
গোপালগঞ্জে সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ১১টি ধারায় তুলে ধরা হয়েছে জেলার সামগ্রিক পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের বিবরণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই মাসজুড়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ শিরোনামে একটি জনসভা আয়োজনের পরিকল্পনা করে তারা। সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে এই জনসভার আয়োজনের আগে বরিশাল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা রওনা দেন।
এদিকে, জনসভার নিরাপত্তায় সকাল থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। তবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুর এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে একজন পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পরবর্তী সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ১১টার দিকে কংশুর বাসস্ট্যান্ডে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে একটি দল গাছ ফেলে ও কাঠে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
একই সময় কোটালীপাড়া উপজেলায়ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়কে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। কাঠি বাজার এলাকাতেও ২০০ থেকে ৩০০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সহিংসতা সৃষ্টি করে।
দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে এনসিপির সভাস্থলে হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগের একটি দল স্লোগান দিতে দিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে, ব্যানার-চেয়ার ভাঙচুর করে। পরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির নেতারা মঞ্চে উঠলেও শান্তিপূর্ণ সভা ব্যাহত হয়।
দুপুর ২টার দিকে সাতপাড় বাজার এলাকায় দুইটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সভা শেষে বিকেল ৩টার দিকে নেতারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চঘাট এলাকায় হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা গাড়িবহর আটকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ সরকারি স্থাপনাও আক্রমণের শিকার হয়। সংঘর্ষে চারজন নিহত হন এবং অন্তত ৫০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে পুলিশ ও সাংবাদিকও রয়েছেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে যায় এবং পরে বাগেরহাট হয়ে খুলনার পথে পাঠানো হয়।
রাত সাড়ে ৭টার দিকে নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল থেকে জোর করে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা, পোস্টমর্টেম কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিসহ প্রায় দেড় হাজারের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ।