লণ্ডনে সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদ নির্মিত প্রমাণ্যচিত্র ‘এক্সপ্লোর বিয়ানীবাজার’ -এর প্রদর্শন

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প এবং হেরিটেজকে বিলেতের নতুন প্রজন্ম ও প্রবাসীদের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যে সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদের নির্মিত ডকুমেন্টারি এক্সপ্লোর বিয়ানীবাজার প্রদর্শিত হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এই ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর’র উদ্বোধন করেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।

এসময় ব্রিটিশ বাংলাদেশি জাজ স্বপ্নারা খাতুন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার শাফী আহমেদ, প্রফেসর ডাক্তার শাফি আহমেদ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান, চ্যানল এস-এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মাহি ফেরদৌস জলিল ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ জুবায়ের।

‘এক্সপ্লোর বিয়ানীবাজার’ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের প্রসংশা করে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, এরকম ডকুমেন্টারির মাধ্যমে যদি ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের কাছে বাংলাদেশের হেরিটেজ এবং পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরা হয় এবং আকৃষ্ট করা যায় তাহলে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশমুখী হবে। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে না গিয়ে বাংলাদেশে ভ্রমণে যাবে।

প্রথম এশিয়ান ব্রিটিশ বাংলাদেশী জাজ স্বপ্নারা খাতুন বলেন, এরকম উদ্যোগে সবাইকে আরো সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশেকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে আরো বেশি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান প্রফেসর ডা. শাফি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে যারা স্বল্প সময়ের জন্য হলিডে যান তাদের পক্ষে সবকিছু এক সাথে দেখা সম্ভব নয়। এরকম ডকুমেন্টারির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে এবং দেখতে পারবে। ফলে তারাও অনুপ্রাণিত হবে।

এক্সপোর বিয়ানীবাজারের প্রযোজক ও ডিরেক্টর ফয়সল মাহমুদ বলেন, যাদের দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারনা নেই, কিংবা বিলেতের বেড়েওঠা নতুন প্রজন্মকে তাদের পিতৃভূমি সম্পর্কে জানাতে এবং দেখাতে তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান বলেন, বিয়ানীবাজার একটি অগ্রসর উপজেলা। এখানে অনেক গুনীজনের জন্ম হয়েছে। ফয়সল মাহমুদ তাঁর সাহসী উদ্যোগ এক্সপোর বিয়ানীবাজার নির্মাণের মাধ্যমে বিয়ানীবাজারকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে।

অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপছে পড়া ভীড় ছিলো লক্ষ্যনীয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে হল কর্তৃপক্ষ হলের মূল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়। যার কারণে অনেকে হলে ঢুকতে পারেননি। আবার যারা হলে ঢুকতে পেরেছেন তারা অনেকে থিয়েটার হলে ঢুকতে পারেননি। আগত অনেকে বলেছেন, লন্ডনে এ যাবত কালের সবচেয়ে সফল অনুষ্ঠান ছিলো এটি। তারা সকলেই ডকুমেন্টারির নির্মাণের প্রসংশা করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এমকেসি চ্যারিটির চেয়ার মনজুরুস সামাদ চৌধুরী, লন্ডন টাইগার্সের সিইও মেসবা আহমদ, ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার কালাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী মাহমুদ রেজা, ব্যবসায়ী জাহেদ আলম রানা, সমাজকর্মী জুনেদ খান, কমিউনিটি নেতা দিলওয়ার হোসাইন, ব্যবসায়ী জুবের আহমদ, চ্যারিটি এক্টিভিটিস মুজিবুল ইসলাম শাহ আলম।

আরো বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি শাহগির বখত ফারুক, বৃটিশ-বাংলাদেশী ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি তফাজ্জল হোসাইন, লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির প্রিন্সিপাল আশিদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান, প্রবীণ মুরব্বি আসুক আহমেদ, আফাজ উদ্দিন, শফিক উদ্দিন, বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন, ফরহাদ হোসেন টিপু, মুজাহিদুল ইসলাম, আকবর হোসেন রবিন, লুৎফুর রহমান ছায়াদ, নাসির হোসেন ফয়ছল, দেলয়ার হোসেন দেলু, বিয়ানীবাজারের সাংবাদিক বাবুল হোসেন, আলী আহমদ বেবুল, আব্দুল কাদের চৌধুরী মুরাদ, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, মোহাম্মদ আববাসুজ্জামান জামান, এমরান আহমদ, সামসুর সুমেল ও আলম হোসাইন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের কোনো উপজেলা নিয়ে এটি একমাত্র পূর্ণাঙ্গ এবং প্রথম ডকুমেন্টারি যেটি নির্মাণ করেছেন সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদ। ২০১০ সাল থেকে বিলেতে বসবাস করে আসছেন ফয়সল মাহমুদ। তিনি বিলেতের বিভিন্ন মিডিয়ায় কাজ করেছেন। সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার নিউজ এডিটর এবং একটি টিভি চ্যানেলের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে গত ৪ বছর থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। ফয়সাল মাহমুদ ২০১৭ সালে এক্সপ্লোর বিয়ানীবাজার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মূলত বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নতুন প্রজন্ম ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজের জন্মভূমিকে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি বিশেষ করে বিলেতে চতুর্থ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কিংবা যারা দীর্ঘদিন থেকে বিয়ানীবাজারের সাথে সম্পৃক্ত নয়, তাদেরকে শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি এই উদ্যোগ নেন। এরপর ২০২২ সালের মার্চ মাসে ডকুমেন্টারি নির্মানের জন্য শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে যান। প্রায় আট মাস তিনি বিয়ানীবাজারে অবস্থান করে শুটিং শেষ করেন। কোভিডের কারণে শুটিং করতে গিয়ে তাঁকে নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে।

৫২ মিনিটের ডকুমেন্টারিটি সিলেটের বিয়ানীবাজারে বিশেষ করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে বিনিয়োগের জন্য মানুষ আগ্রহী হবে, পাশাপাশি বিয়ানীবাজারে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির প্রচারণায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী ফয়সল মাহমুদ। ডকুমেন্টারীটি আগামীতে এফএম নিউজ, লন্ডন নিউজ ইউটিউব ও ফেইসবুকে দেখা যাবে।

 

 

শেয়ার করুন: