শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

জানাজায় মানুষের ঢল

চোখের জলে প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানকে শেষ বিদায় : শোকাহত সিলেটবাসী



এমন জীবন তুমি কর হে গঠন , মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন। শোকাহত সিলেটবাসী চোখের জলে প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ১৯ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানের জানাজা শেষে তাঁরই হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের ছেলে মুফতি আব্দুর রহমান। জানাজায় ছিল মানুষের ঢল। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ ক্ষণজন্মা এ ইসলামি ব্যক্তিত্বকে হারানোর বেদনায় শোকাহত।

শুধু আলেম-উলামারাই নয়, আওয়ামী লীগ. বিএনপি, জাপা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ সকল রাজনৈতিক দল ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে সকল পর্যায়ের রাজনীতিবিদরাও ছিলেন অশ্রুসিক্ত। দেশের অসংখ্য আলেম-উলামার উস্তাদ, সিলেট নগরীর জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির, ইসলামি আন্দোলনের অগ্রসৈনিক আল্লামা হাবিবুর রহমানকে দেখতে ও শেষ
বিদায় জানাতে শোকগ্রস্ত সিলেটবাসী সকাল থেকেই জমায়েত হতে থাকেন। জুম্মার নামাজের পর পরই কানায় কানায় ভরপুর হয়ে উঠে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ।  জানাজার পূর্বে বিশাল ময়দান মুসল্লিদের উপস্থিতিতে টইটম্বুর। মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় কাতারবন্দী হয়ে চৌহাট্রা পয়েন্ট পর্যন্ত চলে যায় মুসল্লিদের কাতার। জানাজায় লক্ষাধিক শোকার্ত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।

জানাজার আগে মরহুমের স্মৃতি চারণ করে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন আল্লামা রশিদুর রহমান শায়খে বরুণী, সিলেট সিটি করপোরেশন’র মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ, সাবেক মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বাবরুল হোসেন বাবুল, জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন, গহরপুর জামিয়ার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, জমিয়ত নেতা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফি, বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী, জামেয়া মাহমুদিয়া সুবহানীঘাটের মুহতামিম মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী, জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া, কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহ সভাপতি ও জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরার মহাপরিচালক শায়খ যিয়া উদ্দীন, রেংগা মাদ্রাসার শাখুল হাদিস মাওলানা শিহাব উদ্দিন, দরগা মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, রেঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, , ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক, মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম প্রমূখ।

সংক্ষিপ্ত জীবনী : জন্ম ১৯৪৯ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘনশ্যাম গ্রামে।

লেখাপড়া : কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি দেশের প্রাচীনতম আলিয়া গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ি মাদ্রাসায় ফাজিল পর্যন্ত পড়েন। পরে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন।

কর্মজীবন : ১৯৭৪ সালের জুন মাসে দেশের শীর্ষ আলেমদের তত্ত্বাবধানে সিলেটের কাজিরবাজার এলাকায় সুরমা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসা। দারুল উলুম দেওবন্দের নীতিতে পরিচালিত এই মাদ্রাসা শুরু থেকেই সিলেবাসে বাংলা, ইংরেজিসহ জাগতিক বিষয় যুক্ত করে নতুন ধারার সূচনা করেন। কওমি মাদ্রাসার প্রধানের পরিচয় মুহতামিম হলেও তিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন প্রিন্সিপাল হিসেবে।

রাজনীতি : ২০১২সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহঃ) ওফাতের পর থেকেই তিনি দলের আমির নিযুক্ত হন। এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালে দেশের নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে সারাদেশে আলোচিত হন প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। তার সংগঠন সাহাবা সৈনিক পরিষদের ব্যানারে সিলেটে অসংখ্য সভা-সমাবেশ করেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন তসলিমা নাসরিন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!