শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাতকে ভাইয়ের হাতে বোন খুন: খুনী ভাই গ্রেফতার



ছাতকে আলোচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইজা বেগম ইভা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারী ইভার সহোদর ভাই খুনী রবিউল হাসানকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। জানাগেছে, শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাতে কৌশলে থানায় নিয়ে এসে খুনিকে আটক করে পুলিশ। এ রাতেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুন করার কথা স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ইভার আপন ভাই রবিউল হাসান।

পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, খুনী রবিউল হাসান উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শী গ্রামের খালেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। সেসহ একই মামলায় দক্ষিণ কুর্শী গ্রামের লিকসন উরফে আক্কেল মিয়া ও হোসেন আলী দীর্ঘদিন হাজতে ছিলো। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্ত হয়ে খালেদ হত্যা মামলার বাদী আহমেদ আলী ও তার পরিবারকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে। তাদের ধারনা আরো একটি হত্যাকান্ড ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে। এতে করে উভয় মামলা আপোষে নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে।

পরিকল্পনা মতে রবিউল হাসানের দু’ বোনের মধ্যে যে কোন একজনকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়। অবশেষে খুনি রবিউল হাসান ও তার সহযোগিদের নির্মম পরিকল্পনার শিকার হয় বোনদের মধ্যে রড় ইজা বেগম ইভা। ঘটনার দিন বিকেল থেকেই হত্যার বিভিন্ন ছক তৈরী করতে থাকে রবিউল ওতার সহযোগিরা। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে মোবাইলের এমবি কার্ড আনার জন্য ২০ টাকা ও আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আরো ১০ টাকা দিয়ে বোন ইভাকে গ্রামের একটি দোকানে পাঠায় রবিউল। সেখানে রাস্তার পাশে একটি সিএনজি নিয়ে পূর্ব থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে তার সহযোগিরা। এক পর্যায়ে রাস্তায় উঠতেই ঝাপটে ধরে ইভাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। পরে কুর্শি-সিরাজগঞ্জ রাস্তার পাশে নিয়ে একটি পলিথিনের উপর ফেলে ইভার মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেয় খুনীরা। সহযোগি খুনীরা তার হাত-পা শক্ত করে ধরে রাখলে নরপশু ভাই রবিউল রামদা দিয়ে পর পর দু’টি কুপ দেয়। এতে ইভার দেহ থেকে মাথা ছিটকে পড়ে।

এসময় খুনী রবিউল মনে করে এ খুনের ঘটনায় যদি সহকর্মীরা বেঁচে যায় সে জন্য তার নির্দেশে সহযোগিরা ইভার মাথা বিহীন নিথর দেহে উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে বাধ্য হয়। অবশেষে রাস্তার পাশের একটি ডুবন্ত জমিতে মাথা এবং রাস্তা সংলগ্ন জমিতে ইভার লাশ ফেলে চলে যায় খুনীরা। বোনকে খুন করে ঠান্ডা মাথার খুনী রবিউল বাড়িতেই চলে এসে স্বাভাবিকভাবে পরিবারের লোকজনদের সাথে বোন ইভাকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। আর আচরণ এমন ছিলো যে কোনভাবে তাকে কেহই সন্দেহের চোখে দেখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু তার এ নাটকীয় আচরণ দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি। অবশেষে বোনকে খুনের দায়ে তাকে হাতকড়া পড়তে হয়।

সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ছাতক সার্কেল রনজয় চন্দ্র মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, হত্যাকান্ড নিয়ে ইভার পরিবারের সাথে একাধিকবার কথা বলেন তিনি। তাদের মধ্যে রবিউলের কথাবার্তায় ছিলো অনেকটাই অসংগতিপূর্ন। এ সময় থেকেই তিনি চাঞ্চল্যকর ইভা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও খুনীদের সনাক্ত করতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। ইভার বাড়িতে নিয়মিত পুলিশ প্রহরা দিয়ে পরিবারের লোকজনের উপর নজর রাখতে নির্দেশ দেন তিনি। তার কৌশল ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আলোর মুখ দেখে।

তিনি জানান, শুক্রবার মামলা দায়েরের কথা বলে ইভার মা-বাবা ও ভাই রবিউলকে থানায় নিয়ে আসেন। গভীর রাতে তাদের পৃথক-পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ইভা খুনের লোমহর্ষক কাহিনী। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বোন ইভাকে খুন করে সে। পরে রবিউল হাসানের কথামতো ইভা বেগমের মাথা ক্ষেতের জমি থেকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার শিশু ইভা বেগমকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি রবিউল হাসান বিজ্ঞ আদালতেও ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। তার সহযোগী অন্যান্য খুনীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রহস্য উদঘাটন ও খুনীদের সনাক্ত করতে থানার ওসি (তদন্ত) সহ পুলিশ কর্মকর্তাগণ তার সাথে ছিলেন বলে জানিয়েছেন এএসপি রনজয় চন্দ্র মল্লিক।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গ্রামের একটি দোকান থেকে মোবাইলের এমবি কার্ড ক্রয় করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ইজা বেগম ইভা। নিখোঁজের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গ্রামের রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে ইভার মাথাবিহীন লাশ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় লোকজন খবর দিলে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইভা দক্ষিণ কুর্শী গ্রামের মোশাহিদ আলীর কন্যা ও দক্ষিণ কুর্শী পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় শনিবার নিহত ইভার পিতা মোশাহিদ আলী বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!