
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য এখন পুলিশের কাছে পূর্ণ আইনগত বৈধতা রয়েছে। এতদিন পুলিশ এই বিষয়ে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও এখন থেকে আইন প্রয়োগে আর কোনো বাধা থাকবে না। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি গোপনে কোথাও বৈঠক, মিছিল কিংবা সমাবেশ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মাঝে মাঝে মিছিল করলেও পুলিশ অনেক সময় আইনি প্রশ্নে পড়ে তাদের গ্রেপ্তারে অনিচ্ছুক ছিলেন। তবে বর্তমানে শুধু মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ড নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক বা ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কেউ বক্তব্য দিলে তাকেও গ্রেপ্তার করা যাবে। এমনকি যাঁরা বিদেশ থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট বা মন্তব্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।
পুলিশ এখন থেকে পেনাল কোডের ১৮৮ ধারার আওতায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল রোববার জানান, আজ সোমবার সরকারি আদেশ জারি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। এরপর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হবে যাতে কেউ আদেশ অমান্য করলে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়।
তিনি আরও বলেন, যদিও আওয়ামী লীগ এখনো কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হয়নি, তবুও তাদের অবস্থান এখন নিষিদ্ধ দলের মতোই। ফলে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা থাকবে না।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ আইন মেনেই কাজ করছে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেভাবেই আমরা কাজ করব।”
সূত্র জানিয়েছে, এতদিন ফেসবুক বা ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে পোস্ট বা মন্তব্য করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে এখন সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগপন্থী কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এসব ঘটনায়ও গ্রেপ্তার করা যাবে।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কেউ যদি ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পক্ষে পোস্ট দেয় বা মন্তব্য করে, অথবা গুজব ছড়ায়, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে সাইবার সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, যারা বিদেশে বসে এসব কর্মকাণ্ড করবেন, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত ও মামলা হবে। দেশে এলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। অর্থাৎ, সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড হলে তা সরকারের আদেশ অমান্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে পুলিশ এখন আর আইনি জটিলতায় পড়বে না। সূত্র বলছে, সরকার আগেই দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সংগঠন নিষিদ্ধ না থাকায় গ্রেপ্তারে পুলিশ দ্বিধায় ছিল। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে পুলিশ এখন এ বিষয়ে পূর্ণ বৈধতা পেয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক গতকাল সেগুনবাগিচায় তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। কেউ এ ধরনের সংগঠনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে এসপিদের তাকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এই বিষয়ে সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা সংবাদ মাধ্যমে জানান “কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ না হলে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ না থাকলে গ্রেপ্তার করা যায় না। তবে এখন যেহেতু সরকারি আদেশ রয়েছে, তাই পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুসারে যদি কেউ সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে এবং ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।”
এদিকে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ফেসবুক পেজ ও অনলাইন কার্যক্রমও বন্ধ করা হচ্ছে। গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ফলে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজসহ সব সাইবার কার্যক্রম বন্ধ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
গতকাল রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটি জারি হলেই বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চিঠি পাঠিয়ে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট পেজগুলো নিষিদ্ধ করা হবে।”
উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে, যার ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।




