রেকর্ড জয়ে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শুরু

এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এই জয় দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়। বাইরে আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়েতে ১২১ রানে। এদিকে এই বিশাল জয়ের সুবাদে গ্রুপ ‘বি’তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠে এসেছেন মাশরাফি-সাকিবরা।

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে মাশরাফিরা মাঠ ছাড়লেন বিজয়ের হাসি হেসে। ছবি: এএফপি

আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের দেওয়া ২৬২ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে ১৩ রান তুললেও, এ গতি ধরে রাখতে পারেনি লঙ্কানরা। মুস্তাফিজের আঘাতে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর মাশরাফির জোড়া আঘাতে ৩২ রানে উপুল থারাঙ্গা, মেন্ডিসদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি।

সেই চাপের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৮ রানে ৪ উইকেট হা্রানোর পর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস লড়ে গেলেও বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম ওভারেই তাকে লেগ-বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরের পথ ধরান রুবেল হোসেন। এর কিছুক্ষণ বাদে মিরাজের বলে আউট হয়ে যান থিসারা পেরেরাও।

আর দলীয় ৬৯ রানে এর মধ্য দিয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে খেলা থেকে ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর লাকমালের ২০, দিলরুয়ান পেরেরার ২৯ রানের ইনিংস শুধুমাত্র হারের ব্যবধানই কমাতে সাহায্য করেছে লঙ্কানদের।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি, মুস্তাফিজ, মিরাজরা দুটি করে ও সাকিব, মোসাদ্দেক, রুবেল একটি করে উইকেট লাভ করেন।

এর আগে টস জিতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তের পর শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এই বিপর্যয় কাটিয়ে একটি ফাইটিং স্কোর দিতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কিন্তু প্রাথমিক ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, লাসিথ মালিঙ্গার করা প্রথম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানকে সাজঘরে ফেরালে চাপে পড়ে টাইগাররা।

এক দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিম! ছবি: এএফপি

এরপর ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তামিম ইকবাল কব্জিতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলে চাপের পরিমাণ আরও বেড়ে যায় দলটির। সেখান থেকে দলের চাপ সরিয়ে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে শতরান যোগ করে দলকে বড় সংগ্রহের পথ দেখান তারা।

শতরানের জুটি গড়ার পর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতক পূর্ণ করেন মোহাম্মদ মিঠুন। সতীর্থ ব্যাটসম্যানের দেখানো পথে হাঁটেন মুশফিকও। পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক। দুজন স্বাচ্ছন্দ্য খেলতে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে টাইগারদের আবারও বিপদে ফেলেন মালিঙ্গা। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই ৬৮ বলে ৬৩ রান করা মিঠুনের উইকেট তুলে নিলে ভাঙ্গে দুজনের মধ্যকার মূল্যবান ১৩১ রানের জুটির।

এরপর আবারও খেলায় ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের। দ্রুততম সময়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেনরা সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪২ রানে। সেখান থেকে দলের হয়ে একাই লড়ে যান মুশফিক। ক্রিজের এক প্রান্তে আশা-যাওয়ার মিছিল লেগে থাকলেও তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন তার নিজস্ব গতিতে।

সবার মতো শ্রীলঙ্কা দলও নিশ্চিত ভেবেছে তামিম আর নামছেন না । ছবি: এএফপি

শতক হাঁকিয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। এক পর্যায়ে ২২৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটলে সবাইকে চমকে মাঠে প্রবেশ করেন তামিম। হাতের চোটে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেও দল ও দেশের স্বার্থে তার এমন ভূমিকা আরও উজ্জীবিত করে মুশফিককে। তাকে সাথে নিয়ে শেষ উইকেটে ৩২ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ২৬১ রানের পুঁজি এনে দেন তিনি।

এক হাতে ইন্জুরি আক্রান্ত তামিমের ব্যাটিং। ছবি : টিভি থেকে নেওয়া

শেষ পর্যন্ত আউট হলেও ১৫০ বল খেলে ১৪৪ রান করেন মুশফিক। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পক্ষে এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১১ চার ও ৪ ছক্কায় এ ইনিংস সাজান তিনি।

লঙ্কান বোলারদের মধ্যে মালিঙ্গা তার বোলিং কোটার ১০ ওভার বল করে ২৩ রান খরচায় তুলে নেন সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট। তার পাশাপাশি উইকেটের দেখা পান ডি সিলভা-পেরেরাও। ডি সিলভা ২টি, পেরেরা, লাকমাল ও আপোনসোরা লাভ করেন একটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড-
বাংলাদেশ: ৪৯.৩ ওভারে ২৬১/১০।
তামিম ২(৪)*, লিটন ০(৪), সাকিব ০(১), মুশফিক ১৪৪(১৫০), মিঠুন ৬৩(৬৮), মাহমুদউল্লাহ ১(৪), মোসাদ্দেক ১(৫), মিরাজ ১৫(২১), মাশরাফি ১১(১৮), রুবেল ২ (১২), মুস্তাফিজ ১০(১১); মালিঙ্গা ১০-২-২৩-৪, ডি সিলভা ৭-০-৮৮-২।

শ্রীলঙ্কা:.৩৫.২ ওভারে ১২৪/১০।
থারাঙ্গা ২৭(১৬), মেন্ডিস ০(১), পেরেরা ১১(২৪), ডি সিলভা ০(৩), ম্যাথিউস ১৬(৩৪), শানাকা ৭(২২), পেরেরা ৬(৯), দিলরুয়ান ২৯(৪৪), লাকমাল ২০(২৫), আপোন্সো ১(৩১), মালিঙ্গা ৩(৩)*; মাশরাফি ৬-২-২৫-২, মুস্তাফিজ ৬-০-২০-২, মিরাজ ৭-১-২১-২, সাকিব ৯.২-০-৩২-১-; রুবেল ৪-০-১৮-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৮-১।

ফলাফলঃ বাংলাদেশ ১৩৭ রানে জয়ী।

শেয়ার করুন: