আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৩৪

 পেঁপে জাহাঙ্গীর (জাহাঙ্গীর আলম, মিঠাপুকুর, রংপুর) উদ্ভাবিত একটি ভালো জাতের পেঁপে হলো আরপি-১। এ পেঁপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপযুক্ত পরিচর্যায় রোপণের তিন মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরে। গাছের উচ্চতা হয় সর্বোচ্চ দুই ফুটের মতো। এতে গাছ বাতাসে সহজে উপড়ে বা ভেঙ্গে পড়ে না। প্রায় সারা বছরই এর চাষাবাদ করা যায়। এক একটি গাছে চার থেকে সাড়ে চার মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এক একটি গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। উল্লেখ্য একজন সফল পেঁেপ চাষী হিসেবে ইতোমধ্যে পেঁপে জাহাঙ্গীর সারা দেশে পরিচিতি লাভে সক্ষম হয়েছেন।

 বিশাল আকৃতির বটগাছে অনেক বীজ হয়। কিন্তু সেসব বীজ থেকে সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাখির পেট অতিক্রম করে না এলে বটের গাছ হয় না। অর্থাৎ বটের বীজ পাখি খেয়ে মল ত্যাগ করলে পরে বীজের অঙ্কোরোদগম ক্ষমতা অর্জিত হয়। এ ছাড়াও সাধারণ অবস্থায় মাটিতে এর চারা গজায় না। পাখির পেট ছুঁয়ে আসা বট বীজ ভাঙ্গা স্যাতস্যাতে দেয়ালে ও অন্য গাছের কোটরে (যেখানে সাধারণত পানি ও ঝরাপাতা জমে থাকে) গজায়। বট গাছ চাষাবাদে আগ্রহী অনেকে তাই ভাঙ্গা দেয়াল ও গাছের কোটর থেকে খুঁজে চারা সংগ্রহ করেন। অনেক প্রকৃতি প্রেমিক বটগাছের বিশালত্ব তথা সুগভীর ছায়ার কথা বিবেচনা করে রাস্তার ধারে এ গাছ রোপণে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। প্রবাদ আছে, মার মায়াই মায়া/ বটের ছায়াই ছায়া।

 রন্ধনে ব্যবহারের পাশাপাশি ঔষধি গুণের কারণে দেশে-বিদেশে তেজপাতার চাহিদা বাড়ছে। ফলে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ছোট ছোট টিলার বেলে দোআঁশ মাটিতে তেজপাতার চাষাবাদ ভালো হয়। উল্লেখ্য, বিভিন্ন নার্সারিতে এখন সহজেই অনেকটা স্বল্প মূল্যে তেজপাতার চারা পাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছাড়াও পারিবারিক চাহিদা পূরণে উঁচু জায়গায় বেলে দোআঁশ মাটিতে যে কেউ এর চাষাবাদ করতে পারেন।

 কুল চাষাবাদে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সার ব্যবস্থাপনা একটি জরুরী বিষয়। এ ক্ষেত্রে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ৩০-৪০ কেজি পচা গোবর সার, ৫০০-৬০০ গ্রাম পটাশ ও টিএসপি এবং ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ণিত সার দুপুরে কুল গাছ (এবং অন্যান্য গাছ) যে পরিমাণ জায়গা জুড়ে ছায়া দেয় গাছের চার দিকে সে পরিমাণ জায়গা কোদাল দিয়ে ভালো করে কুপিয়ে সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগকৃত সার অবশ্যই কোদাল দিয়ে পুনরায় কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

 চাষাবাদে ফল বাগানে ফল কম ধরা ও ঝরা ক্ষতির অন্যতম একটি কারণ। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলেন, প্রায়ই আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বিশেষ করে অত্যধিক তাপমাত্রা ও জলাবদ্ধতা, মাটির পর্যাপ্ত রসের অভাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সার প্রয়োগ আবার কখনো কখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ সারের অভাব, খাদ্য ও হরমোন ঘাটতি, রোগ/পোকার আক্রমণ, সর্বোপরি সময় উপযোগি পরিচর্যার অভাবই বাগানে ফল কম ধরা ও ঝরার অন্যতম কারণ। অতএব ফল বাগানকে লাভজনক করতে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি সযতœ দৃষ্টি রাখতে হবে।

 লতা জাতীয় প্যাশন ফল যা দেশে ট্যাং ফল নামে সমধিক পরিচিত বিদেশি হলেও এ ফল দেশে সফলভাবে চাষাবাদ হচেছ। বহুবর্ষজীবি এ গাছ উপযুক্ত পরিচর্যায় রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে ফলন দিতে শুরু করে। ফল আসার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে এ ফল চাষাবাদ ভালো হয় এবং প্রায় সারা দেশে চাষাবাদ সম্ভব। উল্লেখ্য প্যাশন (ট্যাং) ফলের গুড়া পানিতে গুলে পান করা হয়। এছাড়া এ পাকা ফলের আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু রস সরাসরি খাওয়া যায় এবং তা লৌহ ও ভিটামিন সি এবং ডি সমৃদ্ধ। লতা জাতীয় গাছ বিধায় চাষাবাদে লাউয়ের মতো মাচা বাউনির ব্যবস্থা করতে হয়। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদার জন্য বাড়ী-ঘরের আশে-পাশে সবজি চাষাবাদের ন্যায় সহজে এবং কম খরচে এ ফল চাষাবাদ করা যায়।

 প্রায়ই দেখা যায়, আম গাছ থেকে এক ধরণের আঠালো কষ পড়ে এবং কিছুদিন পরে আক্রান্ত ডাল ভেঙ্গে পড়ে। যা চাষাবাদে ক্ষতির কারণ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ অবস্থা ‘স্টেম বোরার’ পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এ অবস্থার প্রতিকারে তাঁদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রথমে চিকন কিছু একটা দিয়ে খুঁচিয়ে পোকাকে বের করার চেষ্টা করতে হবে। তারপর সে জায়গা/গর্তের মুখ আলকাতরা বা এই জাতীয় কিছু একটা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। এ ছাড়া কষ ঝরা স্থানটুকু দাড়ালো ছুরি/দা দিয়ে চেছে বোঁর্দো মিক্সচার অথবা কপার জাতীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে। এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে কৃষিবিদ/বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 ফল চাষাবাদে সুপরিচিত ফলের পাশাপাশি অনেক স্বল্প পরিচিত-অপরিচিত ফলের চাষাবাদে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, স্বল্প পরিচিত-অপরিচিত ফল চাষাবাদে অনেক ক্ষেত্রে সময়-শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয় অর্থাৎ এ গুলো প্রায়ই সহজে চাষাবাদ করা যায়। অথচ বাজারে চাহিদা প্রচুর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প পরিচিত-অপরিচিত ফল এখন গুরুত্ব সহকারে চাষাবাদ হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, লটকন ফলের কথা। এক সময় এর গুরুত্ব না থাকলেও এখন তা বাজারে প্রচুর চলছে। এমন কি বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, লালমনিরহাট, নরসিংদী ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষাবাদের মাধ্যমে বহু কৃষক/কৃষাণী স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন: