রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৮



* মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর দৈনন্দিন খাদ্যের অন্যতম উপাদান মাছ চাষেবাদের জন্য দেশের আবহাওয়া, পানি অর্থাৎ জলাবদ্ধ ও মুক্ত জলাশয় ও পরিবেশ বলতে গেলে অনুকূল। যদিও ক্ষেতে কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ নানা কারণে মাছ চাষাবাদ ও উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দেশে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় প্রচুর। এগুলোতে পরিকলিপ্তভাবে সহজেই প্রচুর মাছ চাষ সম্ভব। বর্তমানে দেশে মাছের বার্ষিক গড় উৎপাদন ২.৬৬ মেট্রিক টন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি ভিত্তিক চাষের মাধ্যমে এই উৎপাদন ৭-৮ টনে উন্নীত করা সম্ভব। উল্লেখ্য, প্রায়ই দেখা যায়, মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে ফসলী জমিতে বিশেষ করে ধান চাষাবাদের জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ সমর্থক করা যায় না। লাভজনক মাছ চাষে বিস্তার ঘটাতে হবে বদ্ধ ও মুক্ত জলাশয়ে। আশংকার কথা, নানা কারণে প্রতি বছর দেশে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় কমছে।

* দেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসল আখ। আশার কথা দেশের জলবায়ু এবং মাটি আখ চাষের উপযোগী এবং সারা দেশেই কম বেশী চাষাবাদ সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় এবং সীমিত জায়গায় যেখানে সেখানে সহজেই আখ উৎপাদন করা যায়। দেশীয় অনেক গুলো জাত ছাড়াও বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অনেকগুলো জাত রয়েছে। প্রত্যেকটি জাতই আলাদা বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। দীর্ঘ মেয়াদী ফসল আখের বীজের জন্য ৮-১০ মাস বয়সী সতেজ সবল ও রোগমুক্ত আখ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বীজ আখ অবশ্যই শিকড়মুক্ত হওয়া উচিৎ। আখের নীচের এক তৃতীয়াংশ বাদ দিয়ে উপরের দুই তৃতীয়াংশ বীজ হিসেবে ব্যবহার করা ভালো। সাধারণত: তিন চোখ বিশিষ্ট বীজ খন্ড ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য অক্টোবরে মূল জমিতে চারা লাগানো ভালো। তবে এর আগে আখের বীজ খন্ড বীজ তলায় ৪-৮ সপ্তাহ রাখতে হয়। উল্লেখ্য, শ্রাবণ-আশ্বিন আখের চারা তৈরীর উপযুক্ত সময়।

* উৎকৃষ্ট মানের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ পেঁপে চাষাবাদের জন্য বন্যামুক্ত উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি দরকার। প্রায় সারা বছর চাষাবাদ করা গেলেও বীজ বগনের উপযুক্ত সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস। বীজ তলায় তৈরী চারা ৮-১০ সে. মি. লম্বা হলে মূল জমিতে/মাদায় রোপণ করতে হয়। প্রত্যেক মাদায় তিনটি করে চারা রোপণ করতে হয়। ফুল আসার পর স্ত্রী ও পুরুষ গাছ সনাক্তের পর সুস্থ সবল একটি স্ত্রী গাছ রেখে বাকী গুলো তুলে ফেলতে হবে। ছোট ফলগুলো পেড়ে পাতলা করে দিলে অপেক্ষাকৃত বড় ফলগুলো সহজেই বড় হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, পাতলা করার জন্য পেড়ে ফলগুলো সবজি/সালাদ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

* সারা বছর পাওয়া যায় এমন একটি ফল কলা। কলা চাষাবাদের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার। দেশে অনেক জাতের কলা রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চাঁপা কলা, সাগর কলা, সবরি কলা প্রভৃতি। সারা বছর চাষাবাদ করা গেলেও কলা চাষের/রোপণের উপযুক্ত সময় আশ্বিন-কার্তিক এবং ফাল্গুন-চৈত্র মাস। কলার চারা মাদায় রোপণ করতে হয়। বিজ্ঞান সম্মত মাদার আকার হবে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় ৫০ সে. মি. করে। চারা রোপণের ১০/১৫ দিন আগ মাদা তৈরী করে প্রতি মাদায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিভিন্ন জাতের সার। যেমন- ১০/১৫ কেজি পচা গোবর/আবর্জনা পচা সার, ৭০ গ্রাম পিএসপি, ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১২৫ গ্রাম জিপসাম এবং ১০ গ্রাম দস্তা সার মাটির সাথে মিশিয়ে রেখে চারা রোপন করলে উৎপাদন ভালো হয়। উল্লেখ্য, চারা রোপণের আগে মাদার সার মিশ্রিত মাটি উলট-পালট করে দেয়া ভালো।

* জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল তরমুজ চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের জন্য উপযুক্ত সময় পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বর-মধ্য ফেব্রুয়ারী) মাস। এঁটেল দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যদিও বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ করা যায়। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য একর প্রতি ১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। বীজ অষ্কুরোদগম করে মাদায় রোপন করতে হয়। সাধারণত: বীজ ভিজিয়ে খড় বা পাটের বস্তায় জ্জ দিন পেচিয়ে রাখলে বীজ অষ্কুরিত হয়। তরমুজ মাদায় রোপন করতে। প্রতি মাদায় অষ্কুরিত ৩/৪ টি বীজ রোপণ করা যায়। মাদার পরিমাণ হবে দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও গভীরতায় ২০ ইঞ্চি করে। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ৫ ফুট এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭ ফুট । তরমুজ গাছের পাতা ৫-৬ টি হলেই আগা ভেঙ্গে দিতে হবে। তারপর শাখা গজালে প্রতি গাছে সবল-সক্রিয় তিনটি শাখা রেখে অবশিষ্টগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে। উপযুক্ত পরিচর্যায় চাষাবাদে একর প্রতি ১৫-২০ টন তরমুজ পাওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, সাধারণত বীজ বপণের ৯০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়।

* মন্ত্রীসভা থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১০ ঘোষিত জাতীয় বৃক্ষ আমের কলমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। র্পূব প্রস্তুতকৃত গর্তে আমের কলমের চারা যত্নসহকারে রোপণ করতে হবে। গরু ছাগলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে ঘের/বেড়া দিতে হবে। ঝড়-ঝঞ্চায় যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য শক্ত খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হয়। আমের কলমের চারার ফুল (মুকুল) এলে প্রথম তিন বছর তা না রেখে ভেঙ্গে দিতে হবে। এতে পরবর্তীতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে এবং গাছ পুষ্ট হবে। এ ছাড়া অবশ্যই আম গাছে (এবং অন্যান্য ফল গাছে) শুষ্ক ও খরা মৌসুম গাছের গোড়ায় মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে (যাতে মাটি পানি ধারণ করতে পারে) মাটির অবস্থা বুঝে পানি সেচ প্রদান করতে হবে। একই সাথে গাছের গোড়ায় যাতে কোনো আগাছা ও পরগাছা না থাকে চাষাবাদে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

* জীবন রক্ষাকারী বৃক্ষ হিসেবে অভিহিত নারকেলের শাঁস ও পানি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। চাষাবাদে বীজের জন্য ব্যবহৃত নারকেল গাছ থেকে নীচে ফেলা যাবে না। যত্নে গাছ থেকে সংগ্রত করতে হবে। অন্য কথায়, বীজের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে নারকেলে শক্ত আঘাত/আছাড় দেয়া যাবে না। অষ্কুরোদগম তরান্বিত করতে হলে বাছাইকৃত ও যত্মে সংরক্ষিত নারকেলের সবচেয়ে চওড়া তলের দিকে বোঁটার কাছে ধারালো দা দিয়ে খোসা কিছুটা কেটে রাখতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এতে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে নারকেলের অষ্কুরোদগম হয়ে থাকে। ১৯ নভেম্বর ২০১০

লেখক: সম্পাদক- আনোয়ারা  (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!