
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। ৯ জুন ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। সফরের প্রধান উপলক্ষ হলো কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ গ্রহণ, যা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১১ জুন লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। ওই দিনই বাকিংহাম প্যালেসে রাজা চার্লসের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে, যা ১১ বা ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সহ যুক্তরাজ্য সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। সফরের সূচি খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।
সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের চেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাজ্য এই সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল অবস্থান নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন ঘিরে যে চাপ রয়েছে, তার মধ্যেই এই সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বকে জানাবেন যে, সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যও এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়ে আসছে।
সুশাসন, মানবাধিকার ও জবাবদিহি নিয়ে আলোচনা
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সুশাসন ও মানবাধিকার উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। গেল ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সফর করেন ব্রিটিশ মানবাধিকার বিষয়ক দূত এলেনর স্যান্ডার্স। তিনি ন্যায়বিচার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এই সফরেও আইনের শাসন, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বিষয়ক আলোচনার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্পর্ক আরও জোরদারের উদ্যোগ
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে পোশাক, চিংড়ি, বাইসাইকেল ও হস্তশিল্প যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, লোহা-স্ক্র্যাপ, যন্ত্রপাতি, বিমান যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয় ব্রিটেন থেকে। সফরে এই সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে আগ্রহ দেখাবে ঢাকা।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ইস্যু
বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গত মার্চে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর লন্ডনে পার্লামেন্টারি গ্রুপের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। সফরে এই বিষয়টি আবারও উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা সংকটেও যুক্তরাজ্যের পাশে বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্য শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে তারা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে আসছে। ব্রিটিশ সরকার এ সংকটের স্থায়ী সমাধানে তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এবারের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।





