রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে চীনের আধিপত্য: ভারতের অস্বস্তি



ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি নয়, বরং জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বাংলাদেশকে শুধু সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহই করেনি, বরং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তিও হস্তান্তর করেছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে।

দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে হালকা অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে রকেট লঞ্চার ও কাঁধে বহনযোগ্য স্বল্পপাল্লার বিমান বিধ্বংসী মিসাইল রয়েছে, যা যুদ্ধের কৌশলগত দিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এ ধরনের অস্ত্রের কার্যকারিতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনী আমেরিকার সরবরাহকৃত এসব অস্ত্র ব্যবহার করে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়।

১৩ মার্চ চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে অস্ত্র নির্মাণ প্রযুক্তির স্থানান্তর ঘটছে। এতে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীনের প্রযুক্তিতে রাইফেল, রকেট লঞ্চার ও ম্যানপেড লাইট ইউটিলিটি যানবাহন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

২০১২ সালে চীনের সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রথম দেশীয়ভাবে নির্মিত পেট্রোল জাহাজ তৈরি করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এ উদ্যোগ বাংলাদেশের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও সুসংহত করেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখার যে অভিপ্রায় ভারত দীর্ঘদিন লালন করেছে, তা এখন চীনের কৌশলগত অগ্রগতির ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশ চীন থেকে নৌ টহল জাহাজ, করভেট, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে। চীন অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক কম খরচে আধুনিক প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের ওপর প্রতিরক্ষা খাতে নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের এই গভীরতা কেবল প্রতিরক্ষা নয়, অর্থনীতি ও কৌশলগত অংশীদারিত্বেও নতুন মাত্রা যুক্ত করছে, যা ভবিষ্যতে আরও প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও অভিজ্ঞ মহলের অভিমত রয়েছে ।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!