সুনামগঞ্জে করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালসহ ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীন বিভাগে রোগীর সংখ্যা বহুগুণ কমেছে। সর্দি, কাশি, জ্বরসহ সাধারণ রোগ নিয়ে হাসপাতালে না আসার সরকারি আহ্বান এবং করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে রোগীর সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগের সংশ্লিষ্টরা। সেনাবাহিনী নামার পর রোগীর সংখ্যা আরো কমেছে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতি মাসে জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ১২-১৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ৫৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তাছাড়া ইনডোরে ৭-৮ হাজার পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।
সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ১২ হাজার ২৩৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই মাসে আউটডোরে ৫৩ হাজার ৯৪৩ জন এবং ইনডোরে ৭ হাজার ৪৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ১২ হাজার ৫৮১ জন। ওই মাসে আউটডোরে ৪৭ হাজার ৭৩ জন এবং ইনডোরে ৬ হাজার ৮৫৩ জন রোগি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিটি হাসপাতালে ইমার্জেন্সি, আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও গত ১০ দিন ধরে রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে অনেক কমে এসেছে রোগীর সংখ্যা। রোগীর উপস্থিতি কম থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়েও এখন উন্নত দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য সময় গড়ে প্রতিদিন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে জরুরি ও আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। ভর্তি থাকতেন অন্তত ১৫০ জন। কিন্তু এখন মাত্র ৩০০’র মতো রোগী আউটডোর ও জরুরি সেবা নেন। ভর্তি থাকেন মাত্র ৭০ থেকে ১০০ জন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আগে এই হাসপাতালে আউটডোর ও জরুরি বিভাগে গড়ে দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতেন। ভর্তি থাকতেন ৪০-৫০জন। এখন আউটডোরে মাত্র ২৫-৩০ জন এবং ভর্তি থাকেন মাত্র ১০-১৫ জন রোগী। এভাবে জেলার ১০টি হাসপাতালেরই একই চিত্র বলে জানানা সংশ্লিষ্টরা। তবে এই সময়ে অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে এসে অনেক রোগীই ঠিক মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ আছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ রোগ নিয়ে এখন কোনো মানুষেরই হাসপাতালে এসে বিপদ ডেকে আনার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসে মারণঘাতী করোনা মোকাবেলা প্রয়োজন। তবে জটিল রোগ নিয়ে এলে তাদের সেবা দেওয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ রোগী কমেছে। সরকারি প্রচারণা ও করোনার প্রতি আতঙ্কের কারণে মানুষ নিজ থেকেই হাসপাতালে আসা কমিয়েছেন। তবে যারা আসছেন তাদেরকে প্রয়োজনানুযায়ী চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছি। সরকারও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। যার ফলে এখন মানুষ সচেতনভাবেই হাসপাতালে প্রয়োজন ছাড়া আসছেন না। তবে প্রতিটি হাসপাতালই জনগণের চিকিৎসার জন্য উন্মুক্ত আছে।