আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-১৫

 ঘর-গৃহস্থালী ও চাষাবাদসহ নানা কাজে বাঁশের ব্যবহার প্রাচীণ কাল থেকে প্রচলিত। এক সময় বাঁশ বন-জঙ্গলসহ গ্রামাঞ্চলে অনেকটা অযত্নে-অবহেলায় উৎপাদিত হতো। কিন্তু নানা কারণে এখন আর সেদিন নেই। এখন যত্নে ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাঁশ চাষাবাদ করতে হয়। বাঁশ চাষবাদের একটি অন্যতম উন্নত পদ্ধতি হলো কাটিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষাবাদ লাভজনক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এই পদ্ধতিতে একটা বাঁশ থেকে ২০-২৫টি পর্যন্ত চারা উৎপাদন সম্ভব। কাটিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য ১-২ বছর বয়সের বাঁশ কেটে ৩টি করে গিড়া রেখে করাত দিয়ে খন্ড খন্ড করতে হয়। অত:পর খন্ডগুলো ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট গর্তের মধ্যে গাদাগাদি করে রেখে উপরে খড় দিয়ে ঢেকে নিতে হয়। খড়ের উপর পলিথিন দিতে পারলে আরো ভালো হয়। প্রতিদিন হাল্কা সেচ দিয়ে খন্ড গুলো ভিজিয়ে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন পর দেখা যাবে গর্তে রাখা খন্ড গুলোর গিড়া থেকে অনেক গুলো ভ্রুণ-মুকুল বেরিয়েছে। তখন পূর্ব প্রস্তুতকৃত নির্দিষ্ট জায়গায় নালা কেটে এগুলো পুঁতে দিলে বাঁশ ঝাড়/বাগানে সহজেই পরিণত হবে। এই পদ্ধতিতে শীতকাল ছাড়া সারা বছরই বাঁশ চাষাবাদ সম্ভব। উল্লেখ্য, উন্নতমানের বাঁশের চাষাবাদ নি:সন্দেহে লাভজনক।

 গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে নিম গাছকে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। ভেষজ এ উদ্ভিদ প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য উপকারী ছাড়াও চাষাবাদে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করতে পারে। নিমের পাতা সিদ্ধ করে পানি (অবশ্যই ঠান্ডা করে) কীটনাশক হিসেবে ফল-ফসলে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিমের বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে পানিতে মিশিয়ে কীটনাশক হিসেবে ছড়িয়ে উপকার পাওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য ওষধী গুণ ছাড়াও নিমগাছ পরিবেশ সহায়ক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশেও নিম জন্মাতে পারে। নিম গাছ সর্বোচ্চ সবুজায়ন ঘটায়, যা বৃষ্টির জন্য সহায়ক।’ নানা কারণে বিশ্বজুড়ে নিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ লাভজনক।

 ঢেঁড়স চাষাবাদে একটা বড় সমস্যা পোকার আক্রমণ। এ থেকে রক্ষা পেতে ক্ষেত/বাগান নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। অর্থাৎ মরা ডাল-পালা-পাতা বাগান থেকে তুলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া পোকা আক্রান্তের প্রাথমিক অবস্থায় ঢেড়সের আক্রান্ত ডগা ও ফল তুলে/ভেঙ্গে ক্ষেত/বাগান থেকে দূরে নিয়ে ধ্বংস করতে হবে।

 চাষাবাদে বীজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায়ই দেখা যায়, বীজ নিয়ে কৃষক/কৃষাণীরা চিন্তিত থাকে। এ ক্ষেত্রে কৃষি ও কৃষকের হিতাকাঙ্খীরা বলেন- বীজের জন্য অন্যের দিকে না চেয়ে থাকে, কৃষক/কৃষাণীর উচিৎ নিজের প্রয়োজনীয় বীজ নিজেই সঠিক পদ্ধতিতে উৎপাদন এবং সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ। অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষাণী ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর কাছ থেকে বীজের সঠিক পদ্ধতিতে উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশল শিখে নেয়া যেতে পারে।

 বসত বাড়ির আশে-পাশে বা সূর্য্যকিরণ লাগে এমন জায়গায় সহজেই তেজপাতা চাষাবাদ করা যেতে পারে। গ্রামাঞ্চল ছাড়াও শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে টব/হাফ ড্রামেও তেজপাতা চাষাবাদ সম্ভব। মাটিতে চারা লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গার সবদিকে ১৮-২৪ ইঞ্চি পরিমাপের গর্ত করে গর্তের মাটির সংগে ৮-১০ কেজি পঁচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৪০০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে সপ্তাহ খানেক রেখে দিয়ে চারা লাগালে ভালো হয়। উল্লেখ্য বাণিজ্যিক নার্সারীতে আজ-কাল সহজেই তেজপাতার চারা পাওয়া যায়।

 অন্যান্য গাছের ন্যায় বর্ষাকাল পেয়ারা চাষাবাদের ভালো সময়। এ সময় চারা লাগালে সাধারণত: চারা সহজেই বেড়ে ওঠে। নিরক্ষীয় অঞ্চলের আপেল বলে খ্যাত পেয়ারা চাষাবাদের জন্য দেশের প্রায় সব এলাকার মাটিই উপযুক্ত। গ্রামাঞ্চল ছাড়াও শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে ও খোলা আঙ্গিনায় সহজেই এর চাষাবাদ সম্ভব। মাটিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য ৬ মিটার দূরত্বে ৮০ সে.মি. চওড়া ও ৮০ সে.মি গভীর গর্ত করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে। চারার প্রধাণ কান্ড মাটি থেকে ৬০-৭০ সে.মি. উচ্চতা সম্পন্ন হলে ৪/৫টি সবল শাখা রেখে অবশিষ্ট গুলো ছেটে ফেলতে হবে। এ ছাড়া সময় সময় ভাঙ্গা, রোগাক্রান্ত, মরা শাখা-প্রশাখাও ছেটে ফেলা পেয়ারা গাছের জন্য উপকারী।

 মাল্টা বিদেশী ফল হলেও এখন দেশে বিশেষত: পাহাড়ি অঞ্চলে সফল চাষাবাদ হচ্ছে। দেশে পাহাড়ি জমি, মাটি এবং আবহাওয়ায় উৎপাদিত মাল্টা বাজার প্রাপ্ত বিদেশী মাল্টার চেয়ে যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্ট ও রসালো। উল্লেখ্য, মাল্টা জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের আবহাওয়া উপযোগী মাল্টা-১ নামে একটি উন্নতমানের মাল্টার জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি মাল্টা-১ চাষাবাদের জন্য অম্লীয় মাটি ও ঢালু প্রকৃতি উপযোগী। এ প্রেক্ষিতে অনেকে মনে করেন পার্বত্য এলাকায় এ মাল্টার চাষাবাদ অর্থনেতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে। উল্লেখ্য বারি মাল্টা-১ এর বৈশিষ্ট্য হলো- প্রতিটি গাছের উচ্চতা ৭-৮ ফুট, একবার বাগান করলে বছর বছর উৎপাদন পাওয়া যায়, ফল পরিপক্ক হলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে না বরং হাল্কা সবুজ থাকে। সর্বোপরি, সংগৃহিত ফল কোনো ধরণের ফ্রিজিং ছাড়াই কমপক্ষে এক মাস স্বাভাবিক থাকে। ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১১

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন: