রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ নিয়ে নতুন সমঝোতা



ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কৌশলগত খনিজ সম্পদকে ঘিরে। দীর্ঘদিন নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেই সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। তবে এবার বিরল খনিজ ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাকিস্তান নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

হোয়াইট হাউসে শাহবাজ শরিফের সফর

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেন। ২০১৯ সালের পর এটাই প্রথমবার কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে আমন্ত্রিত হলেন। এ সফরের মূল আলোচনায় ছিল পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ।

সমঝোতা স্মারক ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা

চলতি মাসের শুরুতে ইসলামাবাদে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড স্টেটস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস (USSM) ও পাকিস্তানের সেনা-পরিচালিত ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের (FWO) মধ্যে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন সহযোগিতা।

চুক্তির আওতায় পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিমনি, তামা, সোনা, টাংস্টেনসহ কিছু খনিজ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে। পরবর্তী ধাপে দেশে একটি আধুনিক পরিশোধনাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে, যা পরে বাড়তে পারে।

কেন এই খনিজ গুরুত্বপূর্ণ

বিরল খনিজ উপাদান আধুনিক প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এসব খনিজের নতুন উৎস খুঁজছে। চীন এত দিন পর্যন্ত এই বাজারে বড় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তাই পাকিস্তানকে নতুন উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন।

পাকিস্তানের খনিজ সম্ভাবনা

দেশটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূখণ্ডে খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করা হয়। সবচেয়ে সমৃদ্ধ খনি হলো বেলুচিস্তানের সায়দাক ও রেকো ডিক। শুধু রেকো ডিকেই ১ কোটি ৫০ লাখ টন তামা ও ২ কোটি ৬০ লাখ আউন্স সোনা থাকার অনুমান করা হচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি ডলার।

কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা

চুক্তিকে পাকিস্তান বড় অর্জন হিসেবে দেখালেও বাস্তবতা এখনো প্রাথমিক স্তরে। খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলন প্রকল্প সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর সময় নেয়। এছাড়া, বেলুচিস্তান ও উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিনিয়োগে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহ কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত। কারণ, বিরল খনিজকে ঘিরে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তবে একই সঙ্গে ইসলামাবাদকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ভারসাম্যও রক্ষা করতে হবে।

জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান

স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে না—এমন মত দিয়েছেন সাবেক এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। তাঁর মতে, খনিজকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে দেখলে এবং আঞ্চলিক জনগণকে প্রকল্পে সম্পৃক্ত করলে তবেই পাকিস্তান তার ভূসম্পদকে প্রকৃত শক্তিতে রূপান্তর করতে পারবে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!