রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

বিয়ে করেই নাগরিকত্ব! জেনে নিন কোন কোন দেশে সম্ভব



ছবি সংগৃহীত

জন্মসূত্রে আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তবে আজকাল অনেকেই স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষা, ভালো চাকরি বা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ছাড়া সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়া সহজ নয়। প্রেম কিংবা বিয়ে— এখন আর দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই। কেউ ভালোবাসার টানে বিদেশি জীবনসঙ্গী বেছে নেন, আবার কেউ বিয়ের মাধ্যমে নতুন দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ খোঁজেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো— বিয়ের মাধ্যমে কি সত্যিই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব?

উত্তর হলো, হ্যাঁ— সম্ভব। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যেগুলোর নাগরিককে বিয়ে করলে তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। কোনো দেশে এই প্রক্রিয়া বেশ সহজ, আবার কোথাও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন দেশে বিয়ে করেই বৈধভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়—

ব্রাজিল
ব্রাজিল বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম উদার দেশ। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এই দেশে যদি আপনি কোনো ব্রাজিলিয়ান নাগরিককে বিয়ে করেন এবং এক বছর একসঙ্গে বসবাস করেন, তাহলে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া ব্রাজিল দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয়, তাই বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে না।

স্পেন
দক্ষিণ ইউরোপের দেশ স্পেনে বিয়ের মাধ্যমে মাত্র এক বছরের মধ্যেই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। স্প্যানিশ আইনে বলা আছে, কোনো স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করে তার সঙ্গে এক বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। নাগরিকত্ব পেলে লাতিন আমেরিকা, ফিলিপাইন ও পর্তুগালের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধাও মেলে। তবে এজন্য স্প্যানিশ ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা, বৈধ বিবাহের সনদ এবং একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ দেখাতে হয়।

ফ্রান্স
ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পেতে হলে ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করে অন্তত চার বছর একসঙ্গে ফ্রান্সে থাকতে হয়। যদি ফ্রান্সের বাইরে বিয়ে হয়, তবে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। নাগরিকত্ব পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সুবিধা পাওয়া যায়।

সার্বিয়া
সার্বিয়ার নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছর বিবাহিত সম্পর্কে থেকে এবং দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। যদিও নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ হয় না, তাই তুলনামূলক সহজেই পাসপোর্ট পাওয়া যায়। তাছাড়া সার্বিয়ায় জীবনযাপনের খরচও তুলনামূলক কম।

পর্তুগাল
পর্তুগিজ নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছর বিবাহিত থাকলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়, এমনকি দেশটিতে বসবাস না করলেও। পর্তুগিজ ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে তা বাড়তি সুবিধা দেয়।

পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছর পর এবং দেশে টানা দুই বছর থাকার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। তবে এজন্য পোলিশ ভাষার দক্ষতা থাকতে হয়। দেশটি বসবাসের জন্য সুন্দর হলেও ব্যয়বহুল; কারণ এখানে আয়কর হার ১৮ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।

তুরস্ক
তুরস্ক অনেকের স্বপ্নের দেশ। তুর্কি নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছর বৈধভাবে একসঙ্গে থাকলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। ভাষা বা সংস্কৃতি জানা বাধ্যতামূলক নয়। তাছাড়া তুরস্কের পাসপোর্ট দিয়ে ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ফ্রি বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়।

কেপ ভার্ড
পশ্চিম আফ্রিকার মনোরম দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ডে কোনো নাগরিককে বিয়ে করার পরই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। প্রক্রিয়াটি বৈধ ও তুলনামূলক সহজ, তাই সময়ও বাঁচে।

সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড সাধারণত কঠোর অভিবাসন নীতির দেশ হলেও বৈধ বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। তিন বছর বিবাহিত থাকা এবং পাঁচ বছর দেশটিতে বসবাসের পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। এমনকি দেশের বাইরে থাকলেও ছয় বছর বিবাহিত সম্পর্ক থাকলে আবেদন করা সম্ভব। দেশটির নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া সাধারণত দ্রুত সম্পন্ন হয়।

বিয়ের আগে যা জানা জরুরি
বিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সত্যিকারের ভালোবাসা যদি বিদেশি জীবনসঙ্গীর সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং সেই সম্পর্ক নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়, তবে তা এক সুন্দর সম্ভাবনা হতে পারে। তবে শুধু নাগরিকত্বের জন্য বিয়ে করলে সম্পর্ক কাগজে সীমাবদ্ধ থেকে যায়— তাতে কখনো মানসিক শান্তি পাওয়া যায় না।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!