বালাগঞ্জ উপজেলার মোট পাঠাগার বা গ্রন্থাগার কতটি তা সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও এটা সত্য যে শতাধিকের উর্ধ্বে। প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাদের নিজস্ব পাঠাগার। অন্যদিকে মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে রয়েছে ব্র্যাক পরিচালিত পাঠাগার। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা, স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে কিছু পাঠাগার বা গ্রন্থাগার।
নিম্নে কিছু পাঠাগার/গ্রন্থাগারের আলোচনা তুলে ধরা হলো। যা পূর্ণাঙ্গ নয়। ভবিষ্যৎ আলোচনায় চেষ্টা করবো পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরার।
পাবলিক লাইব্রেরি:বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ (সরকার) কর্তৃক পরিচালিত। ১৯৮৪ সালে তা শুরু হয় বালাগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে। তারপর তা স্থানান্তর করা হয় বালাগঞ্জ বাসস্টেশনস্থ এম.এ.খান অডিটরিয়াম কাম পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে। তিনটি আলমারী আর শতাধিক বই নিয়ে চলছিলো ভালোই। পড়ে লাইব্রেরি স্থানান্তর করা হয় হেডকোয়ার্টারস্থ অফিসার্স ক্লাবে। সেখান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাস ভবনে।
গোয়ালাবাজার আদর্শ গণপাঠাগার: গোয়ালাবাজার এলাকার কয়েকজন সাহিত্য সংস্কৃতিমনা ১৯৮৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘গোয়ালাবাজার আদর্শ গণ-পাঠাগার’ নামে যে গ্রন্থাগারের সৃষ্টি করেছিলেন তা বর্তমানে বালাগঞ্জ উপজেলার গ্রন্থাগারের ইতিহাসে একটি বটবৃক্ষ। জনাব গিয়াস উদ্দীন , মোঃ আখলাকুর রহমান, মোঃ হীরা পারভেজ, মোঃ আনছার উদ্দীন আহমদ, মোঃ মুজিবুল হক, মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী, শ্রী কান্তিভূষণ ধর, অধ্যাপক শরীফ উদ্দীন, এই ৮ জনের উদ্যোগের ফসল। বর্তমানে পাঠাগারের সাধারণ সদস্য পাঁচ শতের উর্ধ্বে। মোট বই এর সংখ্যা দুই হাজার খানেক। প্রতিবছর উক্ত পাঠাগারটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বইসহ নগদ অর্থ অনুদান হিসাবে পেয়ে আসছে। উক্ত পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সদস্য শিক্ষক, সাংবাদিক মোঃ গিয়াস উদ্দীন আহমদ গোয়ালাবাজারের নিকটবর্তী মহিলা কলেজের সম্মুখে কালাসারা গ্রামে পাঠাগারের জন্য নিজস্ব ভূমিতে তৈরীকৃত কক্ষ দান করেন। যেখানে বর্তমানে পাঠাগারের কার্যক্রম চলছে।
রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার: বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামের যোবায়েদা ভিলায় রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাকাল ১১ মে ২০০৭। প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রশীদ লুলু। আনোয়ারা ফাউন্ডেশন পরিচালিত এই গ্রন্থাগারে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পাঁচ সহস্রাধিক বই রয়েছে। এখানে বিচিত্র বই এর পাশাপাশি জ্ঞানমূলক ও গবেষণাধর্মী বেশ কিছু বইও রয়েছে। কৃষি বিষয়ক ব্যতিক্রমী প্রকাশনা ‘চাষাবাদ’-এর সম্পাদক ও তরুণ লেখক আনিসুল আলম নাহিদ এই গ্রন্থাগারের পরিচালক। খ্যাতিমান অনেক সাংবাদিক ও সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন এই গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেছেন। পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এই গ্রন্থাগার থেকে বিভিন্ন উপলক্ষে বইপত্র উপহার প্রদান করা হয়।
বালাগঞ্জ উপজেলা গ্রন্থাগার: সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন শাহীনের দানকৃত (নিজস্ব সংগ্রহ) প্রায় শতাধিক বই, সংকলন, পত্রিকা নিয়ে গ্রন্থাগারটি যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই থেকে। সমাজ উন্নয়ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা এম.এম সেবা ট্রাস্ট পরিচালিত এ গ্রন্থাগারে বর্তমানে বই, সংকলন, পত্রিকা সংখ্যা প্রায় ১ হাজারের উর্ধ্বে। উক্ত গ্রন্থাগারটি ইতিপূর্বে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বইসহ অর্থ অনুদান পেয়েছে। গ্রন্থাগারের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে, এখানে বালাগঞ্জ উপজেলার লেখকদের বই, সংকলন, পত্রিকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পত্রিকা, সংকলন ছাড়াও বিদেশে থেকে একাধিক পত্রিকা আসে। বালাগঞ্জ বাজারস্থ এনাম ভিলায় বর্তমানে কার্যক্রম চলছে। গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন শাহীন।
প্রগতি পাঠাগার: উছমানপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামে প্রগতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক ডাক্তার তখলিছ আলী। মোট বই এর সংখ্যা ৫ শতাধিক।
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী পাঠাগার: ওসমানীনগর থানার গাভুরটেকি এলাকার মেতিয়ারগাঁও গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে আব্দুছ ছালাম চৌধুরী পাঠাগারটি। ২০০৬ ইংরেজি ২৭ এপ্রিল পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন বেলায়েত হোসেন চৌধুরী মিটু, ছয়ফুল হোসেন চৌধুরী, আখতার হোসেন চৌধুরী টিপু।
ইমাম গায্যালী (রহ:) পাঠাগার: ওসমানীগরের ইছামতি গ্রামে সাহিত্যচর্চা ও বিকাশে সমাজ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১ আগস্ট ২০০০ ইংরেজি তারিখে ইছামতি স্কুল সংলগ্ন মসজিদে গড়ে তোলা হয়েছে বিখ্যাত ইসলামী মনীষী ও দার্শনিক ইমাম গায্যালী (রহ:) এর নামানুসারে ‘ইমাম গায্যালী (রহ:) পাঠাগার’। ‘জাগো তরুণ পাঠাগার’ নামেও বেশ কিছুদিন এই পাঠাগারের কার্যক্রম সচল ছিল। বর্তমানে পাঠাগারটির সভাপতির পদে রয়েছেন মাও: খাইরুজ্জামান খছরু, সাধারণ সম্পাদকের পদে মাও: হবিবুর রহমান এবং লাইব্রেরিয়ান হিসেবে রয়েছেন- এহসানুল হক জাকারিয়া এবং মাও: রুহুল ইসলাম। পাঠাগারটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮৮ জন এবং বইয়ের সম্ভার ২৮৫।
মরহুম মাওলানা আব্দুল খালিক পাঠাগার: ১৯৫৭ সালে দয়ামীর জামেয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পরপরই মাদ্রাসা সংলগ্ন দু’তলা ভবনে গড়ে তোলা হয় মরহুম মাওলানা আব্দুল খালিক পাঠাগার। প্রতিষ্ঠা করেন দয়ামীর জামেয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি। পাঠাগারটির বর্তমান কিতাবাদি ও পুস্তক সংখ্যা প্রায় ৬শত এবং সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫০ জন। পাঠাগারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা ইলিয়াস সাহেব এবং সেক্রেটারী পদে মাওলানা নজরুল ইসলাম।