সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের ওয়ান ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন!



সিলেট ওয়ান ব্যাংকের ইসলামপুর শাখা হতে লণ্ডন প্রবাসী এক গ্রাহকের ৭৬ লক্ষ টাকা জালিয়াতি করে উত্তোলন করেছেন একই ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা। পরে তাকে বরখাস্ত ও করেছে ব্রাঞ্চ। ভুক্তভোগী লণ্ডন প্রবাসী গত ৩১ ডিসেম্বর লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, বরখাস্তকৃত ঐ কর্মকর্তা জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করেই ক্ষান্ত হননি উল্টো তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করে ও তাকে হয়রানি করছেন এবং জীবননাশের হুমকিও প্রদান করছেন। বর্তমানে এ হয়রানিমূলক মামলা মোকাবিলার জন্য তাকে দেশে যেতে হচ্ছে যেখানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী লণ্ডন প্রবাসী রউফ আব্দুর রউফ জানান ২০১২ সালে পারিবারিকসূত্রে পরিচয়ের মাধ্যমে সিলেটের ইসলামপুর ব্রাঞ্চের সেকেন্ড অফিসার মোঃ সরফরাজ আলীর সাথে পরিচয় হওয়ার পর তার অনুরোধে তিনি অন্য ব্যাংক থেকে তার কষ্টার্জিত সঞ্চিত ৩০ লক্ষ টাকা ওয়ান ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় জমা করেন। পরবর্তীতে লণ্ডনে এসে আরো ৪৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ওয়ান ব্যাংকে জমা রাখেন।

২০১৯ সালে তিনি দেশে গেলে ওই কর্মকর্তা ব্যাংকে না গিয়ে আগে তার সাথে দেখা করতে বললে তার সন্দেহ হলে তিনি সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পুরো ৭৬ লক্ষ টাকা ২৩টি চেকের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনি উত্তোলন করেছেন। পরের দিন ওই কর্মকর্তা তার পরিবার নিয়ে গ্রাহকের বাসায় গিয়ে অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন এবং ওই টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রাহক রাজি হলে প্রথম ২৬ লক্ষ টাকার একটি চেক দিলে ওই টাকা গ্রাহকের একাউন্ট এ জমা হয় কিন্তু আরো ৫ লক্ষ টাকার একটি চেক দিলে তা ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয় এবং গত ছয় মাস ধরে বাকি টাকা গ্রাহককে তিনি পরিশোধ করেননি। উল্টো ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত ৫ লক্ষ টাকা গ্রাহকের আপনজনদের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন অভিযোগ করে ওই চেক উদ্ধারের জন্য গ্রাহকের নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। এই ভূয়া মামলায় হাজিরা দিতে গ্রাহককে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যেতে হচ্ছে।

এদিকে টাকা না পেয়ে গ্রাহক ব্যাংক কর্মকর্তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগী লণ্ডন প্রবাসী দেশে গিয়ে আরো আইনি পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। এমতাবস্তায় তিনি বাংলাদেশের প্রশাসন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ সকল পক্ষকে তার আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত পেতে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এবং সকল প্রবাসীকে এ ধরণের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে অভিযোগ করেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো –

আমি আব্দুর রউফ। একজন সাধারণ প্রবাসী। অনেক কষ্ট ও শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকে সঞ্চয় করি। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সফরকালে আমাদের পারিবারিকসূত্রে পরিচয় হয় ওয়ান ব্যাংক সিলেটের ইসলামপুর ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা (সেকেন্ড অফিসার) মোঃ সরফরাজ আলীর সাথে। আমার সঞ্চিত অর্থের ব্যাপারে জানতে পেরে তিনি আমাকে তাঁর ব্যাংকে এই অর্থ ফিক্স ডিপোজিট করার ব্যাপারে অনুরোধ জানান। তাঁর অনুরোধে আমি রাজি হয়ে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমার অগ্রণী ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ থেকে ৩০ লাখ টাকা ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখায় জমা রাখি। ওয়ান ব্যাংক থেকে আমাকে একটি চেক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে লণ্ডনে এসে আমি ধাপে ধাপে আরো প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওয়ান ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ, আমি গত বছর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সফরে গেলে দেশে পৌঁছার একদিনের মাথায় ওয়ান ব্যাংকের অফিসার মোঃ সরফরাজ আলী আমাকে বার বার ফোন করে অনুরোধ জানান, ওয়ান ব্যাংকে যাওয়ার আগেই যেনো তিনি আমার সাথে দেখা করার সুযোগ পান। তাঁর এই কথায় আমার সন্দেহ হলে আমি তাঁর সাথে সাক্ষাতের আগেই ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি মোঃ সরফরাজ আলী আমার নামে ব্যাংক থেকে আরেকটি চেক ইস্যু করে বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে পুরো ৭৬ লাখ টাকা ২৩টি চ্যাকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই তিনি এই অর্থ উত্তোলন করেন।
ব্যাংকের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর আমি রীতিমতো হতবাক হয়ে যাই। মনে অত্যন্ত বেদনা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি ।

যাইহোক, ওই দিনই সন্ধ্যায় আমার বাসায় জালিয়াত মোঃ সরফরাজ আলী, তাঁর স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাকে নিয়ে হাজির হয়। সে স্বীকার করে, ওই অর্থ সে-ই চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছে। এ সময় সে আমার অর্থ ফিরিয়ে দিতেও সম্মতি জানায়। এবং এই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করে।
তাঁর স্ত্রী, পিতা-মাতার অনুরোধের প্রেক্ষিত্রে আমি রাজি হলে সে আমাকে ২৬ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করে। ওই চেকটির অর্থ ব্যাংকে জমা হয়। এর সাথে আরো একটি ৫ লাখ টাকার চেক দিয়ে বলে এটি আমি যেনো লণ্ডনে পৌঁছার পর ব্যাংকে জমা রাখি। বাকি অর্থ সে ৬ মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

আমি ৫ লাখ টাকার চেকটি আমার বোন জামাইকে দিয়ে আসি জমা দেওয়া জন্য। পরবর্তীতে এই চেকটি ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখিত হয়। এরি মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধের ৬ মাস পেরিয়ে গেলে তাঁর সাথে বার বার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও কোন সদুত্তর না পেয়ে আমি ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশে গিয়ে সিলেটে আইনজীবি ইশতিয়াক আহমেদ জায়গিরদারের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ প্রদান করি।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি আমি ওয়ান ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য। এই তদন্ত এখন পরিচালনা করছে ওয়ান ব্যাংক। এদিকে ইতোমধ্যে এসব ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে, ওয়ান ব্যাংক জালিয়াত অফিসার মোঃ সরফরাজ আলীকে বরখাস্ত করে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, ব্যাংক থেকে প্রত্যাখাত ৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধারের জন্য সে আমার বিরুদ্ধে উল্টো সিলেট মাজেস্ট্রেট কোর্টে প্রতারণা মামলা দায়ের করে। সে জানায়, ৫ লাখ টাকা নাকি সে আমাকে লণ্ডনে তাঁর আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে নগদ পরিশোধ করেছে। এখন সে তাঁর চেক দাবি করছে। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি এই চেক আদায়ে আমাকে চাপ প্রয়োগ করলে আমার বোন জামাইর মাধ্যমে চেকটি থানার ওসিকে হস্তান্তর করি।
তার ভূয়া এই মামলায় এখন আমাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে সিলেটে গিয়ে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মাজেস্ট্রেট কোর্টে হাজির হতে আমাকে দেশে যেতে হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, আমার অর্থ ফেরত পেতে সকল ধরনের আইনী পদক্ষেপ নিতে আমি রাজি আছি। কিন্তুু আমি আশঙ্কা করছি তাঁর পরোক্ষ ভয়-ভীতির কারণে। সে হয়তো অর্থ ফেরত না দিয়ে আমার জীবন নাশের ষড়যন্ত্র করতে পারে। এমতাবস্থায় আমি প্রশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কর্তৃপক্ষ যেনো তাঁর কাছে আমার পাওনা ৫০ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেন এবং এই জালিয়াতের মুখোশ উম্মেচন করেন সমাজে। যাতে আমার মতো আর কেউ সরলতার সুযোগে প্রতারিত না হন।

ধৈর্য্য ধরে আমার বক্তব্য শুনার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!