হাবীব নূহ

ঈদ নিনাদ

১.
*******
মুসাল্লি জিজ্ঞেস করলেন, ঈদ কবে হবে? ‘শায়েখ’ জবাব দিলেন, “অপেক্ষা করুন, ঈদ ঈদের দিনই হবে-অন্য দিন কখনো হবে না” পাশের আরেক মুসাল্লি বললেন, সত্যি করে বলুন ঈদ কখন হবে? ‘শায়েখ’ বললেন, ঈদ বরাবর দশম চন্দ্র মাসের—প্রথম তারিখ হয়ে আসছে, কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি, হয় না।” ‘শায়েখ’ আরো যোগ করলেন, “পৃথিবীর আপামর মুফতি ও মুসলিম মিলে যদি সিদ্ধান্তে আসেন যে, এ বৎসর অনিবার্য কারণে ঈদ আটাশে রামাদ্বান অথবা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শাওয়ালে উদযাপন করবো, তবুও সেটি কখনো ঈদ গণ্য হবে না। এ দুনিয়ায় যারাই যেদিন ঈদ পালন করছেন, শাওয়ালের এক তারিখ ধরেই উদ্যাপন করছেন।”

২.
*********
তিনি ঈদের চাঁদ স্বপ্নে দেখলেন। তখন রামাদ্বান ছিল না। তিনি একজন যোগ্য আ’লিমের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। আ’লিম বললেন, “তোমার হয়ত এখন কোন সংকট ও মুশকিল সময় চলছে,কিছু দিনের মধ্যে তুমি বিপদমুক্ত হবে এবং তোমার জীবনে আনন্দ চলে আসবে।”
ব্যাখ্যাটা বাস্তবের সাথে খুব সামঞ্জস্য রাখে বিধায় তিনি আ’লিমের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন।আ’লিম আরো ব্যাখ্যা করে বললেন, “বেইসিকলি,রামাদ্বানে ক্রমাগত সিয়াম পালন কিন্তু কষ্ট,তাকলিফ ও যাতনার আর যখন চাঁদ দেখা হয় তখন তার অবসান ঘটে।”
সত্যিই,ঈদ—অবিরাম মেহনতের অব্যাহতি এবং প্রতিদান প্রাপ্তির পরিতৃপ্তি।
মাস শেষে বেতন নিয়ে বাড়ি ফেরার তুষ্টি।

৩.
*******
ধনী গরীবের ঈদের চাঁদ তো একটিই।যদি সচ্ছলের ভবনে পর্যাপ্ত অন্ন।নিঃস্বের গৃহ খাদ্য-শূন্য হয়।তাতে তো ঈদানন্দে সমতা থাকবে না।ঈদ দিবসে একটু সাদৃশ্য কাম্য।সেই ভারসাম্যের জন্য ছাদাক্বাতুল ফিতরের ছড়াছড়ি।এ ভাবেই ঈদানন্দ সর্বজনীন আনন্দ।পরন্তু,যাকাতুল ফিতর হল,যার আছে সে,যার নাই অথবা যার কম আছে তাকে কিছু দেয়া।পরোপকারের এ উদারতায় ঈদ দিবসের আনন্দকে আরো উদার ও মসৃণ করে তুলেন প্রকৃত বিশ্বাসীরা।অন্তত ঈদ-প্রাক্কালে যাতে কোন দুস্থ এ কথা না কয়:

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পূতিময়
ঈদ চাঁদ যেন শুকনো হাড্ডি”

৪.
*******
সালাহ (নামাজ) বান্দেগীর যেমনি চরম উৎকর্ষ তেমনি অনিন্দ্য আনন্দ।এ কারণে ইসলামে সালাহ ভিন্ন ধর্মীয় কোন উদযাপন নেই।ঈদ যেহেতু সর্বজনীন তাই ঈদ-ভোরে প্রশস্ত জায়গায় সর্বজন মিলিত হন।সম্মিলিত আনন্দ-সুখের শোকরিয়া প্রকাশ করেন।ইহ ও পরকালীন আনন্দের সংযোগ তৈরি করেন।সম্মিলন স্থলে যেতে যেতে স্রষ্টার মহিমা উচ্চারণ করে বিশ্বকে জানিয়ে দেয়া হয় যে,এ জাতি অন্য কোন শক্তি ও ব্যাক্তির দাসত্ব স্বীকার করে না।এ দাসত্ব স্বীকার না করার স্বাধীনতার আনন্দ আজকের ঈদানন্দকে আরো উৎকৃষ্ট করে দিয়েছে।

৫.
*******
প্রতিটি সালাহ যা জামাতে আদায় হয়,তার পূর্বে আযান ও ইক্বামাহ দিয়ে মুসাল্লীদেরে ডাকাডাকি (আ’যান) করা হয়।ব্যতিক্রম কেবল ঈদ সালাহগুলো।ঈদুল আদ্বহার পূর্বে পূণ্যময় দশদিন থাকলেও ঈদুল ফিতরের পূর্বে পুরো একমাস।তার কি হিকমাহ হতে পারে? হয়ত এজন্য যে,এক মাস মানুষের অভ্যাস বদলানোর জন্য যথেষ্ট সময়।এই একমাস সিয়াম সাধনার পর সব চেয়ে বড় দায়িত্ব সালাতে এমন অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা যে,ডাকাডাকি ছাড়াও বান্দা পৌঁছে যাবে জামাতে।আজ ঈদ দিবসে তারই যেন এক ছোট্র রিহার্সাল বা তালিম।

৬.
*******
ঈদ দিবসের শিক্ষা:
▫️পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
▫️পরিপাটি থাকা
▫️পরিবেশ সুন্দর রাখা
▫️পরিবেশ দুর্গন্ধমুক্ত রাখা
▫️সুন্দর বিষয়গুলোর লালন
▫️সবাইকে নিয়ে চলা
▫️অসমর্থদের খোঁজ রাখা
▫️অস্বচ্ছলদের দেখা
▫️আত্মীয়দের খোঁজ নেওয়া
▫️বড় ও সম্মাননীয়দের শ্রদ্ধা
▫️ছোট ও দুর্বলদের স্নেহ
▫️খোশমেজাজ থাকা
▫️ক্ষমা করা
▫️সহ্য করা
▫️ভাল কথা বলা
▫️স্রষ্টার মহিমা প্রকাশ করা
▫️স্রষ্টার কৃতজ্ঞতা
▫️ইত্যাদি

৭.
******
ঈদ দিবসের অরেকটি কল্যাণকর দীক্ষা হল:
ঈদ-সকালে ঈদ সালাতের আগে বাড়িতে বা ঈদ সালাতের জায়গায় কোন সুন্নাহ(এমনকি তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদও) সালাহ পড়তে নেই, তা থেকে হয়ত এ দীক্ষা নেয়া যায় যে সব সময় জরুরি বিষয়ের প্রাধান্য দেয়া জরুরি।

৮.
********
ঈদ-সালাতে আমরা অন্তত ছয়টি অতিরিক্ত তাকবীর দিয়ে থাকি,তা হয়ত এ জন্য যে,আমাদের চতুর্দিক যথা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঊর্ধ্ব ও অধ অথবা ডান, বাম,সম্মুখ,পিছন,উপর এবং নিচ কোথাও কোন শক্তি,মহা শক্তি এবং ক্ষমতা,বড় ও শ্রেষ্ঠ নেই এবং হতে পারে না।একমাত্র আল্লাহ’র শক্তি ও ক্ষমতাই মহান।
আল্লাহু আকবার।

শেয়ার করুন: