)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৯ ওভারে ১৯/১ (ব্র্যাথওয়েট ৮, স্মিথ ৮*, পল ০*; আবু জায়েদ ০/৮, মিরাজ ০/৮, রাব্বি ০/৩, সাকিব ১/০)।

শেয়ার করুন: