লন্ডনে বসেই সে দিনটি অতিবাহিত করলেন আশরাফুল

মোহাম্মদ আশরাফুলের সাথে লেখক মো. রহমত আলী (ডানে)

লন্ডনে বসেই জীবনের বিশেষ মূহুর্তটি উপভোগ করেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। এখন তাঁর প্রত্যাশা তিনি আবারও ফিরে আসবেন ক্রিকেটে নিয়মিত ভাবে এবং দেশীয় ক্রিকেটের সাথে সাথে খেলবেন  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও। ভক্ত অনুরাগীরা আবারো তাঁকে বরণ করে নিবেন – এ প্রত্যাশা তাঁর।

সম্প্রতি শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলের পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা। শেষ হল দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার প্রহর। ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিষেধাজ্ঞা ছিল তাঁর। তবে সেখান থেকে মুক্তি মিলেছিল আরো দুই বছর আগে। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়াতে সম্পুর্ণ রুপে মুক্ত থাকছেন আশরাফুল। ফলে আবারও জাতীয় দল ও বিপিএলের হয়ে খেলতে পারবেন তিনি। এখন সে অভিপ্রায় নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও বর্তমান অবস্থায় সেটা অনেক দূরহ ব্যাপার, তবুও জাতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে তিনি প্রবল আশাবাদী।

সম্প্রতি লন্ডনে অনুশীলন কাজে ব্যস্ত মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছে এব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে পারি ইস্ট লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে। এ সময় এক আলাপচারিতায় আশরাফুল বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। এই দিনটার জন্য পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট কবে আসবে, আমি তখন সব ধরণের ক্রিকেটে ফিরতে পারবো। আমার জন্য জাতীয় দলে খেলার সুযোগ আবার সৃষ্টি হবে।’ সহজ-সরল ভাবে তিনি আরো বলেন, ‘আজ আব্বা বেঁচে থাকলে বেশি খুশি হতেন। আব্বা নেই দু’বছর হল। আমার ভক্তরা সহ সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভালো মতো ফিরতে পারি।’

২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞার খড়গ কিছুটা শিথিল হওয়ায় এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ক্রিকেটার আশরাফুল গেল দুই বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। ঢাকা প্রিমিরিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে ক্রিকেট খেলেছেন। তবে এবার জাতীয় দলে খেলবেন এমনটাই আশা করেন তিনি। অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ি ক্রিকেটার আশরাফুলের বিশ্বাস রয়েছে, তিনি জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘যদিও আমি শেষ দুই বছর প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলেছি। পাঁচ বছর আগে থেকেই ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবো। শেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলেছি। এবারও ঘরোয়া ক্রিকেটেও চূড়ান্ত প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি’।

২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক  টেস্টে ৬১ ম্যাচ খেলে ২৭৩৭ রান করেছেন। এছাড়াও ওয়ানডেতে ১৭৭ ম্যাচে করেছেন ৩৪৬৮ রান। ২০০৭ সালে টি-টোয়ান্টিতে অভিষেকের পর ২৩ ম্যাচে করেছেন ৪৫০ রান। তার সাথে রয়েছে আরো অনেক অর্জন।

কিন্তু বাংলাদেশের সফল এই ক্রিকেটার বর্তমানে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়াতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা। ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মতে, আশরাফুলের মুক্তি মিললেই যে এখনই সুযোগ মিলছে ব্যাপারটি এ রকম নয়। তাঁর দলে জায়গা পেতে আরো অনেকদিন লেগে যেতে পারে। এই মুহূর্তে যদি বলতে হয় তাহলে বলব, এই মুহূর্তে দলে কোনো জায়গা নেই। আমাদের যে ফিটনেস লেভেল আছে, এইচপিথেকে শুরু করে ‘এ’ দল ও জাতীয় দলের ফিটনেসের সাথে সে যুক্ত না। এই জায়গায় আসতে হলে তাকে কিছু সময় দিতে হবে। এই লেভেলটা যদি থাকে তাহলে চিন্তা করা যাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি না। সময় সুযোগ সৃষ্টি হলে দেখা যেতে পারে।

তবে নির্বাচকগণ যাই বলেন না কেন, ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ভবিষ্যতে জাতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী। সেই লক্ষ্যে বর্তমানে তিনি লন্ডনে নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত রয়েছেন। এক কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদিও আমি শেষ দুই বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছি। পাঁচ বছর আগে থেকেই ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশ দলের হয়ে আবারো খেলবো। শেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলেছি। এবারও ঘরোয়া ক্রিকেটে বাড়তি মনোযোগ থাকবে।আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্ঠা করবো। ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করলে আমার বিশ্বাস নির্বাচকরা জাতীয় দলের ব্যাপারে নিশ্চয় আমার কথা ভাববেন।’

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক, ইস্টউড অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত কলামিস্ট ও সম্পাদক মাসিক দর্পণ।
dorponmedia@yahoo.co.uk

শেয়ার করুন: