
শামীমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
শামীমা বেগমের মত নাগরিকত্ব হারানো দুই বৃটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব ফেরত পাওয়ার মামলার চূড়ান্ত আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বৃটিশ সুপ্রিম কোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে উক্ত দুই নাগরিকের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। এই রায়ের ফলে শামীমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে নাগরিকত্ব হারানো শামীমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব বহাল থাকছে। তবে পাসপোর্ট পেতে তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৪, আপিল বিভাগে এই মামলার দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন মাস পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উক্ত রায়ের মাধ্যমে আপিল আবেদনকারী উক্ত দুই বৃটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের ফলে তার বৃটিশ নাগরিকত্ব পুরো সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, এই প্রত্যাহারের ফলে আপিলকারীদের সারা জীবন ধরে বৃটিশ নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এর রায়ের একটি কপি ‘বালাগঞ্জ প্রতিদিন’ এর হাতে এসেছে। মামলাটি ছিল মূলত শামীমা বেগমের মত জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই বৃটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে শামীমা বেগমের মত উক্ত দুই বৃটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। এরপর সুপ্রিম কোর্টে “N3 এবং ZA বনাম Secretary of State for the Home Department (2025) UKSC6” চূড়ান্ত আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় আসে, যেখানে বলা হয়, উক্ত দুই বৃটিশ নাগরিক নাগরিকত্ব কখনো হারাননি এবং তাঁরা এখনও বৃটিশ নাগরিক। অর্থাৎ, তাঁরা বৃটিশ নাগরিক ছিলেন, এখনো আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছাড়েন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। সিরিয়ায় গিয়ে তিনি আইএসের ডাচ সদস্য ইয়াগো রিয়েডিকে বিয়ে করেন। সেখানে তাঁর তিনটি সন্তান জন্ম নেয়, যাদের সবাই মারা যায়। পরবর্তীতে স্বামী রিয়েডিও এক কুর্দি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন বলে জানা যায়। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শামীমার বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। সেই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য ২০২৩ সালে শামীমার আইনজীবীরা আপিল করেন। কিন্তু আপিল আদালতের তিনজন বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন। ২০১৯ সালে আইএস পরাজিত হওয়ার পর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের আল-রোজ শিবিরে শামীমার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি এখনো সেখানেই আছেন।