বিবিসি বাংলার রিপোর্ট

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্রদেশ ও ইরান-ইসরায়েল শত্রুতার শুরু

মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র গোষ্ঠী ও প্রক্সি বাহিনীর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে ইরান। তাদের দাবি সেটি ওই অঞ্চলে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে গঠিত একটি ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ অংশ। বিভিন্নভাবে ইরানকে সমর্থন করে থাকে এই নেটওয়ার্ক।

এদিকে ইরানের মিত্রদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সিরিয়া। সেখানে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মাঝে বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়ার পাশাপাশি সহায়তা করেছে ইরান।

ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো লেবাননের হেজবুল্লাহ। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আন্তঃসীমান্তে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি চলছে। সীমান্তের দু’দিক থেকেই হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক বাধ্য হয়েছেন তাদের বাড়িঘর ছাড়তে।

বেশ কয়েকটি শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে ইরান সমর্থন করে। সিরিয়া ও জর্ডানে থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে এইসব গোষ্ঠী। জর্ডনে একটি সামরিক চৌকিতে মোতায়েন থাকা তিন মার্কিন সেনার মৃত্যু ও এর পাল্টা জবাব দিতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

ইয়েমেনের হুথি আন্দোলনকে সমর্থন করে ইরান। যারা দেশটির সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

প্রসঙ্গত, গাজায় হামাসের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের জন্য হুথিরা ইসরায়েলকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে। শুধু তাই নয়, উপকূলের কাছে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে একটি জাহাজকেও ডুবিয়ে দিয়েছে।

পাল্টা জবাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হুথিদের নিশানায় রেখে হামলা চালিয়েছে তারা।

হামাস-সহ সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং প্রশিক্ষণ দেয় ইরান। হামাস গত বছরের সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামলা চালিয়েছিল যা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। একই সঙ্গে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতেরও সৃষ্টি করেছে যেখানে জড়িয়ে পড়েছে ইরান, তাদের প্রক্সি ও ইসরায়েলের মিত্র গোষ্ঠীও। তবে সাতই অক্টোবরের হামলায় কোনও ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।

এদিকে ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের আগে পর্যন্ত এই দুই দেশ মিত্র ছিল। তারপর ইরানে এমন একটি শাসনব্যবস্থা আসে যারা ইসরায়েল বিরোধিতাকে আদর্শের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ব্যবহার করে এসেছে। ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকেই স্বীকার করতে চায় না ইরান। উল্টো তাদের নির্মূল করতে চায়।

দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এর আগে ইসরায়েলকে ‘ক্যান্সার যুক্ত টিউমার’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। একই সঙ্গে বলেছিলেন ওই দেশকে ‘নিঃসন্দেহে নির্মূল ও ধ্বংস করা উচিৎ’।

ইসরায়েল মনে করে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ইরান একটা বড় ঝুঁকি। তার প্রমাণ হিসাবে রয়েছে তেহরানের বাগাড়ম্বর, ইসরায়েলকে ধ্বংসের করতে বদ্ধপরিকর প্রক্সি বাহিনী গঠন করার মতো ঘটনা, হামাস ও লেবাননের শিয়া জঙ্গি গোষ্ঠী হেজবুল্লাহসহ সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলিকে অর্থায়ন ও অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া এবং সর্বোপরি চুপিসারে পারমাণবিক অস্ত্রে ইরানের বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা। ইরান যদিও পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

শেয়ার করুন: