
ছবি সংগৃহীত
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। অথচ মাত্র এক বছর আগেও এমন দৃশ্য ছিল প্রায় অকল্পনীয়। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শত্রু হিসেবে বিবেচিত এই ব্যক্তি আজ পরিণত হয়েছেন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রে। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১১টায় হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে তার তিন দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর।
আল শারার এই সফর শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং এটি এক নাটকীয় পরিবর্তনের প্রতীক—এক অসাধারণ রাজনৈতিক রূপান্তরের গল্প। কারণ, একসময় তিনি ছিলেন সিরিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন নুসরা ফ্রন্টের নেতা, যা আল-কায়েদার সিরীয় শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১ কোটি ডলার—যে কেউ তার অবস্থান জানাতে পারলে পুরস্কার পেতেন। অথচ আজ সেই সাবেক যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডারই বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, যাকে স্বাগত জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর দেশটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আল শারা। তিনি ত্যাগ করেন নিজের পুরোনো নাম ‘আবু মুহাম্মদ আল জোলানি’ এবং এখন নিজেকে তুলে ধরছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ১৪ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়াকে আবারও বিভাজনের হাত থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় সুযোগ এখন আল শারার হাতেই। তাই ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক অবস্থানও পাল্টে গেছে—যেখানে একসময়ের শত্রুই এখন সম্ভাব্য মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলও পরিষ্কার: আল শারাকে শক্তভাবে পাশে রাখলে সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমবে এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পুনরুত্থান রোধেও তাকে কার্যকর সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
তবে আশঙ্কাও রয়ে গেছে। যদিও আল শারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদের অতীত অস্বীকার করেছেন, ক্ষমতায় আসার পরও সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা দিয়েছে। গত জুলাইয়ে সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষই তার বড় উদাহরণ। এসব সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আল শারাই এখন সিরিয়ার স্থিতিশীলতার শেষ আশার প্রতীক। কারণ, সিরিয়া স্থিতিশীল হলে মধ্যপ্রাচ্যের সার্বিক ভারসাম্যও বজায় থাকবে বলে বিশ্বাস করছে ওয়াশিংটন।
এই সফর তাই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে—১৯৪৬ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এলেন। এমন অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আহমেদ আল শারার বৈঠককে ঘিরে গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।
এর আগে গত মে মাসে রিয়াদে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। আর এবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন, আইএসবিরোধী সহযোগিতা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।