আব্দুর রশীদ লুলু

স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবাদ-প্রবচন

 নিম-নিশিন্দা যথা/মানুষ কি মরে তথা। – খনা
অর্থাৎ নিম-নিশিন্দা গাছ পরিবেশের জন্য উপকারী। এমন পরিবেশে মানুষের বসবাসে সাধারণত: অসুখ-বিসুখ কম হয়। তাই ভালো থাকার জন্য বাড়ি-ঘরের আশে-পাশে নিম-নিশিন্দা গাছ লাগানো উচিৎ।
 বারো মাসে বারো ফল/না খেলে যায় রসাতল। – খনা
অর্থাৎ ভালো থাকার জন্য সারা বছরই ফল খাওয়া উচিৎ। বিশেষ করে সব মৌসুমেই সবারই কিছু না কিছু মৌসুমী ফল খাওয়া উচিৎ। তবে খেয়াল রাখতে হবে সে ফল যেন বিষমুক্ত ও নির্ভেজাল হয়।
 খালি পেটে জল/ভরা পেটে ফল। – খনা
অর্থাৎ খালি পেটে জল এবং ভরা পেটে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
 ভোরের হাওয়া/লাখ টাকার দাওয়া।
অর্থাৎ ভোরে ঘুম থেকে ওঠা এবং ভোরের নির্মল হাওয়া (বাতাস) উপভোগ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেক ক্ষেত্রে তা লাখ (লক্ষ) টাকার ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ দেয়।
 আলো-হাওয়া বেঁধো না/রোগ ভোগে মরো না।
অর্থাৎ বসত ঘরে আলো-হাওয়া খেলে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য দরকারী। ঘর-বাড়ি তৈরি এবং গাছ-পালা লাগানোর ক্ষেত্রে এ দিকে দৃষ্টি রাখা জরুরী। কেননা পর্যাপ্ত আলো-হাওয়া খেলে যায় না এমন বদ্ধ ঘর স্বাস্থ্য সম্মত নয়। এ রকম ঘরে বসবাস করলে সারা বছর অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে।
 তেল-তামাকে পিত্ত নাশ/যদি হয় তা বারো মাস। – খনা
অর্থাৎ সারা বছর (নিয়মিত/হর-হামেশা) তৈলাক্ত খাবার এবং তামাক (বিড়ি-সিগারেট, গুলপাতা-জর্দ্দা প্রভৃতি) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে বিশেষ করে পিত্তের প্রচুর ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে।
 খেতে বসলে কিসের দায়/পাকনা ধান কি জলে যায়? – খনা
অর্থাৎ খেতে বসলে ধীরে-সুস্থে (চিবিয়ে চিবিয়ে) খাওয়া উচিৎ। তাড়াহুড়ো করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাই নিশ্চিত মনে সময় নিয়ে খাওয়া উচিৎ।
 উনা ভাতে দুনা বল/অতি ভাতে রসাতল। – খনা
অর্থাৎ অতিরিক্ত ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সবারই পরিমিত ভাত খাওয়া উচিৎ। তবে ভাতের সাথে নির্ভেজাল শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। বলা হয়, ‘সুস্থ সবল স্বাস্থ্য চান, বেশি করে সবজি খান।’
 আহারান্তে চোখে জল/দৃষ্টি শক্তির বাড়ে বল। – খনা
অর্থাৎ খাওয়ার পর চোখ ধোয়া/চোখে পানি ছিটানো উপকারী। এতে চোখ ভালো থাকে, দৃষ্টি শক্তি বাড়ে।
 অধিক রাতে খেতে মানা/সন্ধ্যায় সারুন রাতের খানা।
অর্থাৎ রাতের খাবার সন্ধ্যার পর পর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। (এ রকম সময়ে খাওয়ার পর হাঁটা-চলার সুযোগ থাকে।) পক্ষান্তরে অধিক রাতে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। (সাধারণত অধিক রাতে খেয়েই মানুষ-জন শুয়ে পড়ে, হাঁটা-চলা করা হয় না)। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে, রাতে খাওয়ার পর হাঁটা-চলা করা দরকারী। পবিত্র হাদিসে, রাতে খাওয়ার পর অন্তত: চল্লিশ কদম হাঁটার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
 ঘোল কুল কলা/তিনে নাশে গলা। – খনা
অর্থাৎ- গলার অসুখ হলে ঘোল, কুল ও কলা না খাওয়া ভালো। এতে গলা বসে যেতে পারে।
 অধিক খেতে করে আশ/এর নাম বুদ্ধি নাশ।
অর্থাৎ অধিক/অপরিমিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সর্বাবস্থায় ক্ষতিকর। বুদ্ধিমান মানুষ কোনো অবস্থায় অধিক খাওয়ার চিন্তা করতে পারে না।
 মাংশে মাংশে বৃদ্ধি, ঘৃতে বৃদ্ধি বল/দুগ্ধে বীর্ষ বৃদ্ধি, শাকে বৃদ্ধি মল।
অর্থাৎ মাংশ খেলে মাংশ বাড়ে (ছোটদের তাই মাংশ খাওয়া উচিৎ), ঘিয়ে শক্তি বাড়ে, দুধে বীর্ষ বাড়ে (বিবাহিত তরুণ যারা যৌন দূর্বলতার অভিযোগ করেন। তারা নিয়মিত নির্ভেজাল দুধ খেয়ে দেখতে পারেন) এবং শাক খেলে মল/পায়খানা বাড়ে (যারা কোষ্ঠবদ্ধতায় ভোগেন তাদের নিয়মিত শাক খাওয়া উচিৎ)।
 খেয়ে উদাইম্যা ভাত/শরীল করে উৎপাত।
অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। খাওয়া-দাওয়া করে শোয়ে-বসে দিন কাটালে শরীর ভালো যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত হয়েছে, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার এর মতো জটিল রোগ হয়ে থাকে।
 খানা খায় করে শব্দ/অলক্ষ্মী খুশি, লক্ষ্মী জব্দ। – খনা
অর্থাৎ খাওয়ার সময় কথাবার্তা না বলে নিরবে খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উল্লেখ্য, পবিত্র হাদিসেও খাওয়ার সময় কথা-বার্তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

লেখক: সম্পাদক- ‘আনোয়ারা’ (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা) এবং প্রতিষ্ঠাতা- আনোয়ারা হোমিও হল গ্রান্থগার ও আর্কাইভ, সিলেট।

শেয়ার করুন: