প্রফেসর নন্দলাল শর্মা

আনোয়ারায় উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচন বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গভীরতা

আনোয়ারায় উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচন নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ (বামে) ও লেখক প্রফেসর নন্দলাল শর্মা

আব্দুর রশীদ লুলু পেশায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক, নেশায় সাহিত্যসাধক, সমাজসেবক ও নিসর্গপ্রেমী। মানবকল্যাণে আত্মনিবেদিত এই আলোকিত ব্যক্তিত্ব ১৪ বছর ধরে প্রায় নিয়মিতভাবে ‘আনোয়ারা’ নামে একটি সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা, প্রকাশ ও প্রচার করে যাচ্ছেন। সাময়িকীটির এ পর্যন্ত পঞ্চাশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি সংখ্যা আনোয়ারাতে কিছু প্রাজ্ঞবচন উদ্ধৃত হয়ে থাকে।

আনিসুল আলম নাহিদ পঞ্চাশ সংখ্যা ‘আনোয়ারা’ থেকে প্রাজ্ঞবচনগুলো সঙ্কলিত করে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। গ্রন্থটির নাম ‘আনোয়ারায় উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচন’। এটি নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। পঞ্চাশ সংখ্যা আনোয়ারাতে উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচনগুলো পাঠক একই মলাটের ভেতরে পাচ্ছেন।

মহৎ ব্যক্তিরা মাঝেমাঝে কিছু মন্তব্য করেন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। তৃতীয় নয়নে তাঁরা যা অনুভব করেন, তাই তাঁরা মাঝেমধ্যে লিপিবদ্ধ করেন। জীবন জিজ্ঞাসার এই অভিব্যক্তিগুলো নিঃসন্দেহে অতি মূল্যবান। এগুলো তরুণ শিক্ষার্থীদের অবশ্য পাঠ্য। কারণ যারা আগামী দিনে জাতির কর্ণধার হবেন তাদের জ্ঞানবিজ্ঞানের নানা শাখা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। বয়স্কদের জন্যও এসব প্রাজ্ঞবচন সমান উপকারী। কারণ একজন চিন্তাবিদের মননচর্চার
স্বর্ণফসল হচ্ছে এসব বচন। তাই এসব বচন জীবনে সর্বদা কার্যকর। কোনো লেখক কোন রচনায় কোন মূল্যবান কথাটি লিখেছেন বা কোন বক্তৃতায় কোন মূল্যবান কথাটি বলেছেন তার সম্পূর্ণ অনুসন্ধান করা কারো পক্ষে সম্ভবপর নয়। তাই একত্রে অনেক বচন হাতে পাওয়া পাঠকের জন্য আনন্দের বিষয়।

বিশ শতকের ষাটের দশকে ‘বাণী চিরন্তনী’ নামে একটি গ্রন্থ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার জানা মতে আমাদের দেশে এটিই এধরনের প্রথম গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে উদ্ধৃতিগুলোকে বিষয়ভিত্তিক ভাবে সাজানো হয়েছিল। আনোয়ারায় উদ্ধৃত বচনগুলোকে বিষয়ভিত্তিক সাজানো হয়নি, সম্ভবত সংখ্যা (ভলিউম) ভিত্তিক সাজানো হয়েছে। বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো হলে পাঠক অধিক উপকৃত হতেন। তবে একটি সাময়িকীতে উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচন-এর এটিই সম্ভবত প্রথম সংকলন। কাজেই এর ব্যবহারিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বইটি যত বেশি সংখ্যক পাঠকের হাতে যাবে ততই মঙ্গল।

আশা করি এই পুস্তিকা পাঠে সকল শ্রেণীর পাঠকই উপকৃত হবেন। কারণ এতে আছে চিন্তার খোরাক আর ‘বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গভীরতা’। এসব বচন পাঠে আমাদের চঞ্চল মন শান্ত হবে এবং নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে। চরিত্র গঠনের জন্য এবং সুস্থ পবিত্র জীবন যাপনের জন্য এধরনের গ্রন্থপাঠের কেনো বিকল্প নেই। আর এর প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম। বইটি সকল শ্রেণীর পাঠকের আনুকূল্য লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি বইটির সঙ্কলক ও সম্পাদক এবং প্রকাশককে এই মহতী কাজের জন্য অভিনন্দিত করছি।

লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

শেয়ার করুন: