রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিবাদের মুখে আপাতত রক্ষা ‌পেলো টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলা স্কুল



ভাষার মাসে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনের সাময়িক হলেও জয় হয়েছে লণ্ডনের বাঙালির। কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিস (সিএলএস) এর ফাণ্ডিং কর্তনের আওতায় বিপুলসংখ্যক বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় মাতৃভাষা বাংলাভাষা শিক্ষা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। তবে শেষপর্যন্ত সিএলএস এর বাজেট কর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে নীতিগতভাবে সরে এসেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। কমিউনিটির প্রচণ্ড প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় লেবার নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার কাউন্সিলের ফুল কাউন্সিল মিটিং চলাকালেও টাউন হলের সম্মুখে কাউন্সিলকে পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য করতে বাঙালিদের নেতৃত্বে জড়ো হয়েছিলো বারার বিপুলসংখ্যক মানুষ। ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে নির্বাহী মেয়র জন বিগস উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয় যে, এক বছরের জন্য সিএলএস’র ফান্ডিংয়ে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। মেয়র এবং লিড-মেম্বারগণ মিলে একটি ওয়াকিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করবেন যাদের দায়িত্ব হবে কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিস রিভিউ করা।

রিভিউকারীরা কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিসের বর্তমান অবকাঠামোর একটি টেকসই বিকল্প অন্বেষণ করবেন এবং যারা এই সার্ভিস ব্যবহার করবেন তাদের কাজ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা নেয়া যায় কিনা তাও বিবেচনা করবেন। আর রিভিউ এর উদ্দেশ্য হলো কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ শিক্ষা প্রদান অব্যাহত রাখা এবং এ খাতে যে অর্থ ব্যয় হয় তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগে। রিভিউ চলাকালীন কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিস প্রদানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না বলেও আশ্বাস প্রদান করা হয়।

সম্প্রতি রি-মডেলিংয়ের নামে কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিস বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছিলো টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল। তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বারার বিপুলসংখ্যক বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাসহ ১১টি কমিউনিটির নিজেদের ভাষা চর্চার সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতো। কাউন্সিল যাতে জনবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, সে লক্ষ্যে বুধবার ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ের সময়ে টাউন হলের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক প্রতিবাদী মানুষ। তবে প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হলো কাউন্সিল। কাউন্সিলের এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মূলে কাজ করেছে কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূচনা করে বাংলাদেশী টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের নেতৃত্বে বারার প্রায় সবকটি কমিউনিটির মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করে। মাতৃভাষার মতো জাতিগত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করে বৃটেনের বাংলা মিডিয়া। গত সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক সুরমার পক্ষ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সবকটি সংবাদপত্র বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে তোলে ধরে। টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ টকশোর আয়োজন করে। সুরমার গোলটেবিল বৈঠকে নির্বাহী মেয়র জন বিগস উপস্থিত থেকে এব্যাপারে বিবেচনার আশ্বাস প্রদান করেন।

বুধবারের ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি সাপ্তাহিক সুরমাকে বলেন, কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে আমরা আপাতত কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। এর কারণ, রিভিউ করার জন্য যাদের নিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে তারা কমিউনিটির প্রয়োজন ও আশা-আকাঙক্ষা সম্পর্কে কতটুকু ওয়াকিবহাল থাকবেন তা বলা যাচ্ছে না। যারা রিভিউ গ্রুপে থাকবেন সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরী।

উল্লেখ্য, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ১৯৮২ সাল থেকে এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির ছেলেমেয়েদের বাংলা, উর্দু, চাইনীজ, আরবী, মেরিডিয়ান, রাশিয়ান, লিথুনিয়ান ও সোমালিয়ান ভাষা শিক্ষা প্রদানের জন্য কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস চালু করে। এ প্রজেক্টের আওতায় শতাধিক শিক্ষক ও কাউন্সিলের কর্মকর্তারা নিয়োজিত রয়েছেন। সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের আমলে এ প্রজেক্টে ১.২ মিলিয়ন পাউণ্ডের বাজেট বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু বর্তমান মেয়রের গত মেয়াদে এ সার্ভিসে বাজেট কর্তন করে তা ৬শ হাজার পাউণ্ডে নিয়ে আসা হয়। সম্প্রতি এ প্রজেক্টকে ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে কাউন্সিলের বাজেট সাশ্রয়ের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে। তবে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসের পুরো বাজেট কর্তনের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ আন্দোলনে কাউন্সিলের নেতৃত্বদানকারী লেবারদলীয় বাঙালি কাউন্সিলারদের কোনো সরব ভূমিকা দেখতে না পেয়ে কমিউনিটিতে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!