টানটান উত্তেজনার ম্যাচে পারল না বাংলাদেশ

তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ বলে চার রান দরকার ছিল। মাহমুদুল্লাহর সামনে সুযোগ ছিল শেষ বলে চার করে নায়ক হওয়ার। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার মানতে হয় টাইগারদের। ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান করে। বাংলাদেশের ইনিংসে সব্বোর্চ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। তিনি ৪৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন।

ম্যাচটিতে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এদিন দলে দুটি পরিবর্তন আনেন তিনি। দলে ফেরেন সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ১৪২ রান করার মাধ্যমে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবনিম্ন রান করেছে ক্যারিবিয়ানরা। বিশ্বকাপে এর আগে আরো দুইবার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমবার ২০০৭ সালে। সেবার টাইগারদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ১৬৪ রান করেছিল তারা। এই রান বাংলাদেশ তাড়া করে জিতে নিয়েছিল। দ্বিতীয়বার দুই দল মুখোমুখি হয় ২০১৪ সালে। সেবার টাইগারদের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানরা ১৭১ রান করেছিল। জবাবে বাংলাদেশ ৯৮ রানে আউট হয়েছিল।

ম্যাচটিতে বাংলাদেশের হয়ে এদিন নাঈম শেখের সঙ্গে ওপেনিং করতে আসেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তিনি তার ইনিংসটি লম্বা করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ১২ রানের ও দলীয় ২১ রানের সময় রাসেলের বলে বেঁচে ক্যাচ আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান নাঈম। এই বলে তিনি সিঙ্গেল রান নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইকে পাঠান। কিন্তু পরের বলেই সাকিব এই রাসেলের বলেই ক্যাচ আউট হন।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং ছিল চোখে পরার মতো। পাওয়ার প্লেতে কমপক্ষে পাঁচটি নিশ্চিত চার আটকে দেন তারা। ফলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দেখেশুনে ব্যাট চালালেও ক্যারিবিয়ানদের ফিল্ডিংয়ের কারণে পাওয়ার প্লেতে বড় সংগ্রহ তুলতে পারেননি। উল্টো ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারের সময় জেসন হোল্ডারের বলে ১৭ রান করে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান নাঈম। তখন দলের রান ২৯। এরপর ব্যাটিংয়ে হাল ধরার চেস্টা করেন লিটসন দাস ও সৌম্য সরকার। তবে সৌম্যও ১৭ রান করে আকিল হোসেনের বলে দলীয় ৬০ রানের সময় আউট হন। এরপর ক্রিজে আসা মুশফিক মাত্র ৮ রান করে সুইপ শট খেলতে গিয়ে রবি রামপালের বলে বোল্ড হন। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯০। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

এটিকে টসে জিতে বল হাতে বেশ দাপটের সঙ্গেই দলের শুরুটা করেন মেহেদি হাসান। ফলে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার গেইল ও লুইস বেশ সাবধানেই শুরুটা করেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে ক্রিস গেইল রান আউট থেকে বেঁচে যান। ওই ওভারেই ভাঙে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১২ রানের উদ্বোধনী জুটি। ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লুইস। তিনি ৯ বলে ১ চারে ৬ রান করেন। এরপর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি গেইল। মাত্র ৪ রান করে সাজঘরে ফিরেন তিনি। মেহেদী হাসান তার দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে পান সাফল্য। এরপর মেহেদী হাসান তার তৃতীয় ওভারে ফেরালেন শিমরন হেটমায়ারকে। সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে তাকে ৯ রানে লং অফে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান এই স্পিনার।

এরপর আন্দ্রে রাসেলকে পা দিয়ে রান আউট করেন তাসকিন আহমেদ। নন স্ট্রাইকে কাইরন পোলার্ডের জায়গায় নেমেই আউট হন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। চেজের স্ট্রেট ড্রাইভে বল তাসকিনের পায়ে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করে। তখন লাইনের বাইরে ছিলেন রাসেল। কোনো বল না খেলেই আউট তিনি। আর ১৬ বলে ৮ রান করে রিটায়ার্ড হাড নেন উইন্ডিজ অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। তাসকিন আহমেদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে অসুস্থতায় মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালে বড় সংগ্রহ তুলতে ব্যর্থ হয় উইন্ডিজরা। টাইগারদের পক্ষে বল হাতে মেহেদি ও শরিফুল ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪২/৭ (গেইল ৪, লুইস ৬, চেইস ৩৯, হেটমায়ার ৯, পোলার্ড ১৪*, রাসেল ০, পুরান ৪০, ব্রাভো ১, হোল্ডার ১৫*; মেহেদি ৪-০-২৭-২, তাসকিন ৪-০-১৭-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৩-২, শরিফুল ৪-০-২০-২, সাকিব ৪-০-২৮-০)।

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫ (নাঈম ১৭, সাকিব ৯, লিটন ৪৪, সৌম্য ১৭, মুশফিক ৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১*, আফিফ ২*; রামপল ৪-০-২৫-১, হোল্ডার ৪-০-২২-১, রাসেল ৪-০-২৯-১, আকিল ৪-০-২৪-১, ব্রাভো ৪-০-৩৬-১ )।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী

শেয়ার করুন: