
ঘুমের সময় নাক ডাকা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। অনেকেই একে তেমন গুরুত্ব না দিলেও নিয়মিত নাক ডাকা হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যার লক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নাক ডাকার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে ঘুমের ব্যাঘাত, নিঃশ্বাসে জটিলতা কিংবা স্লিপ অ্যাপনিয়া নামক রোগ।
কেন হয় নাক ডাকা?
ঘুমের সময় যখন নাক বা মুখ দিয়ে বাতাস চলাচলের পথ আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখন আশপাশের নরম টিস্যু কেঁপে ওঠে। এই কম্পনের ফলেই তৈরি হয় নাক ডাকার শব্দ। বিষয়টি সাধারণ মনে হলেও, এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে:
নাক বন্ধ থাকা: সর্দি, অ্যালার্জি বা নাকের হাড় বাঁকা থাকলে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এতে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে গিয়ে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।
গলার পেশি ঢিলে হয়ে যাওয়া: গভীর ঘুম, মদ্যপান বা ঘুমের ওষুধ সেবনে গলার পেশি ঢিলে হয়ে গিয়ে শ্বাসনালি আংশিকভাবে বন্ধ হয়। তাতেই নাক ডাকার শব্দ হয়।
অতিরিক্ত ওজন: গলা ও ঘাড়ে চর্বি জমে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে।
চিত হয়ে ঘুমানো: এই ভঙ্গিতে জিভ পেছনে সরে গিয়ে শ্বাসনালিকে আটকে দিতে পারে।
বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে।
কবে চিন্তার কারণ?
মাঝে মাঝে নাক ডাকা খুব স্বাভাবিক। তবে প্রতিদিন উচ্চ শব্দে নাক ডাকা, ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া কিংবা ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা হলে তা হতে পারে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া-র লক্ষণ।
এই রোগে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে যায়, শরীর ঠিকমতো অক্সিজেন পায় না। এর ফলে মাথাব্যথা, মনোযোগে ঘাটতি এবং দিনভর ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
সমাধান কী?
নাক ডাকার সমস্যা কমাতে কিছু অভ্যাস বদল এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ প্রয়োজন:
ঘরোয়া উপায়:
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অ্যালকোহল ও ঘুমের ওষুধ পরিহার
পাশ ফিরে ঘুমানো
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো ও জাগা
পানি বেশি করে পান করা
ঘরের ধুলাবালি পরিস্কার রাখা
প্রয়োজনে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার
চিকিৎসা সহায়তা:
নাক বন্ধ থাকলে স্প্রে বা স্যালাইন ব্যবহার
নাকের গঠনগত সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে CPAP মেশিন বা ডেন্টাল ডিভাইস ব্যবহার
গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে
পরামর্শ
নাক ডাকার বিষয়টি অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু নিয়মিত ও উচ্চ শব্দে নাক ডাকা হলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ, এটি আপনার ঘুম ও শরীরের সার্বিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলতে পারে। অভ্যাস পরিবর্তন ও সচেতনতা অনেক সময়ই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম।







