আব্দুর রশীদ লুলু

মোঘল সম্রাট আকবরের আম প্রীতি

তৈমুর লঙ্গের সুযোগ্য উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর (১৫২৬ খ্রিষ্টাব্ধে) ভারতে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেও মোঘল সাম্রাজ্যের বিস্মৃতি ঘটান সম্রাট আকবর। নানা কারণে মোঘল সম্রাট আকবর ইতিহাসে অনেক বেশী আলোচিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাঁর আম প্রীতি। সম্রাট আকবরের অন্যতম প্রিয় ফল ছিল আম। ভারত উপমহাদেশে আমের ইতিহাস অত্যন্ত পুরনো হলেও যতদূর জানা যায় সম্রাট আকবরই প্রথমে ভারতে বাগান হিসেবে আমের আবাদ শুরু করেন। হিন্দুস্থানী ফল আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণে আকৃষ্ট হয়ে আকবর বিভিন্ন জাতের আম গাছের সমাহার ঘটিয়ে (সমন্বয়ে) ভারতের বিহার প্রদেশের ডারভাঙ্গায় এক লাখ চারা লাগিয়ে আকর্ষণীয় আম বাগান তৈরী করেন। যা পরবর্তীতে ‘লাখ বাগ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বিশেষ পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা ওই আম বাগানের মধ্যেই আম খাওয়ার জন্য সম্রাট একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন। সম্রাট আকবরের প্রিয় আম ছিল-গোপাল ভোগ, জামাই ভোগ, দুধসর, লেংড়া প্রভৃতি। ধারণা করা হয়, ডারভাঙ্গায় সম্রাট আকবরের আম বাগান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এ উপমহাদেশে আম চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।

প্রিয় ফল আম হলেও সম্রাট আকবর নির্বিচারে সব গাছের আম খেতেন না। তাঁর সৃষ্ট আম বাগানের গাছের যে ডালগুলোর আম সব সময় সূর্য্যালোক পেত প্রাথমিক ভাবে সে গুলো সম্রাটের জন্য নির্বাচন করা হতো। এরপর এ থেকে যাচাই-বাছাই করে ভালো আকার ও রং-গন্ধের আমগুলো বিশেষ যত্ন সহকারে ধুঁয়ে-কেটে সম্রাটকে পরিবেশন করা হতো। কোনো অবস্থাতেই কোনো রূপ দাগ সম্পন্ন, পোকা খাওয়া, তেৎলে যাওয়া কিংবা একদিকে রং আছে অন্য দিকে রং নেই এমন আম সম্রাট খেতেন না। এমনকি প্রাথমিক ভাবে বাছাইকৃত আম থেকে কোন আমগুলো ধুঁয়ে-কেটে সম্রাটকে পরিবেশন করতে হবে তা সম্রাট নিজেই মুখে কিংবা ইঙ্গিতে বলে দিতেন।

উল্লেখ্য, সম্রাটের নির্দেশে তাঁকে পরিবেশনের জন্য আম গাছ থেকে খুব সকালে অথবা পড়ন্ত বিকালে আম পাড়া হতো। পাড়া আম গুলো আবার দীর্ঘ সময় ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা হতো। বলা বাহুল্য, এ থেকে সম্রাট আকবরের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। কেননা বর্তমানে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিবেচনায় রোদে রাখা ফলমুল (এবং শাক-সবজি) না খাওয়া ভালো। আসলেও স্বাস্থ্য ও পুষ্টিমান অক্ষুন্ন রাখার জন্য বাগান থেকে ফলমুল (এবং শাক-সবজি) সকালে-বিকালে সংগ্রহের পাশাপাশি রোদ থেকে দূরে রাখা উচিৎ।

যা হোক, শেষ বয়স পর্যন্ত সম্রাট আকবরের আম প্রীতি বজায় ছিল। শেষ বয়সে যখন তিনি নিরামিষ ভোজী হন এবং এক বেলা আহার করতেন তখনো মৌসুমে তাঁর খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আম থাকতো। তবে আমের পাশাপাশি মৌসুম ভিত্তিক অন্যান্য ফলও সম্রাট আগ্রহ সহকারে খেতেন। বলা বাহুল্য, আম ছাড়াও সম্রাট আকবরের প্রিয় ফল ছিল-চেরি, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি প্রভৃতি।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন: