রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

জামিয়া গহরপুরে শিক্ষকতায় অর্ধশতাব্দী পূর্তি—দু’জন গুণী আলেমকে “পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননা–২০২৫” প্রদান



বরেণ্য বুযুর্গ শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হাফিজ নুরউদ্দিন আহমদ গহরপুরী (রহ.)–এর স্মৃতিধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া গহরপুর সিলেটে দু’জন প্রবীণ আলেমের নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষকতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহাসিক “পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননা–২০২৫”।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বাদ মাগরিব থেকে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত জামিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থী, উলামায়ে কিরাম, ফাযেলসমূহ এবং স্থানীয় গুণীজনদের উপস্থিতিতে পুরো প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে আবেগময়।

জামিয়ার দুই প্রবীণ শিক্ষক—
মাওলানা মনির উদ্দিন দত্তপুরী ও
হাফেজ শামসুল ইসলাম রতনপুরী
ধারাবাহিক অর্ধশতাব্দীর শিক্ষাসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা লাভ করেন। একই প্রতিষ্ঠানে টানা ৫০ বছর শিক্ষকতা—বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক অত্যন্ত বিরল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে অতিথিরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওলাদে রাসুল আল্লামা আযহার মাদানি (ভারত) এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খলিফায়ে গহরপুরী আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি।
বক্তারা বলেন—একই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ দশক অটল শিক্ষাসেবা—এ এক অসাধারণ ইতিহাস। এমন ঘটনা আমাদের জানা মতে আর কোনো প্রতিষ্ঠানে নেই। তাই এ সম্মাননা শুধু তাদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়; বরং দেশের শিক্ষা–ঐতিহ্যেরও এক অনন্য অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে দুই আলেমের জীবনের উপর নির্মিত একটি ভিজ্যুয়াল স্মারক প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তাঁদের শৈশব, জীবনের সংগ্রাম, ছাত্রজীবন ও দীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনী শেষে পুরো মাঠে নেমে আসে গভীর ভাবাবেগ ও নীরব শ্রদ্ধা।

সভাপতির বক্তব্যে জামিয়ার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা মুসলেহুদ্দিন আহমদ রাজু বলেন—আমি তাঁদের ছাত্র, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো দিন তাঁরা আমাকে শিক্ষকের মতো নয়, সহযোগীর মতো সম্মান দিয়েছেন। ছুটি নিতেও আমার কাছে আসতেন, যা আমাকে লজ্জায় ফেলতো। তাই আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি—‘আপনারা আমার শিক্ষক; প্রয়োজনে কোনো অনুমতি ছাড়াই ছুটি নিতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, জামিয়ার বয়স ৬৯ বছর। অনেকেই এসেছেন, গেছেন। কিন্তু এ দু’জন শিক্ষক তাঁদের উস্তাদের স্মৃতিবিজড়িত বাগান ছেড়ে যাননি। পাঁচ দশক ধরে তাঁরা ইলমের খেদমতে অটল—এটাই তাঁদের মহত্ব।

জামিয়ার পক্ষ থেকে দুই শিক্ষকের হাতে কুরআন শরীফ, পরিধেয় পোশাক, প্রয়োজনীয় আসবাব, সুন্নাহ গিফট, ফুযালাদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানী এবং ওমরাহসম মান খরচ প্রদান করা হয়। হাদিয়া তুলে দেন আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই বলেন—জামিয়া গহরপুর ইতিহাস অনুসরণ করে না, বরং ইতিহাস সৃষ্টি করে। আজকের এই অনুষ্ঠান তার আরেক নতুন প্রমাণ।
তাঁদের মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ দুই শিক্ষকের নিষ্ঠা ও সংযমকে পথনির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করবে।
সবশেষে শেষে আল্লামা আযহার মাদানির সমাপনি নসিহত ও মোনাজাতে মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয় এই পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননার ঐ ব্যতিক্রমী আয়োজন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!