আব্দুর রশীদ লুলু

হাতিম আল ফেরদৌসী ও শিল্পীর দিশারী

লেখালেখির সুবাদে সম্প্রতি তরুণ লেখক ও আলেম হাতিম আল ফেরদৌসির সাথে আলাপ-পরিচয়। আনোয়ারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত রাজীব স্মৃতি গ্রন্ত্রাগারে তার আসা-যাওয়ার মাধ্যমে সাধারণ আলাপ-পরিচয়ের উর্ধ্বে ইদানিং খানিক ঘনিষ্টতা। এ ছাড়া তার কাব্যিক নাম ও বাচনভঙ্গি তথা বিনয়ী স্বভাবও এই ব্যস্ত সময়ে তার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আমার অন্যতম কারণ।

এর মাঝে এক ব্যস্ত সকালে তিনি আগ্রহ সহকারে আমার হাতে তুলে দিলেন তার দ্বিতীয় বই “শিল্পীর দিশারী”। তার প্রথম বই না পড়লেও ফাঁকে ফাঁকে দ্বিতীয় বই শিল্পীর দিশারী পড়ে ফেলি। হুসাইন মুহাম্মদ ফাহিমের করা প্রচ্ছদ চমৎকার। আমার ধারণা, আমার মতো যে কাউকেই বইটির প্রচ্ছদ টানবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশনা সংস্থা পরিসর থেকে প্রকাশিত এই বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে লেখকের প্রিয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এভাবে- মুহীউস সুন্নাহ শায়েখ আনওয়ারুল হক চৌধুরী (রহ.) এবং দ্বিতীয় আমীরে শরীয়ত শায়খুল মাশায়েখ আল্লামা তৈয়বুর রহমান বড় ভূঁইয়া (রহ.)। আমার মনে হয় উৎসর্গ যথার্থই হয়েছে।

৩ ফর্মার এই বইটিতে অনেকগুলো প্রবন্ধ-নিবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো আমাদের সমাজ ও জীবন ঘনিষ্ট। শিক্ষিত-সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এ গুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকবেন। শিল্পীর দিশারী বইয়ের প্রথম লেখা- মরেও অমর হও: করো অমুত পান। এতে লেখক পাঠককে জীবনভর ভালো কাজ করে যেতে উৎসাহিত করেছেন। যাতে মৃত্যু পরবর্তীতে সে ভালো কাজের জন্য পাঠক স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গেঁ তিনি ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন- দক্ষিণ ভারতের ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫) প্রায় হাজার বছর পূর্বে গণিত শাস্ত্রের উপর রচনা করে গেছেন চারখন্ডের এক বিশাল গ্রন্ত্র সিদ্ধান্ত শিরোমণি। যা ভাস্করাচার্যকে আজও অমর করে রেখেছে। এখানে লেখকের ইতিহাস পঠন-পাঠনের গভীরতা আমাদের মুগ্ধ করে।

দ্বিতীয় লেখা বদলে দাও জীবন দীপ্ত প্রত্যয়ে, সুন্দর শিরোনাম। এ লেখা পড়তে পড়তে পাঠক হয়তো সুন্দর জীবন গড়তে উদ্দীপ্ত হবেন। ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সে জীবন বদলে দিতে আমারও প্রত্যয় জাগছে। তৃতীয় লেখা- উৎকৃষ্ট সন্তান চাও: বেচে নাও উন্নত জীবন সঙ্গিনী। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে লেখক এতে দেখিয়েছেন জীবনে সফলতার পিছনে উন্নত চরিত্রের প্রাজ্ঞবান সহধর্মিনীর ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবিবাহিত পাঠক এ লেখা পাঠে জীবন সঙ্গিঁনী নির্বাচনে সহায়তা পেতে পারেন। চতুর্থ লেখা- আদর্শ ব্যক্তি গঠন: প্রয়োজন ব্যক্তিত্বের আদর্শিকরন। জ্ঞানগর্ভ এ লেখায় লেখক ব্যক্তিত্বের সংঙ্গাসহ আদর্শ ব্যক্তিত্ব গঠনের উপায়ও বাৎলে দিয়েছেন।

অন্যান্য লেখাগুলোর শিরোনাম- সন্তান জীবন টার্নিঙ্গে আপনার অবহেলা বিপত্তিতে ভবিষ্যৎ, বয়:সন্ধিকাল কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ, সর্বশ্রেষ্ট সম্পদ কী জানো, সঙ্গীর প্রভাব, সফলতার স্বপ্নদ্রষ্ট্রা প্রশংসারযোগ্য, কতো প্রদীপ নিভে গেলে তোমার অবহেলায় এবং শিল্পীর দিশারী। লেখার শিরোনামগুলো থেকে সহজেই আচঁ করা যায় লেখাগুলো কত জীবন ঘনিষ্ট। আমার মনে হয়, বইটি ঘরে ঘরে পাঠ করা জরুরী। বইটির জন্য আমি আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে লেখককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি তরুণ লেখক-চিন্তাবিদ হাতিম আল ফেরদৌসি তাঁর এ ধরনের কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ক্রমে তিনি লেখালেখি নিয়ে আঞ্চলিকতার গন্ডি ডিঙ্গিঁয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গঁনে বিচরণ করবেন। যতদূর জানি ঐতিহ্যবাহী সুলতানপুর মহিলা মাদ্রাসার স্বনামধন্য শিক্ষা সচিব মাওলানা নুমানুল হক চৌধুরী লেখকের পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরণায় আছেন। অতএব হাতিম আল ফেরদৌসীর প্রতিষ্ঠায় আমাদের আশাবাদ আরো দৃঢ়। উল্লেখ্য, বইটিতে কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়ে গেছে, আশা করি দ্বিতীয় সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে। আমি হাতিম আল ফেরদৌসির পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় আছি।

পরিশেষে আমি “শিল্পীর দিশারী” বইটির বহুল প্রচার এবং হাতিম আল ফেরদৌসির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।

 লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড়-সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন: