রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ২০



 জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় মশলা পেঁয়াজ চাষাবাদের উপযুক্ত সময় অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস। পূর্ব প্রস্তুতকৃত জমিতে সরাসরি বীজ বপণ অথবা চারা রোপণের মাধ্যমে এর চাষাবাদ করা যায়। চারা রোপণের ক্ষেত্রে চারার বয়স ৮-১০ সপ্তাহ হলে ভালো হয়। তবে এরূপ চারা রোপণের আগে অগ্রভাগের পাতা ও শিকড় কেটে নিতে হয়। চারা রোপণের ক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪-৫ ইঞ্চি। সাধারণত: বীজ বপণের ১৫০-১৬০ দিন পর পেঁয়াজ উত্তোলন করা যায়। পেঁয়াজের দু’টি ভালোজাত হলো: এক. স্বর্ণালাটিম ফরিদপুরী এবং দুই. গোল্ডেন বল।
উল্লেখ্য, স্বর্ণালাটিম পেঁয়াজ প্রায় সারা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় জাত। এ জাতের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি আকারে ছোট এবং একগোলা তবে খুব ঝাঁঝালো। পক্ষান্তরে গোল্ডেন বল পেঁয়াজ উচ্চ ফলনশীল, আকারে বড় এবং ঝাঁঝ মাঝারি ধরণের।

 অনেক সময় পেঁপে গাছে ফলন কম হয়। পরগায়ণের অভাবই এর অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করেন। এ ক্ষেত্রে বেশী ফলনের জন্য কৃত্রিম পরাগায়ন করা যেতে পারে। এর জন্য সকালে সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাঁপড়ি গুলো ছিঁড়ে ফেলে পুংকেশর স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের ওপর ধীরে ধীরে ২/৩ বার ছোঁয়াতে হবে। এভাবে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫/৬টি স্ত্রী ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন করা যেতে পারে।

 চাষাবাদে বীজ সংগ্রহ ও বপণ একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার। চাষাবাদের জন্য আতা ফলের বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো, অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং বীজ বপণের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারী। কমলার বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো, ডিসেম্বর-জানুয়ারী এবং বীজ বপণের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারী। একই ভাবে পেঁপেরও বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো, ডিসেম্বর-জানুয়ারী এবং বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারী। এ ছাড়া সুপারীর বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং বপণের উপযুক্ত সময় হলো, নভেম্বর-ডিসেম্বর। উল্লেখ্য, উপযুক্ত সময়ে বীজ সংগ্রহ ও বপণ চাষাবাদের জন্য অবশ্য করণীয়। বিদ্যুষী মহিলা খনার কথায় – ‘অসময়ে কৃষি করা, লাভ নেই, ক্ষতি ছাড়া।’

 চাষাবাদে জৈব সারকে বলা হয়, জমির/মাটির প্রাণ। কেননা জমিতে যতই রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হোক না কেন, জৈব সার না থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না, এমন মতবাদ অভিজ্ঞ চাষীদের। জমিতে জৈব সারের যোগান দিতে প্রচুর পরিমাণ গোবর, পচা পাতা- লতা, খড়-কুটো এবং সবুজ সার প্রয়োজন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মাসকলাই, ধৈষ্ণা, শনপটি বীজ বপণ করে ৪০-৪৫ দিন পর চাষ-মই দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিলে সবুজ সার প্রয়োগ করা যায়। উল্লেখ্য, চাষাবাদে রাসায়নিক সারের পরিমাণ কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো সব দিক থেকেই লাভজনক। এতে ভালো ফলনের পাশাপাশি চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ভালো থাকবে।

 কলা চাষাবাদের জন্য চারা নির্বাচনের যত্মবান হওয়া উচিৎ। রোগ বালাই নেই, সুস্থ-সবল এবং ফলন ভালো দেয় এমন গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া কলা গাছের চারা সংগ্রহের পর শিকড় কেটে পরিস্কার করে নিতে হবে। এতে চারা লাগানোর পর নতুন শিকড় গজাতে সময় কম লাগে এবং গাছ সতেজ-সবল হিসেবে বেড়ে ওঠে। উল্লেখ্য, ডিসেম্বর-জানুয়ারী, জুলাই এবং আগষ্ট বছরের এই চার মাস ব্যতিত যে কোনো সময় কলা গাছের চারা রোপণ করা যেতে পারে।

 শীতকালীন ফুল হলো- গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, পপি, কসমস, পটুলেকা, স্যালভিয়া, ক্যালেনডুলা, প্যানজি, অ্যাস্টার প্রভৃতি। এগুলো চাষাবাদের জন্য পূর্ব প্রস্তুতকৃত বীজ তলায় কার্তিক মাসের দিকে বীজ বপণ করতে হবে। ফুল গাছের বীজতলায় বেশ সার দিতে বিশেষজ্ঞরা নিষেধ করে থাকেন। বেশী সার দিলে অনেক সময় নাকি গাছে ফুল নাও ধরতে পারে।

 বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলেপড়া রোগ ও শিকড়ের গিঁটরোগ টমেটো ও বেগুনের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। আশংকার কথা, মাটিবাহিত ঢলেপড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একমাত্র বন্য বেগুনের সংগে ভালো ও উন্নতমানের টমেটো ও বেগুনের জোড় কলমের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। অভিজ্ঞ চাষী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর মাধ্যমে এ জোড় কলম পদ্ধতি শিখে নেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, বন্য বেগুনের মধ্যে পীত বেগুন ও কাটা বেগুন ঢলেপড়া রোগ ও শিকড়ে গিঁটরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।

 জনপ্রিয় ফল তরমুজ চাষাবাদের জন্য অগ্রহায়ণ-মাঘ মাস বীজ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে অনেক সময় আগাম অর্থাৎ শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ রোপণ করেও ভালো ফলন পাওয়া যেতে দেখা যায়। সাধারণত: বীজ রোপণের ৭৫-৮০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়। তরমুজের বীজ মাদায় রোপণ করতে হয়। ৬/৭ ফুট দূরত্বের প্রতি মাদায় ৩/৪টি বীজ রোপণ করা যেতে পারে। চারা গজানোর পর সুস্থ-সবল ২টি চারা মাদা প্রতি রেখে বাকীগুলো উপড়ে ফেলা ভালো। উল্লেখ্য, একটি ভালো মানের হাইব্রিড তরমুজ ‘ভিক্টরি’। এর বৈশিষ্ট্য হলো: বাইরের রং হাল্কা সবুজ, পাকলে পরে এর আঁশ টকটকে লাল এবং মিষ্টি হয়। এছাড়া সাধারণত: প্রতিটি ফলের আকার ৮-১০ কেজি পর্যন্ত হয়।

 শাক-সবজির চাষাবাদে বেড প্রথায় লাইনে বীজ/চারা রোপণ করা ভালো। এতে গাছের যত্ন ও পরিচর্যায় বেশ সুবিধা হয়। তবে শাক-সবজির বেড/ক্ষেত ভেজা অবস্থায় এতে হাটা-চলা ঠিক নয়। বেড/ক্ষেত শুকিয়ে আসার পর যত্ন-পরিচর্যা অথবা শাক-সবজি আহরণের জন্য বিচরণ করা যেতে পারে।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন