
ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখী ‘কনশাস’ নামের জাহাজে থাকা বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে আটক করেছে— এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি এবং এটি বাস্তব নয়।
ছবিটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের ছবি আঁকা টি-শার্ট পরিহিত শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি সেনারা সমুদ্র তীরে আটক করেছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের যাচাইয়ে জানা গেছে, ওই ছবির অস্তিত্ব কোনো নির্ভরযোগ্য বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
এর আগে, বুধবার (৮ অক্টোবর) ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের এক পোস্টে জানানো হয়— গাজা অভিমুখে যাত্রারত স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বহনকারী নৌবহর ‘কনশাস’-কে ইসরায়েলি বাহিনী অবৈধভাবে থামিয়ে দেয় ও যাত্রীদের জোরপূর্বক আটক করে। ঐ নৌবহরের যাত্রীদের মধ্যেই ছিলেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
একই দিনে শহিদুল আলম নিজের একটি ভিডিও বার্তায় জানান, “ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের জাহাজে উঠেছে এবং আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
তবে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের এক্স (X) অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে নৌবহর সম্পর্কিত বিভিন্ন আপডেট ও ভিডিও প্রচার করা হলেও, সেখানে এ ধরনের কোনো আটক ছবির উল্লেখ বা প্রকাশ নেই।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা নৌবহরকে থামানো হয়েছে এবং যাত্রীদের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, যাত্রীরা সবাই নিরাপদে আছেন এবং শিগগিরই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে সেই প্রতিবেদনে কোনো ছবি প্রকাশ করা হয়নি।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, আলোচিত ছবিতে থাকা চারজন সৈন্যের মুখমণ্ডল, দেহের গঠন ও উচ্চতায় অস্বাভাবিক মিল লক্ষ্য করা যায়, যা এআই-নির্মিত ছবির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এছাড়া শহিদুল আলমের পোশাকেও অসঙ্গতি রয়েছে— তিনি সর্বশেষ ৪ অক্টোবর নিজের ফেসবুকে কালো পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি আঁকা ছিল। কিন্তু ভাইরাল ছবিতে তাকে একই ডিজাইনের টি-শার্টে দেখা যায়— যা সাধারণত এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি ছবিতে দেখা যায়।
ছবিটি এআই শনাক্তকরণ টুল Hive Moderation-এ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি এআই ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।
ফলে স্পষ্ট যে, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহিদুল আলম আটক হয়েছেন বলে যে ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, তা ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।





