নতুন অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, এই নন-ইইউ স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০,০০০ থেকে ৪১,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত। পাশাপাশি, প্রথমবারের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ৬ শতাংশ কর আরোপ করতে যাচ্ছে বৃটিশ সরকার।
এই শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক স্তরের কোনও দক্ষ চাকরি পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, যদি তারা দক্ষ চাকরি না পায়, তবে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। অভিবাসন সীমিত করার উদ্দেশ্যে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন এই আইনে, বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ ১৮ মাস থাকতে পারবে, যা পূর্বে ছিল ২ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা সংস্থা “ইউনিভার্সিটিজ ইউকে” জানিয়েছে, এই নতুন শুল্কের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বস্থানীয়রা সরকারকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ উচ্চশিক্ষা খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়া আয় দিয়ে দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য চিকিৎসা ও দন্তচিকিৎসার মতো ব্যয়বহুল কোর্সে ভর্তুকি দেওয়া হয়।
সরকার জানিয়েছে, এই শুল্ক থেকে সংগৃহীত অর্থ উচ্চশিক্ষা খাতে পুনরায় বিনিয়োগ করা হবে। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা হবে। এটি সরকারের বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ, যার লক্ষ্য দেশীয় কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং অভিবাসনের মাধ্যমে যে শূন্যতা পূরণ করা হয়েছে, তা দেশের অভ্যন্তরেই পূরণ করা।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই নতুন শুল্কনীতির ফলে প্রতিবছর স্নাতক ভিসার আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ১২,০০০ হ্রাস পেতে পারে।
বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, কিছু নিম্ন-মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যদিও ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা ৪৯ শতাংশ বেড়েছে, একই সময়ে জাতীয়ভাবে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংখ্যা ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফি থেকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রায় ১০ বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব আসে।
“ইউনিভার্সিটিজ ইউকে”-এর প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন বলেন, উদাহরণস্বরূপ, ভেটেরিনারি মেডিসিনের একটি কোর্সে প্রতি শিক্ষার্থী খরচ হয় প্রায় ২০,০০০ পাউন্ড, যার অর্ধেকই আসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অর্থায়ন থেকে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই, যদি ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের এই খরচ বহন করতে বলা হয়, তাহলে তাদের জন্য উচ্চমূল্যের বিষয়গুলো পড়া কতটা সম্ভব হবে?
তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে থেমে থাকা টিউশন ফি, গবেষণায় কম অর্থায়ন এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উচ্চশিক্ষা খাত এখন চরম সংকটে আছে। এর উপর অতিরিক্ত কর আরোপ কোনোক্রমেই সহায়তা করবে না।
তার দাবি, “আমরা চাই সরকার আবার চিন্তা করুক। আমরা ইতিমধ্যেই ব্যয় সংকোচন করে চলতে চেষ্টা করছি। এর উপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে কোনও লাভ হবে না। বরং সরকার যেন এই খাতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়।”
যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ২৪টি পাবলিক রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত ‘রাসেল গ্রুপ’ জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২,৫৭,০০০। এসব শিক্ষার্থী অনেক প্রতিষ্ঠানের মোট আয়ের এক পঞ্চমাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অংশীদার। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফি থেকে সংগৃহীত অতিরিক্ত অর্থের মাধ্যমেই ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের প্রতি কোর্সে গড়ে ২,৫০০ পাউন্ড ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।