আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই শতাধিক ভিআইপি আসামি গ্রেপ্তার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও হেভিওয়েট নেতাকর্মীসহ ১৬১ জন ‘ডিভিশনপ্রাপ্ত’ হিসেবে উন্নত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকা ৫৯ জন ভিআইপি আসামির জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে একটি ‘বিশেষ কারাগার’ প্রস্তুত করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এসব আসামিকে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখলে তাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণার কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যেই আদালত প্রাঙ্গণে কিছু আসামির ওপর জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ এই কারাগারটি আগে নারীদের জন্য ব্যবহৃত হতো। ২১ জুন সেটিকে সংস্কার করে শুধুমাত্র ওই ৫৯ জন ভিআইপি আসামির জন্য আলাদা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে কোনো সাধারণ কয়েদি নেই। এদের নজরদারিতে নিয়োজিত করা হয়েছে সারাদেশ থেকে বাছাই করা চৌকস, নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য কারারক্ষীদের।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ জানিয়েছেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত ৫৬ জনের পাশাপাশি ডিভিশন না পাওয়া নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা তিন সাবেক এমপিকেও এখানে রাখা হয়েছে। এ তিনজন হলেন—সোলাইমান সেলিম, আব্দুর রহমান বদি ও ইকরামুল করিম চৌধুরী।
বিশেষ কারাগারে থাকা আলোচিত ভিআইপি আসামিদের মধ্যে রয়েছেন:
-
সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান
-
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
-
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু
-
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন
-
সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক
-
সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম
-
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম
-
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
-
জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন
-
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু
-
উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়
-
মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম
-
হুইপ আ স ম ফিরোজ
-
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
-
প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ
-
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
-
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ
-
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন
-
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী
-
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার
-
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার
-
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন
-
এবং আরও অনেকে।
তালিকায় আরও রয়েছেন ১৮ জন সাবেক এমপি যারা জনরোষের আশঙ্কায় নিরাপত্তার কারণে এখানে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, হাজী সেলিম, সাদেক খান, আলী আজম মুকুল, শাহজাহান ওমর, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মোরশেদ আলম প্রমুখ।
এছাড়া পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, এএসপি জাবেদ ইকবাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং আবুল কালাম আজাদকেও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে মোট কয়েদি আছেন ৭৭ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদি ৭৫ হাজার ৭১ এবং নারী কয়েদি ২ হাজার ৭৩২ জন। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮ হাজার ৫০১ এবং কাশিমপুর কারাগারে ৭ হাজার ৫০০ কয়েদি রয়েছেন।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি নারী বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি মমতাজ বেগম, মাসুদা সিদ্দিক রোজী, সাফিয়া খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভি রহমান। তবে একই কারাগারে আটক অভিনেত্রী শমী কায়সার ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা ডিভিশন পাননি, ফলে তারা সাধারণ বন্দিদের মতোই থাকছেন।
ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, “সালমান এফ রহমান, ইনু, মেননসহ অনেকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের তীব্র ঘৃণা রয়েছে। কেউ কেউ থুতু ছুড়ছে। তারা গণহত্যা, দুর্নীতি ও লুটপাটের দায়ে অভিযুক্ত। তবে রাষ্ট্র সব আসামির নিরাপত্তা দিতে বাধ্য এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”