
ইসলামি শরিয়তে ব্যভিচার ও ধর্ষণ শিরক ও হত্যার পর সবচেয়ে বড় ও ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে গণ্য। কুরআন ও হাদিসে এ দুই অপরাধের জন্য রয়েছে কঠোর এবং জনসম্মুখে শাস্তির বিধান, যাতে সমাজে নৈতিকতা রক্ষা হয় এবং অন্যরা ভয় পায় এ ধরনের জঘন্য অপরাধ থেকে।
ধর্ষণ ও ব্যভিচারের পার্থক্য
ইসলামে ব্যভিচার তখন হয় যখন উভয়পক্ষ সম্মত হয়, আর ধর্ষণে একপক্ষ হয় জোরপূর্বক নিপীড়িত। তাই ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠিন। ব্যভিচারে বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড এবং অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করা হয়।
কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত করো। শাস্তির সময় দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তা প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা নূর: ২)
আরও বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।’ (সূরা বনি ইসরাইল: ৩২)
হাদিসে রাসুল (সা.)-এর হুঁশিয়ারি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও এক বছরের দেশান্তর। আর বিবাহিতদের শাস্তি হলো পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড।’ (সহিহ মুসলিম)
এক হাদিসে এক ধর্ষণের ঘটনায় নবী (সা.) ধর্ষিতাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন এবং ধর্ষককে শাস্তি দেন। (ইবনে মাজাহ: ২৫৯৮)
ধর্ষকের শাস্তির ধরন (ইসলামি আইনে):
১. ব্যভিচারের শাস্তি:
-
অবিবাহিত ধর্ষক হলে ১০০ বেত্রাঘাত।
-
বিবাহিত ধর্ষক হলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড।
(সূরা নূর, হাদিস: ইবনে মাজাহ ২৫৫৩)
-
মুহারিবের শাস্তি:
যদি অস্ত্র দেখিয়ে বা জীবনের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করা হয়, তবে মুহারিবের শাস্তি প্রযোজ্য: হত্যা, শূলে চড়ানো, অঙ্গ কর্তন বা নির্বাসন। (সূরা মায়িদা: ৩৩) -
বলাৎকার ও পাশবিক নির্যাতন:
ফিকহ মতে বলাৎকারকারীর শাস্তি হতে পারে: পাথর নিক্ষেপ, পুড়িয়ে মারা, উঁচু স্থান থেকে ফেলে ওপর থেকে পাথর ছোঁড়া। (আস সিয়াসাতুশ শরইয়্যা) -
শিশু ধর্ষণ ও হত্যায়:
ধর্ষণে শিশুর মৃত্যু হলে অথবা ধর্ষণের আগে-পরে হত্যা ঘটলে ধর্ষকের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। অনেক ফকিহ বলেছেন, এমন ব্যক্তিকে তরবারি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। (সূরা বাকারাহ: ১৭৮, ১৯৪)
শাস্তি কেবল প্রমাণিত হলে
ইসলামে শাস্তি কার্যকর হয় অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর। নিছক সন্দেহ বা অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তি দেওয়া যাবে না। প্রমাণের তিনটি মাধ্যম:
১. অপরাধীর স্বীকারোক্তি
২. চারজন সৎ পুরুষ সাক্ষী
৩. সহায়ক হিসেবে প্রযুক্তি, তবে একমাত্র নয় (তিরমিজি: ১৪২৪)
জনসম্মুখে শাস্তির কারণ
জনসম্মুখে শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হলো—মানুষ যেন দেখে এবং ভয় পায়। এর ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে এবং অনেকে গুনাহ থেকে বিরত থাকে। কুরআনও নির্দেশ দেয়, “মুমিনদের একটি দল যেন শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।”
সমাজে ধর্ষণ ও নৈতিকতার অবক্ষয়
বর্তমানে বাংলাদেশসহ অনেক সমাজে নৈতিকতার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। শিশু পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটি শুধু জৈবিক প্রবৃত্তির বিষয় নয়, বরং একটি নৈতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় সংকট।
ইসলাম নারীদের সম্মান দিয়েছে: মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা হিসেবে। ইসলামে নারীদের সম্মান রক্ষাকে জান্নাতের চাবিকাঠি বলা হয়েছে। জাহেলি যুগে নারীদের ভোগ্য বস্তু মনে করা হতো, বর্তমান পরিস্থিতিও অনেকাংশে তা-ই।
সমাধান কী?
ধর্ষণ ও ব্যভিচার প্রতিরোধে ইসলামি শিক্ষা, পারিবারিক নৈতিকতা, এবং শরিয়তের কঠোর বাস্তবায়নই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। পাশাপাশি, জনসচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য।




