মেয়রের আহ্বানে সাড়া দেননি শিক্ষার্থীরা : দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা

রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন প্রগতি সরণির এই জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হচ্ছিলেন আবরার। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর রামপুরা সড়কে বেপরোয়া বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ঘাতক সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবিসহ ১২ দফা দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা । আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিইউপি শিক্ষার্থী শামীম আল হাসান এসব দাবি ঘোষণা করেন। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো আশ্বাস শুনতে চাই না। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন চাই।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় অবোরোধকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যান ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া যত দ্রুত সম্ভব মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। সেইসঙ্গে লিখিতভাবে দাবিগুলো উত্থাপনের অনুরোধ জানান।

মেয়রের অনুরোধে বিইউপি শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম দাবিগুলো হচ্ছে-
১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।

২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. আজ থেকে ফিটনেস বিহীন বাস ও লাইসেন্স বিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।

৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রীছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং

৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

৯.. সুপ্রভাত ও জাবালে নূরসহ যেসব বাস আজ ও এর আগে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেসব বাসের রুট পারমিট বাতিল।

১০. চালক হেলপারের ডোপ টেস্ট।

১১. বাসসহ গণপরিবহনের চালক-হেলপারের আইডি কার্ড ভিজিবল করা।

১২. বসুন্ধরা আবাসিক/যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জেব্রা ক্রসিংসহ নিহত আবরারের নামে ফুটওভার ব্রিজ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে।

মেয়র ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান। এসময় ঘটনাস্থলে যান বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব সারোয়ার। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যে দাবিগুলোতে আইনি জটিলতা আছে সেগুলোর আইনগত দিক দেখে ব্যবস্থা নেবেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবী বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আন্দোলরত পুরো এলাকা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অবরোধ নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অবরোধে বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা-গুলিস্তান রুটের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম আবরার আহমেদ চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিইউপির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

দুপুর দেড়টার দিকে মিরপুর সেনানিবাসের মধ্যে বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫, এডিবি গ্রেড মসজিদের ইমাম মওলানা তাজুল ইসলাম এতে ইমামতি করেন।

এ সময় আবরার আহমেদের বাবা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবিদ আহমেদ চৌধুরী, বিইউপির ভিসি মেজর জেনারেল মো. এমদাদ-উল বারী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আবরার আহমেদের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আত্মীয়-স্বজন জানাজায় অংশ নেন। আবরারকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ওই শিক্ষার্থী রাস্তা পারাপারের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আবরার বসুন্ধরা এলাকায় থাকতেন। আবরারের লাশ রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন: