মো. আব্দুর রউফ

আনোয়ারা ফাউণ্ডেশন: মানব ও প্রকৃতি কল্যাণধর্মী এক প্রতিষ্ঠান

 

আনোয়ারা ফাউন্ডেশনঃ ‘আনোয়ারা’ এক মা, যিনি সবেধন নীলমণি ছয় মাস বয়সের একমাত্র সন্তান আব্দুর রশীদ লুলুকে রেখে জগৎ ও জীবনের পাট চুকিয়ে অকালে পরপারে যাত্রা করেন। মায়ের আদর-সোহাগ বঞ্চিত সে শিশু তিলে তিলে বেড়ে ওঠে এক নিদারুণ অতৃপ্তি নিয়ে। কথায় আছে, “মা নাই গৃহে যার, সংসার অরণ্য তার।” সমাজ সংসারে বাস করেও মায়ের অনুপস্থিতি তথা স্নেহ বঞ্চনার পীড়া প্রতিনিয়ত আব্দুর রশীদ লুলু’র অন্তরে খচ্ খচ্ করে। সঠিক মাতৃ অবয়ব খানিও তার মনে নেই। শুধুমাত্র জনশ্রুতি ও কল্পনায় গড়া সেই মাতৃ অবয়বকে চির স্মরণীয় করে রাখার সদিচ্ছা থেকেই আনোয়ারা ফাউন্ডেশনের জন্ম ১লা জানুয়ারি ২০১৪ সালে, যা নির্জলা মাতৃভক্তির নামান্তর। এখানেই শেষ নয়, একই পটভূমিতে ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে স্থাপিত হয় হোমিও চিকিৎসা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আনোয়ারা হোমিও হল’ এবং শত সংখ্যা প্রকাশের প্রত্যয় নিয়ে ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয় শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা ‘আনোয়ারা’, যার প্রকাশনা এখনও অব্যাহত আছে।

ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ অকালে মারা যাওয়া মায়ের স্মারক হিসেবে ‘আনোয়ারা ফাউণ্ডেশন’ (আনোয়ারা হোমিও হল, যোবায়েদা ভিলা, দেওয়ান বাজার, ডাক: গহরপুর-৩১২৮, সিলেট, বাংলাদেশ, মোবা: ০১৯৮৯-৯৪৮৫১১) প্রতিষ্ঠিত হলেও এর গভীরে যে মহৎ উদ্দেশ্যটি প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত রয়েছে, তা হচ্ছে- মানব ও প্রকৃতির কল্যাণে সাধ্যমত কাজ করা। “জীবে দয়া করে যেইজন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”- এই জ্ঞানী প্রবচনের আলোকে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ প্রত্যাশায় সম্ভব সেবামূলক কাজ সম্পাদন করাই এ ফাউণ্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ফাউণ্ডেশনের অর্থায়নের উৎসঃ সাধারণত প্রতিটি জনকল্যাণমূলক সংস্থার ফাণ্ড পজিশন শুরুতেই ভাল থাকে অর্থাৎ জনকল্যাণের খাত যেমন অনেক, তেমনি প্রচুর টাকা পয়সা জোগান দেয়ার প্রয়োজন হয় এবং স্বাভাবিকভাবে বড় অংকের অর্থায়নের মাধ্যমে জনসেবা আঞ্জাম দেয়া হয়। তবে ‘আনোয়ারা ফাউণ্ডেশন’ এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রশীদ লুলু’র পারিবারিক ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে এর অর্থায়ন হয়, যা স্বাভাবিকভাবে তুলনামূলক ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যয়িত হয়। অবশ্য অর্থের মানদন্ডে মহৎ কাজের মূল্যায়ন হয় না। “ছোট বালুকার কণা, বিন্দু বিন্দু জল / গড়ে তুলে মহাদেশ, সাগর অতল।” সুতরাং ছোট ছোট মহৎ কাজের সমষ্টি বিরাটত্বের বিচারে একসময় মহাসাগরের বিস্তৃতির সাথে তুলনীয় হতে পারে।

শেষ কথাঃ আনোয়ারা ফাউণ্ডেশন কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশার সাথে সাথে আমিও প্রত্যাশা করি ছোট পরিসরে যাত্রা করা এ ফাউণ্ডেশন এক দিন মহীরূহ হবে। মানব ও প্রকৃতি কল্যাণে বহুমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে একদিন এ ফাউণ্ডেশনের নাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠাতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে। আমি সর্বান্তকরণে মরহুমা আনোয়ারা বেগমের রূহের মাগফিরাত এবং আনোয়ারা ফাউণ্ডেশনের সাফল্য কামনা করছি।

 লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

শেয়ার করুন: