
ছবি সংগৃহীত
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নবনির্বাচিত এই মেয়র নানা দিক থেকে ব্যতিক্রমী ও উল্লেখযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৮৯২ সালের পর শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, একই সঙ্গে প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে অভিষিক্ত হন। গত বছর তিনি প্রায় কোনো পরিচিতি ছাড়াই, সীমিত অর্থ ও দলীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এই অবস্থায় সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে হারিয়ে তার জয়কে অনেকেই এক অসাধারণ অর্জন হিসেবে দেখছেন।
নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, তবে গত সেপ্টেম্বরে তিনি নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। শহরের নির্বাচন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৫টা) প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ভোট প্রদান করেছেন, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ ভোট পড়েছিল, যখন রিপাবলিকান প্রার্থী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডেভিড ডিনকিনসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন আগাম ভোট দেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সর্বাধিক আগাম ভোটের রেকর্ড। ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় এবং শেষ হয় রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। ভোট শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হয়।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং তরুণ ভোটারসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত রাখা, বিনামূল্যে গণপরিবহন চালু করা এবং সব শিশুর জন্য সেবা নিশ্চিত করা। এসব কর্মসূচির অর্থায়নের জন্য তিনি ধনীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন। এক বছর আগেও তুলনামূলকভাবে অল্প পরিচিত এই রাজনীতিক, শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও ব্যক্তিত্বের জোরে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেন।