রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

সুপার ওভারের নাটকীয়তায় ভারত ‘এ’ দলকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ ‘এ’



একের পর এক ক্যাচ মিস আর অদ্ভুত সব ভুলে নির্ধারিত ওভারে প্রায় নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচটি টাই করে নেয় ভারত। তবে সুপার ওভারে আর কোনো ভুলের সুযোগ রাখেননি রিপন মণ্ডল। মাত্র দুই বলেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে লাল-সবুজদের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি। যদিও সেখানে ছিল আরেক দফা নাটকীয়তা, তবে শেষ পর্যন্ত হাসিটা ছিল বাংলাদেশেরই।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) কাতারের দোহায় এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার্সের সেমিফাইনালে ভারত ‘এ’ দলকে সুপার ওভারে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

শিরোপার মঞ্চে পা রাখার লড়াইয়ে বড় সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চারটির বেশি ক্যাচ মিস করে ভারতের পথ সহজ করে দেয় ফিল্ডাররা। শেষ ওভারে জমে ওঠে সর্বোচ্চ নাটকীয়তা। ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান, বল করতে আসেন রাকিবুল হাসান। ১৭৯ রানে ৫ উইকেট হারানো ভারত তখন ভরসা রাখে নেহাল ওয়াধেরা ও আশুতোষ শর্মার ওপর।

প্রথম দুই বলে ২ রান নেওয়ার পর তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন আশুতোষ। চতুর্থ বলেও তার স্ট্রেট ড্রাইভ উঠেছিল সোজা জিসান আলমের হাতে। কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়ে বল বাউন্ডারিতে ঠেলে দেন তিনি। শেষ দুই বলে ভারতের দরকার পড়ে ৪ রান। তখন নিয়ন্ত্রণে ফেরেন রাকিবুল। পঞ্চম বলে ইয়র্কার লেংথে বোল্ড করেন আশুতোষকে। শেষ বলে ব্যাটে-বলে সংযোগই করতে পারেননি হার্শ দুবে। ফিল্ডার বল থ্রো করার আগেই দুই রান সম্পন্ন করেন দুই ব্যাটার। তবে জিততে ভারতের প্রয়োজন ছিল থ্রো স্টাম্পে লাগা। কিন্তু আকবর আলী স্টাম্পে আঘাত করতে ব্যর্থ হন। সুযোগ নিয়ে ভারত আরও একটি রান নিয়ে ম্যাচ টাই করে। অথচ আকবর হাতে বল রেখে দাঁড়িয়ে থাকলেই ১ রানের জয় নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশের। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভারেই সব হতাশার প্রতিশোধ নেন রিপন মণ্ডল। প্রথম বলেই ইয়র্কারে বোল্ড করেন জিতেশ শর্মাকে। দ্বিতীয় বলেও একই লেংথে মারতে গিয়ে অফে ক্যাচ দেন আশুতোষ। নিয়ম অনুযায়ী দুই উইকেট পড়ায় বাকি বল আর খেলতে পারেনি ভারত। ফলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১ রান। কিন্তু সেখানেও নাটক! ইয়াসির আলী প্রথম বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন। এরপর আসেন আকবর আলী। তাকে কিছুই করতে হয়নি—সুযোগ করে দেয় ভারতই। বোলার সুযশ শর্মার প্রথম ডেলিভারিই যায় ওয়াইড হয়ে, আর তাতেই জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে হাবিবুর রহমান সোহান ও এসএম মেহেরবের ব্যাটিং ঝড়েই ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। হাবিবুর ৪৬ বলে ৫ ছক্কা ও ৩ চারে করেন ৬৫ রান। মেহেরব ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন। জিসান আলম ১৪ বলে ২৬ এবং ইয়াসির ৯ বলে ১৭ রান করেন। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন গুরজাপনিত সিং (৩৯ রান খরচায়)।

১৯৫ রানের টার্গেটে ভারত শুরুতেই চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। রিপনের প্রথম ওভারেই বৈভব সূর্যবংশীর ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। পরের ওভারে মেহেরবকে দু’টি ছক্কা মারেন মাত্র ১৪ বছরের এ ব্যাটার। তৃতীয় ওভারেও প্রিয়াষ্ণ আরিয়া মারেন দুটি ছক্কা। মাত্র তিন ওভারেই ভারত তোলে ৪৯ রান। চতুর্থ ওভারে আব্দুল গাফফার সাইলাইন সূর্যবংশীকে ফিরিয়ে দেন—১৫ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৩৮ রানে থামে তার ইনিংস।

পরে কিছুটা ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে আবু হায়দার রনি আউট করেন নামান ধীরকে (১২ বলে ৭)। তবে আরিয়া একপ্রান্ত ধরে ব্যাট চালিয়ে যান। রাকিবুল দশম ওভারে তাকে ফেরালে (২৩ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪) ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে আসে বাংলাদেশের। কিন্তু ক্যাচ মিসের পরিমাণ বাড়তে থাকে, আর ভারত ফিরে আসে ম্যাচে। জীবন পেয়ে জিতেশ শর্মা করেন ২৩ বলে ৩৩ রান। নেহাল অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ৩২ রানে। ফিল্ডারদের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাই করে—তবে সুপার ওভারে আর টিকতে পারেনি।

আগামী ২৩ নভেম্বর ফাইনালে বাংলাদেশ ‘এ’-র প্রতিপক্ষ হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ ও পাকিস্তান শাহিন্সের মধ্যকার জয়ী দল।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!