ভাঙাচোরা দয়ামীর-দেওয়ান বাজার সড়কে হাজার হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ

বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার জনসাধারণের চলাচলের অন্যতম রাস্তা দয়ামীর-দেওয়ানবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক ভাঙনের কারণে বর্তমানে বিপদজনক অবস্থা ধারণ করছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী সাধারণসহ স্থানীয় এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন । সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত ও অসংখ্য খানাখন্দ তৈরির কারণে সড়কটি যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দয়ামীর-দেওয়ান বাজার সড়কের খসরুমরা নামক স্থানে এভাবেই গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ী। ছবি: বালাগঞ্জ প্রতিদিন

দীর্ঘদিন যাবত সড়কটি এই বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও তা যেন কারও নজরে আসছে না। সংস্কারের মাধ্যমে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী লোকজন। সরেজমিন পরিদর্শন ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানাযায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দয়ামীর থেকে দেওয়ানবাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এ সড়ক প্রায় দু’বছর আগে সংস্কার করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ এবং ব্যবসায়ীদের রড, বালি ও পাথর বোঝাই বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রতনপুর গ্রামের পশ্চিম এলাকায় দয়ামীর-দেওয়ান বাজার সড়কের ভগ্নদশার দৃশ্য। ছবি: বালাগঞ্জ প্রতিদিন

এ সড়কের বড় ধরণের গর্ত হওয়ায় সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হলেই পানি জমা হয়ে অটোরিকসা (সিএনজি) মটর সাইকেল, প্রাইভেটকার এমনকি কোন কোন সময় মালবাহী ট্রাকও আটকা পড়ে যায় গভীর গর্তের মধ্যে। ফলে নারী, শিশু, সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

একসময় এ সড়কের একপ্রান্তে আতা উল্বা গ্রাম নামক স্থানে ভারী যানবাহন প্রবেশ ঠেকাতে একটি গেট থাকলেও স্বার্থানেশী-প্রভাবশালীরা সেই গেইট-টি তুলে দিয়েছেন। তবে সব চেয়ে বেহাল অবস্থা এই সড়কের স্থানীয় ইছামতি গ্রাম হতে মাদ্রাসাবাজার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার ।

আলী খাঁ ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় দয়ামীর-দেওয়ান বাজার সড়কের এমনই বেহাল দশা। ছবি : বালাগঞ্জ প্রতিদিন

এতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এছাড়া এই সড়কে অটোরিকশা চালিয়ে অনেকেই সংসার চালান। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে তারাও আর্থিক দৈন্যতায় ভোগছেন। উপায়ান্তর না দেখে মাঝে মধ্যে এই চালকরা নিজেদের টাকায় শ্রমিক দিয়ে বড় বড় গর্তে মাটি ভরাট করে গাড়ি সড়কে তুললেও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। আলাপকালে এ সড়কে চলাচলকারী অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক মো. আব্দুল হান্নান, আবুল কালাম ছানা, ফখরুল ইসলাম, মিনিবাস চালক শাহ মো. জালাল এবং ট্রাক চালক মো. ছালামত খান বলেন, বড় বড় গর্ত আর ভাঙনের কারণে প্রতিদিন গাড়ীতে কাজ করাতে হয়, গাড়ী বিকল হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে করে আমাদের নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। অনেক সময় বাকবিতর্ক এবং যাত্রীদের সাথে অযথা ঝগড়া বিবাদ এমনি কি মাঝে মধ্যে ডাকাত-ছিন্তাই কারীদের কবলেও পড়তে হয়।

সিলেট জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিএনজি) (৭০৭)’র মাদ্রাসা বাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এম আর ওয়ারিছ, সাবেক সভাপতি মো. সেবুল মিয়া, মেম্বার মো. সমুজ মিয়া জানান, দফায় দফায় চালকদের পক্ষ থেকে টাকা তুলে শ্রমিক দিয়ে এ বেহাল সড়কের বড় বড় গর্তে মাটি ও ইট দিয়ে ভরাট করে গাড়ি সড়কে তুললেও বালি-পাথর বোঝাই বড় বড় ট্রাক এসে সব লন্ডভন্ড করে চলে যায়। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানান।

মাদ্রাসাবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস শহীদ, মো. নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের এ সড়ক দিয়ে পণ্য সামগ্রী আনা নেওয়া করতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে অধিক হারে আমাদেরকে পরিবহন ভাড়া বহন করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে তারা এ রাস্তা মেরামতের জন্য জোরদাবি জানান।

দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এম এ মালেক, ইউপি সদস্য ডা. আমির উদ্দিন রতন জানান, আনুুমানিক দু’বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ এবং ব্যবসায়ীদের রড, বালি ও পাথর বোঝাই বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরী বিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের মাধ্যমে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম মহসিন জানান, সড়কটি সংস্কারের বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে। অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার করুন: