মোগলাবাজারে প্রেমের বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে গৃহবধূর মৃত্যু, গ্রেফতার ৪

নিহত শাম্মী (বায়ে) ও স্বামী মো: আবুল হোসাইন

রাজা সায়মন : মোগলাবাজারে প্রেমের বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে শাম্মী আক্তার নামের এক গৃহবধুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এই মৃত্যু আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন!

তবে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন নৈখাই (কোনারচর) এলাকায় নিহত মোছাঃ শাম্মী আক্তারের পিতা আব্দুল আজিজ ওরফে চুনু মিয়া গতকাল বিকাল ৫ ঘটিকায় এই প্রতিবেদককে বলেন- আমার মেয়ে শাম্মী আক্তার (২১) এর সহিত প্রেমের সম্পর্ক গড়িয়া তুলিয়া তাহারা উভয়ে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক প্রায় ৬ মাস হলো পাচঁ লক্ষ টাকা দেনমোহর সাব্যস্ত করিয়া বিবাহ করে।

কিছুদিন আগে (প্রায় ১৫ দিন) আমার মেয়ের জামাই মো: আবুল হোসাইন (২৫) তাহার পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখাইয়া কিছুদিন আমার মেয়েকে আমাদের বাড়ীতে রাখে। আবার গত ৪ এপ্রিল আমার মেয়ের জামাই মোঃ আবুল হোসাইন আমার মেয়ে শাম্মীকে নিয়া তাহার বাড়ীতে যায়।

আমার মেয়ে শাম্মী তাহার স্বামীর বাড়ী যাওয়ার পর থেকেই সামাজিক ভাবে কোন ধরনের অনুষ্ঠান না করিয়া ও কোন প্রকার ফার্নিচার ছাড়াই স্বামীর বাড়ীতে পাঠাইয়া দেওয়ার কারনে- মেয়ের জামাই, মেয়ের ভাসুর, মেয়ের শশুর-শাশুড়ি সহ পরিবারের সবাই মিলে আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা সহ বিভিন্ন অপমান জনক কতাবার্তা বলিতে থাকে এবং নতুন ভাবে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য কমিউনিটি সেন্টারের ভড়া ও ফার্নিচার বাবদ ৩ লক্ষ টাকা আমার নিকট হইতে নিয়া দেওয়ার জন্য আমার মেয়েকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে।

অত:পর ঘটনার দিন দুপুর আনুমানিক ১ ঘটিকার সময় আমার মেয়ে তাহার ব্যবহৃত মোবাইল হইতে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে যে আমার মেয়ের জামাই সহ তাহার শশুর বাড়ির পরিবারের সকল লোকজন নতুন ভাবে তাহাদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য কমিউনিটি ভাড়া, ফার্নিচার ও বিদেশ যাওয়া বাবদ- ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য স্বামী ও ভাসুর সহ ঘরের সকলে মিলে আমার মেয়েকে ক্রমাাগত চাপ দিচ্ছে এবং তুুচ্ছ তাচ্ছিল্য অপমান জনক কতাবার্তা বলে অত্যাচার করছে। তখন আমার মেয়েকে বলি- আজ ১ সপ্তাহ হলো হালের গরু বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা দিলাম তারপরেও অত্যাচার করেরনি। একটু ধৈর্য্য ধরার জন্য বলো, কয়েকদিনের মধ্যেই জায়গা জমি বিক্রি করে যা পারি টাকা নিয়ে আসতেছি। তারপরও তারা আমার মেয়েকে জোরপূর্বক বিষ খাবাইয়া পরিকল্পিত হত্যা করেছে- আমি এর বিচার চাই।

এদিকে মামলার কথা বলতেই নিহত শাম্মীর বাবা বলেন- মোগলাবাজার থানার ওসি আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন এবং বলেছেন আপনার মেয়ের বিষয়ে মামলা করবেন কি না! সাথে সাথে আমি বলেছি আমার মেয়েকে তার শশুর বাড়ীর লোকেরা বিষ খাবাইয়া মেরে ফেলেছে। তখন ওসি সাহেব নাম জানতে চাইলে আমি নাম বলি এবং ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন- শাম্মীর স্বামী আবুল হোসাইন, ভাসুর রাহিম, শশুর আব্দুল লতিফ, শাশুরী মরিয়ম বেগম শিল্পী।

নিহত শাম্মীর মা বলেন- আমার মেয়ের বিয়ের প্রায় ছয় মাস হলো। বিয়ের প্রায় ১ মাসের পর থেকেই ৩ লক্ষ টাকার জন্য অত্যাচার করে আসছে। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো। আজ থেকে সাপ্তাহ খানিক আগে আমাদের হালের গরু বিক্রি করে এবং আরো কিছু ধার করে ৬০ হাজার টাকা দিছি। আর বলেছি- জায়গা বিক্রি করে যা পাই ১০/১৫ দিনের মধ্যে টাকা নিয়ে তোমাদের বাড়িতে যাবো। কিন্তু আমাদের বাড়ী থেকে ৭/৮ দিনের ভিতরেই আমার মেয়েকে নিয়ে তারা বিষ খাবাইয়া মেরে ফেলেছে। আমার মেয়ের পেটে ৩ মাসের সন্তান ছিলো, তারও মৃত্যু হলো। আমিও এর বিচার চাই।

নিহত শাম্মীর চাচারা বলেন আমরা শাম্মীর শশুর বাড়ির আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জেনেছি- আমাদের ভাতিজিরে প্রায় সময় অত্যাচার ও মারধর করে, চিৎকার শুনে পাশে গেলে শাম্মীর শশুর ঘরের সবাই বাধা দিলে তারা চলে যায়। বাড়ির আশপাশের কারো সাথে শাম্মীর স্বামীর ঘরের কোনো ভালো সপর্ক নেই। আমদের দৃঢ় বিশ্বাস- আমাদের মেয়েকে পরকল্পিত ভাবে বিষ খাবাইয়া হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই পরিকল্পিত হত্যার সঠিক বিচার চাই। শাম্মীর শশুর বাড়ির আশপাশের লোকেরাও বলেন- শাম্মীর এই মৃত্যু আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যা এর সঠিক বিচার হোক।

উল্লেখ্য, নিহত শাম্মীর শশুর বাড়ি – নৈখাই (কোনারচর) গ্রামের মোগলাবাজার থানাধীন সিলেট জেলায়। তার স্বামীর নাম মো: আবুল হোসাইন (২৫) ও স্বামীর পিতার নাম আব্দুল লতিফ।

শাম্মীর বাবার বাড়ি – মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার নিজগাও (চেলারচক) গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল আজজ (চুনু মিয়া)।

শেয়ার করুন: