রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বৃটিশ রানিকে বাদ দিচ্ছে বারবেডোজ

একসময়কার ‍বৃটিশ উপনিবেশ বারবেডোজ আগামী ২৯ নভেম্বর রানি এলিজাবেথকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রায় ৪০০ বছর আগে ক্যারিবীয় দ্বীপটিতে ইংরেজদের প্রথম জাহাজ যাওয়ার পর থেকে বৃটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে থাকা রানির নাম বাদ দেওয়ার মাধ্যমে তার চূড়ান্ত অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এলিজাবেথ এখনও বারবাডোজ এবং আরও ১৫টি দেশের রানি; এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জ্যামাইকাও আছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রানির নাম বাদ দেয়াকে বারবেডোজ দেখছে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাসের দানবদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের উপায় হিসেবে।
রয়টার্স লিখেছে, নিজেদের স্বাধীন ঘোষণার ৫৫ বছর পর বারবেডোজ প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে, মুক্ত হচ্ছে প্রায় সব ঔপনিবেশিক বন্ধন থেকে, যে বন্ধনের সূত্রপাত হয়েছিল ১৬২৫ সালে; যে বছর ইংরেজদের একটি জাহাজ রাজা প্রথম জেমসের নামে দ্বীপটির দখল নিয়েছিল। বারবেডোজ তাদের ‘হেড অব স্টেট’ থেকে রানিকে ছেঁটে ফেলার মধ্য দিয়ে অন্যান্য সাবেক ব্রিটিশ কলোনি দেশগুলোকেও বৃটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে উৎসাহ যোগাতে পারে।

এমন এক সময়ে ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশটি তাদের মাথার উপর থেকে রানিকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে, যখন বৃটিশ রাজপরিবারও এলিজাবেথের প্রায় ৭০ বছরের রাজত্ব শেষে প্রিন্স চার্লসের অভিষেকের দিন গুণছে। প্রজাতন্ত্রে উত্তরণ উদ্যাপনে বারবেডোজ রাজধানী ব্রিজটাউনের অনুষ্ঠানগুলোতে প্রিন্স চার্লসেরও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

আর বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, রানির নাম থাকবে কী থাকবে না, এটি বারবেডোজের জনগণের বিষয়। বারবেডোজের আগে সর্বশেষ রাষ্ট্রপ্রধানের জায়গা থেকে রানির নাম বাদ দিয়েছিল ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ মরিশাস, তাও প্রায় ৩০ বছর আগে।
নিজেদেরকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করলেও মরিশাস কমনওয়েলথ জোটে আছে। এই জোটের প্রায় সব দেশই একসময় ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল; জোটের সদস্য দেশগুলোতে আড়াইশ কোটি লোকের বাস।

ইংরেজরা প্রথমদিকে বারবেডোজে শ্বেতাঙ্গ বৃটিশ কর্মীদেরকে চুক্তিভিত্তিক তামাক, তুলা, নীল ও আখচাষে লাগিয়েছিল; কিন্তু কয়েক দশকের মধ্যে দ্বীপটি পরিণত হয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রথম সত্যিকারের লাভজনক দাস সমাজে। ১৬২৭ থেকে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত বারবেডোজ ৬ লাখ আফ্রিকান দাস পেয়েছিল, যাদের আখচাষে নিয়োজিত শ্রম তাদের ইংরেজ মালিকদের ভাগ্য বদলে দেয়।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৮৩৮ সালে দাসরা মুক্ত হলেও বারবেডোজের স্বাধীন হতে লাগে আরও ১২৮ বছর। ১৯৬৬ সালে এসে দেশটি স্বাধীনতা পায়।
ক্যারিবীয় এই দ্বীপদেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের স্থান থেকে ৯৫ বছর বয়সী এলিজাবেথকে সরিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তার ৭৩ বছর বয়সী ছেলে, বৃটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারের বারবেডোজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

রানির নাম বাদ দিলেও বারবেডোজ ৫৪টি দেশের জোট কমনওয়েলথে থাকছে; আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই জোট এলিজাবেথের কাছে সবসময়ই অন্য অনেক কিছুর তুলনায় বেশি অগ্রাধিকার পায়। তিনি এই জোটের প্রধানও।
এলিজাবেথ বেশ কয়েকবারই দ্বীপটিতে এসেছিলেন এবং ‘ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে পূর্বের এই দ্বীপের সঙ্গে তার অনন্য এক সম্পর্ক আছে’ বলে ভাষ্য বাকিংহাম প্যালেসের।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২৯ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ব্রিজটাউনের ন্যাশনাল হিরোজ স্কয়ারে এক অনুষ্ঠানে বারবেডোজের প্রজাতন্ত্রে পদার্পণের ঘোষণা আসবে। এরপর প্রেসিডেন্টে হয়ে এলিজাবেথের জায়গায় রাষ্ট্রপ্রধান পদে বসবেন সান্দ্রা ম্যাসন; ম্যাসন এখন দেশটির গভর্নর জেনারেল পদে আছেন।

শেয়ার করুন: