ঘুরে এলাম পরশমণি ফ্রুটস এণ্ড ফিস কর্ণার

ছবিতে: সামনে নিরঞ্জন দেবনাথ, বাম থেকে – সাদি, উদ্যোক্তা ও লেখক।

অনেকদিন থেকে কৃষি এবং হোমিওপ্যাথি নিয়ে ছিটে-ফোটা কাজ করলেও ২০২১ সালের শুরু থেকে এ দু’টো বিষয় নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। বিশেষত কোভিড-১৯ এর কারণে ইউনির্ভাসিটি ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অখন্ড অবসর প্রধানত এ দু’বিষয়ে কাজ তথা পড়াশোনা ও লেখালেখি করে কাটছে।উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে আনোয়ারা হোমিও হল গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ এবং রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগারের কৃষি কর্ণার বেশ সাহায্য করছে। আশার কথা, দু’টি বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে বেশ সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি দৈনিক সিলেটের ডাক, মাসিক হোমিও চেতনা এবং বালাগঞ্জ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত আমার লেখা ‘কৃষিতে হোমিওপ্যাথি’ দেশ-বিদেশের অনেকের মতো সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সম্মানিত চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, লেখক-সমাজসেবক জনাব ফজলুর রহমানের দৃষ্টি আর্কষণ করে। সে প্রেক্ষিতে বিগত ১১ জুন উনি আমাকে ফোন করেন এবং উনার প্রতিষ্ঠিত পরশমণি ফ্রুটস এন্ড ফিস কর্ণার ঘুরে আসার আমন্ত্রণ জানান। তারই প্রেক্ষিতে বিগত ১৬ জুন ঘুরে এলাম উনার বাগানে। সাথে ছিলেন সহযোগি সাদি ও স্থানীয় লাকেশ্বর বাজারের নাথ হোমিও হলের স্বত্তাধিকারী নিরঞ্জন দেবনাথ শশী।

বাগানে পা দেয়া মাত্র অনুভব করলাম এখানে উদ্যোক্তার সু-পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হচ্ছে বিরাট এক কর্মযজ্ঞ। জনাব ফজলুর রহমানের উদ্যোগে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক সদ্য প্রয়াত জনাব গিয়াস মিয়া সাহেবের সহযোগিতায় প্রায় ৫০ বিঘা জায়গা নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ভাতগাও ইউনিয়নের হায়দরপুরে অবস্থিত পরশমণি ফ্রুটস এন্ড ফিস কর্ণার।

খুব সম্ভব এটি সিলেটের সমতলের সবচেয়ে বড় ফলের বাগান। এই বাগানে চাষ হচ্ছে বলসুন্দরী জাতের প্রায় ২৫০০টি কুল, দার্জিলিং জাতের ১০০টি কমলা, হাড়িভাঙ্গা জাতের ১০০টি আমসহ বিভিন্ন জাতের লিচু, আম (বারি-১১, ব্যানানা, ব্রুনাই কিং ইত্যাদি), পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি। এছাড়াও এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে হলুদ তরমুজ, খেজুর, আঙুর ইত্যাদির চাষ হচ্ছে। এসব ফলের পাশাপাশি এখানে সাথী ফসল হিসেবে আদা ও হলুদের চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও এই বাগানে রয়েছে বিশালাকার তিনটি পুকুর যাতে উদ্যোক্তার আগ্রহ বৈচিত্রময় মাছ চাষের।

সমন্বিত এই খামারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা জনাব মশিউর রহমান (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ছাতক) জানান- আগামী মধ্য ডিসেম্বর থেকে কুলের ফলন তোলা শুরু হবে যা শেষ হবে ফেব্রুয়ারি নাগাদ, তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রথম বছর গাছপ্রতি ১৫-২০ কেজি কুল সংগ্রহ করা যাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের গাছ হতেও ফল সংগৃহিত হবে। আগ্রহী কৃষি উদ্যেক্তরা চাইলে কিছুদিন পর হতে এখান থেকে কুলের সায়ন সংগ্রহ করতে পারবেন।

নিজের খামার সম্পর্কে জানতে চাইলে জনাব ফজলুর রহমান জানান, একান্ত কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে এই বাগান শুরু করা। তবে এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে খামার পরিচালনা করবেন এবং ভবিষ্যতে বাগান আরো সম্প্রসারিত করার লক্ষ্য রয়েছে। উনার চাওয়া এই বাগান থেকে অণুপ্রাণিত হয়ে অন্যরাও যেন কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে একটু ফাঁক পেলে তিনি ছুটেন প্রিয় পরশমণি ফ্রুটস এন্ড ফিস কর্ণারে, নিজ হাতে পরিচর্যা করেন গাছের। উনার বিশেষ ইচ্ছে আমাদের কৃষি প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন উনার বাগান পরিদর্শনে আসেন।

নিঃসন্দেহে পরশমণি ফ্রুটস এন্ড ফিস কর্ণার অনন্য উদ্যোগ। দিনব্যাপি এই বাগান ঘুরে দেখে ভালো লাগলো। কৃষির প্রতি উনার আর্কষণ সত্যিই প্রশংসনীয়। কৃষি প্রিয় আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং এর সাফল্য কামনা করি।

আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে জনাব ফজলুর রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠান কৃষিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জাতীয় কৃষি পদকে ভূষিত হবেন । সেই শুভদিনের অপেক্ষায় রইলাম।

 

শেয়ার করুন: