মুহাম্মদ খলিলুর রহমান

রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার ও প্রাসঙ্গিক কথা

মানব ও প্রকৃতি কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার (যোবায়েদা ভিলা, দেওয়ান বাজর, গহরপুর, বালাগঞ্জ, সিলেট) আমার অবসর সময়কে কাজে লাগানোর একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই গ্রন্থাগার না থাকতো হয়তো বাজে কাজে সময় নষ্ট করতাম। এছাড়া এই গ্রন্থাগার যদি না থাকতো তবে আমার এখানে চাকরি করতে কষ্ট হতো। কারণ নিরব কক্ষ আমাকে নিরব করে দিতো।

মানুষ সামাজিক জীব। সঙ্গ ছাড়া মানুষ কখনও একা বাস করতে পারে না। এই গ্রন্থাগারের বই আমার জীবনকে উজ্জ্বল করতে যাচ্ছে। আসলে অনেক সময় ব্যবসায় লসের কারণে ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যায়। কিন্তু বই পড়ে কখনও মানুষ দেউলিয়া হয়নি। প্রত্যেকটি বইয়ের রস ও স্বাদ আলাদা। তাই কখনও বই পড়া মানুষকে দেউলিয়া বানায় না। তার প্রমাণ হলো আমাদের এলাকার আসিফ আজহার শিপু ভাই। সে একদম ছোটবেলা থেকে বই পড়তে শুরু করে। তারপর বই পড়ার অভ্যাস তাকে শাহজালাল ভার্সিটিতে নিয়ে যায়। বই পড়ার অভ্যাস তাকে নিয়ে গেছে বিলাতে। আবারো প্রমাণিত হলো, মানুষ বই পড়ে দেউলিয়া হয় না। যে মানুষ বই পড়তো বলে লোকে তাকে বেকার মানুষ মনে করতো। কিন্তু আজ এই মানুষটি বিলাতে শত শত ছাত্রের কাজের সুব্যাবস্থা করে দিচ্ছে। আমি তার সাথে নবম শ্রেণি থেকে পরিচিতি লাভ করি। রাজীব স্মৃকি গ্রন্থাগার ও আসিফ আজহার ভাইয়ের প্রেরণা আমাকে উজ্জ্বল মানুষ হতে পথ দেখাচ্ছে।

আমি নগণ্য একজন মানুষ। তবে ক্লাস ফাইভ থেকে আমি আমার অঞ্চলের শিক্ষার সাথে জড়িয়ে আছি। আমি প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নিজের এলাকার ছাত্র ছাত্রীদেরকে পড়িয়ে এক ঝাঁক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার ছাত্র-ছাত্রী এখন অনেকে এম.সি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পঠন-পাঠনে লিপ্ত আছে। এলাকায় সামাজিক অনেক কাজও করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার হাতে গড়া একটি সামাজিক সংগঠনও রয়েছে। এই সংগঠনের মাধ্যমে আমি অনেক গরিব-দুঃখি মানুষের সেবাও করেছি। আল্লাহর রহমতে আমার গ্রামে আজ ঝরে পড়া ছাত্রের সংখ্যা খুবই কম আছে। ছোটবেলা বাবা মারা যান। মায়ের লালন-পালনে নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে বিনা টিউশনিতে সরকারী কলেজসহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়া শেষ করি। মানুষের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা নিয়ে আমি বড় হয়েছি। বই পড়ার তাড়না আমার লেখাকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। পরিশেষে, আমি আনোয়ারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগারের স্থায়ীত্ব কামনা করছি।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, সুলতানপুর মহিলা মাদ্রাসা, গহরপুর, বালাগঞ্জ, সিলেট।

শেয়ার করুন: